আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিন কয়েক আগেই দলিতের হাতে তৈরি খাবার খেয়েছিলেন মন্ত্রী। কিন্তু সাধারণ মানুষ সেই দলিতের হাতে তৈরি খাবার খেতেই হিতে বিপরীত ঘটল। দলিত পরিবারে খাওয়াদাওয়ার জন্য বয়কট করা হল এক আরএসএস কর্মী ও তাঁর পরিবারকে। ঘটনাটি ঘটেছে বিজেপি শাসিত রাজ্যে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের রাইসেন জেলার এক গ্রামে। ভরত রাজ ধকড় নামের এক আরএসএস কর্মী জানিয়েছেন, তিনি ও তাঁর পরিবারকে সামাজিকভাবে বয়কট করেছে গোটা গ্রাম। কারণ? এক দলিত পরিবারের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেছিলেন তিনি এবং আরও দুই আত্মীয়।
ওই দলিত পরিবারে বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। সেখানেই গিয়েছিলেন ভরত ও তাঁর আত্মীয়রা। সেখানে খাবার খাওয়ার পরেই তাঁদের বয়কট করার ঘোষণা করেন গ্রামবাসীরা। ভরত জানিয়েছেন, পিপারিয়া পাউরিয়া গ্রামের বাসিন্দা সন্তোষ পারোলের বাড়িতে গিয়ে খাওয়াদাওয়া করেছিলেন তাঁরা।
ভরত, মনোজ প্যাটেল, এবং পেশায় শিক্ষক সত্যেন্দ্র রঘুবংশী সন্তোষের বাড়িতে গিয়ে খাবার খান। সেই খাওয়াদাওয়ার ভিডিওটি রেকর্ড করেছিলেন সত্যেন্দ্র। যা পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি নজরে পড়তেই তুমুল সরব হন কয়েকজন গ্রামবাসী।
ভরত জানিয়েছেন, এই ঘটনার পরেই পঞ্চায়েতে বৈঠক বসে। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান সহ প্রভাবশালী কয়েকজন গ্রামবাসী। সেখানেই ভরতদের উদ্দেশে বলা হয়, 'দলিত পরিবারের খাবার ছুঁয়ে দেখাও পাপ।' বৈঠকে অনেকেই প্রস্তাব দেন, তিনজনের শুদ্ধিকরণের প্রয়োজন আছে। তিনজনকেই গঙ্গাস্নান করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
পঞ্চায়েতে চাপের মুখে সত্যেন্দ্র ও মনোজ নির্দেশ মেনে গঙ্গাস্নান করেন। কিন্তু ভরত তাতে রাজি হননি। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এই নির্দেশ পুরোপুরি অসাংবিধানিক। এরপরই ভরত ও তাঁর পরিবারকে বয়কট করা হয়। গ্রামের কোনও অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ জানানো হয় না তাঁদের। কেউ তাঁদের সঙ্গে কথাও বলেন না। যা ঘিরে চূড়ান্ত অপমানের শিকার হচ্ছেন দিনের পর দিন। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনও সুরাহা মেলেনি।
রাজ্যের মন্ত্রী নরেন্দ্র শিবাজী প্যাটেলের বিধানসভা এলাকা উদয়পুরাতেই এই ঘটনাটি ঘটেছে। দিন কয়েক আগেই এই মন্ত্রী এক দলিত পরিবারে গিয়ে খাওয়াদাওয়া করেছিলেন। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বার্তা দিতেই দলিতের হাতে তৈরি খাবার খেয়েছিলেন তিনি। এরপরেও কোনও হেলদোল নেই গ্রামবাসীদের। ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর অরুণ কুমার বিশ্বকর্মা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত কড়া পদক্ষেপ করা হবে।
গত অক্টোবরে আরও এক নির্মম ঘটনা ঘটেছিল। মন্দিরের অদূরে কাশতে কাশতে ভুলবশত প্রস্রাব করে ফেলেছিলেন এক দলিত বৃদ্ধ। কিন্তু স্থানীয় যুবকের সন্দেহ হয়, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই প্রস্রাব করেছেন। এর জেরেই চরম শাস্তি দেওয়া হয় তাঁকে। জোর করে মন্দির চত্বরে জিভ দিয়ে চেটে দিতে বাধ্য করা হয় বৃদ্ধকে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছিল উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার দীপাবলিতেই নির্যাতনের শিকার হন ৬০ বছরের ওই বৃদ্ধ। মন্দির সংলগ্ন এলাকায় প্রস্রাব করার অভিযোগ মন্দিরের সামনের রাস্তা জিভ দিয়ে চেটে দিতে জোর করা হয়েছিল তাঁকে।
দলিত বৃদ্ধের নাতি পুলিশকে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই বয়সজনিত কারণে অসুস্থতায় ভুগছিলেন ওই বৃদ্ধ। মন্দিরের পাশে কাশতে কাশতে ভুলবশত প্রস্রাব করে ফেলেন। কিন্তু অভিযুক্তের দাবি ছিল, ইচ্ছাকৃতভাবেই তিনি মন্দির চত্বরে প্রস্রাব করেছেন। এর জেরেই কড়া শাস্তি দেওয়া হয় তাঁকে। মন্দিরের সামনের রাস্তা জিভ দিয়ে চেটে দিতে জোর করা হয়। এর জেরেই আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন বৃদ্ধ। শ্বাসকষ্টের সমস্যায় শয্যাশায়ী তিনি।
রামপাল রাওয়াত নামের ওই বৃদ্ধ জানিয়েছেন, 'সেদিন সন্ধ্যায় কাকোরি এলাকায় শীতলা মাতা মন্দিরের অদূরেই দাঁড়িয়ে আমি জল খাচ্ছিলাম। কিন্তু স্বামী কান্তের অভিযোগ, আমি সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রস্রাব করেছি। আমি যে জায়গায় ছিলাম, সেখান থেকে ৪০ মিটার দূরে ছিল ওই মন্দির। তা সত্ত্বেও আমাকে হেনস্থা করা হয়।'
পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, ঘটনার পরেরদিন বৃদ্ধ থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযুক্ত স্বামী কান্তকে সেদিন গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। এই ঘটনাটি ঘিরে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে দলিতদের উপর অত্যাচার ঘিরে সরব হয়েছেন রাজনীতিকরা।
