আজকাল ওয়েবডেস্ক: সামাজিক মাধ্যমে একটি স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে যেখানে উত্তর প্রদেশের বারাণসীর ভোটার তালিকার একটি অংশ দেখা যাচ্ছে। এই স্ক্রিনশটটি ভাইরাল হওয়ার সময়ই কংগ্রেস নেতা এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোট চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন।
কী দেখা যাচ্ছে এই তালিকায়?
এই তালিকাটি বারাণসীর ভেলুপুর এলাকার ভোটার তালিকা, যেখানে বিভিন্ন বয়সের ৫০ জন ভোটারের নাম রয়েছে এবং প্রত্যেকের পিতার নাম হিসেবে 'রামকমল দাস' লেখা আছে।
আরও পড়ুন: গৃহঋণের বোঝায় জেরবার, মেনে চলুন এই টিপস, তাহলেই কেল্লাফতে
দাবিটি কী?
অনেকেই এই স্ক্রিনশটটি শেয়ার করে দাবি করছেন, এটি জাল বা ভুয়া ভোটারের তালিকা, এবং নির্বাচন কমিশন ইচ্ছাকৃতভাবে এইরকম তথ্য তৈরি করেছে যাতে ভুয়া ভোটারদের নাম তালিকায় রাখা যায়।
আসল ঘটনা কী?
আমরা যাচাই করে দেখেছি, যাঁরা ‘রামকমল দাস’কে পিতার নাম হিসেবে লিখেছেন, তাঁরা সবাই একটি মঠ বা আশ্রমে শিক্ষার্থী। ঐতিহ্য অনুসারে, তাঁরা তাঁদের প্রকৃত পিতার নাম না দিয়ে তাঁদের গুরু/আশ্রমপ্রধানের নাম দিয়েছেন।

আমরা কীভাবে জানলাম?
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে উত্তর প্রদেশ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে মূল ভোটার তালিকা খুঁজে দেখি, যেখানে এই নামগুলি পাওয়া যায়।
বিস্তারিত খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে:
এগুলি আশ্রমের ছাত্র
আশ্রমিক রীতি অনুসারে পিতার স্থানে গুরুজির নাম উল্লেখ করা হয়েছে
এটি কোনও জালিয়াতির প্রমাণ নয়
এই স্ক্রিনশটটি যে ভুয়া ভোটারের প্রমাণ, সেই দাবি ভিত্তিহীন।আশ্রমে থাকা ছাত্রদের ভোটার তালিকায় থাকা স্বাভাবিক ও বৈধ, এবং তাঁদের রীতি অনুযায়ী গুরুজির নাম দেওয়া হয়েছে, যা কোনও জাল ভোটার বা ভোট চুরির ইঙ্গিত দেয় না। এই ঘটনা ভুল তথ্য ছড়ানোর একটি উদাহরণ।
প্রসঙ্গত,কয়েকদি আগেই তথ্য এবং পরিসংখ্যান তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তোগ দেগেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। বিজেপি’র সঙ্গে হাত মিলিয়ে লোকসভা ভোটের সময় ব্যাপক কারচুপি করেছে কমিশন বলে গুরুতর অভিযোগ করতে দ্বিধা করলেন না তিনি। কংগ্রেস নেতা কথা দিয়েছিলেন, অন্তর্তদন্তের রিপোর্ট পেশ করে ‘পারমাণবিক বোমা’ বিস্ফোরণ ঘটাবেন। বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের সদর দপ্তর ইন্দিরা ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে সেই রিপোর্ট পেশ করে অভিযোগ করেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন ‘সাংবিধানিক বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছে এবং পরিকল্পিতভাবে ‘ভোট চুরি’ করে গণতন্ত্রকে হত্যা করছে। ভোটার তালিকায় বিপুল পরিমাণ ভুয়ো ভোটারের নাম তোলা হয়েছে বলেও পরিসংখ্যান দিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। এপ্রসঙ্গে তিনি কর্নাটকের বেঙ্গালুরু মধ্য লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মহাদেবপুরা বিধানসভা আসন এবং সামগ্রিকভাবে মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানার ভোটার তালিকার জালিয়াতির কথা তুলে ধরেছেন।
স্বাভাবিকভাবেই রাহুল গান্ধীর অভিযোগ সম্পর্কে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপি। কংগ্রেস সাংসদকে চিঠি দিয়ে কমিশন রীতিমতো হুমকির সুরে বলেছে, ‘তিনি যদি ভোটারদের নাম, ঠিকানা ও পরিচয় দিয়ে কারচুপির অভিযোগ জানিয়ে থাকেন তাহলে তিনি যেন তাতে ‘হলফ করে সত্যি কথা বলছি’ বলে স্বাক্ষরের পাশাপাশি অভিযোগের প্রমাণ দাখিল করেন। অন্যথায় তিনি যেন অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। কোনওভাবেই জনগণকে বিভ্রান্ত করার অধিকার তাঁর নেই।’ কার্যত লোকসভার বিরোধী দলনেতাকে মুচলেকা দিতে বলেছে কমিশন। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকিও দিয়েছে। আবার বিজেপি লোকসভার বিরোধী দলনেতার অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ‘উনি মেজাজ হারিয়ে ফেলেছেন’ বলে কটাক্ষও করেছে। পরে নির্বাচন কমিশনকে অবশ্য পালটা জবাব দিয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘‘আমি একজন নেতা। আর আমি সর্বসমক্ষে এ কথা বলেছি। আমার অঙ্গীকার এটাই।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমি আমার মনগড়া কোনও তথ্য দিইনি। এটা কমিশনেরই তথ্য। আবার কমিশন কিন্তু এই তথ্য বা পরিসংখ্যানকে খারিজ করে দেয়নি। ওরা একবারও বলছে না, রাহুল গান্ধী যে কথা বলছেন, তার সবটাই ভুল।’’
