আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রেরা গুপ্তচরবৃত্তি অবাক করে দিয়েছে গোটা দেশকে। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে দেশের সংবেদনশীল তথ্য পাকিস্তানে পাচার করার অভিযোগে। এই ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছে মাধুরী গুপ্তার কথা। একজন সিনিয়র ভারতীয় কূটনীতিক ধরা পড়েছিলেন পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচপবৃত্তির অভিযোগে।

মাধুরী গুপ্তা ছিলেন একজন পেশাগত কূটনীতিক। ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে দ্বিতীয় সচিব (প্রেস অ্যান্ড ইনফরমেশন) হিসেবে নিযুক্ত একজন ভারতীয় পররাষ্ট্র পরিষেবা (আইএফএস) কর্মকর্তা। তাঁর প্রধান কাজ ছিল স্থানীয় গণমাধ্যম বিশ্লেষণ করা এবং নয়াদিল্লিতে রিপোর্ট করা। দেশের হয়ে ২৭ বছর ধরে সেবা করার পর, কেউ কল্পনাও করতে পারেননি যে একদিন তাঁকে তাঁর দেশের সঙ্গে  বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হবে।

২৬/১১ মুম্বই হামলার প্রায় দেড় বছর পর সত্যি সামনে আসে। রাজীব মাথুর, যিনি সেই সময় ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর পরিচালক ছিলেন, তিনি উদ্বেগজনক তথ্য পান যে ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসের কেউ পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর কাছে গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য ফাঁস করছেন। তদন্তে জানা যায়, সেই ব্যক্তি আর কেউ নন, তিনি মাধুরী গুপ্তা।

২০১০ সালের গোড়ার দিকে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি তাঁর কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা শুরু করে। তাদের সন্দেহ নিশ্চিত করার জন্য একটি গোপন অভিযান চালানো যেখানে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে মাধুরীকে মিথ্যে তথ্য সরবরাহ করতে থাকেন। এরপরেই তাদের সন্দেহ নিশ্চিত বলে প্রমাণিত হয়।

তদন্তকারীদের মতে, মাধুরী ভালবাসার খাতিরে এই কাজ করেছিলেন। জামশেদ বা জিম নামক এক পাকিস্তানির প্রেমে পড়েছিলেন মাধুরী। তিনি জানতেন না অথবা সম্ভবত উপেক্ষা করেছিলেন যে জিম আসলে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা, আইএসআই-এর হয়ে কাজ করতেন। মাধুরীর আবেগকে কাজে লাগিয়ে তাঁর থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বার করে নিতেন জিম।

তদন্তকারীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছন যে মাধুরী হানিট্র্যাপের শিকার হয়েছিলেন। মাধুরী কেবল গোপন নথিই ফাঁস করেননি, তিনি পাকিস্তানে কর্মরত ভারতীয় গোয়েন্দা কর্তাদের নাম এবং ইমেল পাসওয়ার্ড শেয়ার করেছেন বলেও জানা গিয়েছিল। পর্যাপ্ত প্রমাণ সংগ্রহের পর, কর্মকর্তারা তাকে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতির অজুহাতে দিল্লিতে ডেকে পাঠান। সেখানে তাঁকে আটক করা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ২০১০ সালের ২২ এপ্রিল তাঁকে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের অধীনে গ্রেপ্তার করা হয়।

আদালত বলে যে, তিনি যে তথ্য দিয়েছেন তা ভারতের শত্রুর জন্য অত্যন্ত কার্যকর হতে পারত। পাকিস্তানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিদেশনীতির বিবরণ ফাঁস করার জন্য তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। 

মাধুরীকে প্রথম ২০১২ সালে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ এবং ৫ ধারায় অভিযুক্ত করা হয়। যার সর্বোচ্চ সাজা ছিল ১৪ বছর। ২১ মাস তিহার জেলে কাটিয়ে জামিন পান। ২০১৮ সালে আদালত তাঁকে পাকিস্তানের জন্য গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। মাধুরী ২০২১ সালে ৬৪ বছর বয়সে মারা যান।

জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী এবং একজন সফল ইউপিএসসি পরীক্ষার্থী। মাধুরী  ভারতের জন্য বিভিন্ন মিশনে কাজ করেছিলেন। যার মধ্যে ইরাক, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া এবং ক্রোয়েশিয়াও রয়েছে। উর্দুতে তাঁর সাবলীলতার কারণে ২০০৭ সালে ইসলামাবাদে তাঁকে পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল। যা পাকিস্তানি মিডিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।