আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত ১৯ জুলাই শনিবার দুপুরে দিল্লির নেহরু প্লেসের নামকরা কম্পিউটার মার্কেটে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করা হয় প্যালেস্তাইনে ইজরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে এবং নিপীড়িত প্যালেস্তাইনি জনগণের সঙ্গে সংহতি জানাতে। দুপুর ১২:৩০ নাগাদ প্রায় পঞ্চাশজন অংশগ্রহণকারী কোনো স্লোগান ছাড়াই হাতে প্ল্যাকার্ড ও প্যালেস্তাইনের পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তারা এই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অপরাধের বিরুদ্ধে মৌন প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বড় সংখ্যায় একটি ডানপন্থী গোষ্ঠী সেখানে হাজির হয়। তারা অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে চিৎকার করে হুমকি দিতে শুরু করে এবং প্রথম তলার একটি দোকান থেকে কাদামাটি ছুড়ে মারে। এরপর “জয় শ্রী রাম”, “হার হার মহাদেব” এবং “বন্দে মাতরম” স্লোগান তুলে বিক্ষোভকারীদের ভয় দেখাতে থাকে।
উপস্থিত এক অর্থনীতিবিদ ও সমাজকর্মী বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে এসেছিলাম। কোনও স্লোগান তোলা হয়নি। কিন্তু আমাদের বাধা দেওয়া হল। আমাদের লক্ষ্য ছিল শুধু প্যালেস্তাইনের গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো নয়, ভারত সরকারের সহমর্মিতার অভাব এবং ইজরায়েলের সঙ্গে গভীর প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তিগত সম্পর্ককেও সামনে আনা।” তিনি আরও বলেন, “সরকার এখন যেভাবে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে, সেটা মূলত তাদের থেকে অস্ত্র ও নজরদারি প্রযুক্তি কেনার লোভেই। প্যালেস্তাইনের কাছে দেওয়ার কিছু নেই, তাই ভারতের সরকার তাদের পাশে নেই। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ হিসেবে প্যালেস্তাইনের পাশে থাকব।”
শান্তিপূর্ণ এই বিক্ষোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ছাত্রছাত্রী, শিল্পী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও নানা সংগঠনের কর্মী অংশ নেন। বিক্ষোভকারীরা যখন নেহরু এনক্লেভ মেট্রো স্টেশনের দিকে এগোচ্ছিলেন, তখনও ডানপন্থী দলগুলি পিছু নেয় এবং উগ্র স্লোগান দিতে থাকে। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তাদের প্রতিহত করার কোনও চেষ্টাই করেনি। এরপর পুলিশ প্রতিবাদকারীদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে, এই অজুহাতে যে তাদের অনুমতি নেই। অথচ এই কর্মসূচি ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং মৌলিক অধিকারভিত্তিক। একজন অংশগ্রহণকারী তরুণী বলেন, “আমরা কোনো অনুমতি নিইনি কারণ আমরা স্লোগান তুলিনি, আমরা শুধু দাঁড়িয়ে ছিলাম শান্তিপূর্ণভাবে। আমাদের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘গণহত্যা বন্ধ করো’ এবং ‘ইজরায়েলকে অস্ত্র দিও না যেগুলো শিশুদের মারবে’। তবু আমাদের তাড়িয়ে দেওয়া হল।”
আরও পড়ুন: এক বউ, দুই বর! সিমলায় ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের বিয়ে—এ যেন এক জ্যান্ত 'দ্রৌপদী প্রথা'
তিনি আরও বলেন, “যখন আমরা প্যালেস্তাইনের পতাকা ধরলাম, তখন উত্তেজিত জনতা আমাদের দিকে এগিয়ে এল, বলল ‘ভারতীয় পতাকা কোথায়?’ যখন তাদের হাতে ভারতীয় পতাকা দেওয়া হল, তখনও তারা আগ্রহ দেখাল না। বরং তারা আমাদের প্ল্যাকার্ড ছিঁড়ে ফেলতে লাগল, প্যালেস্তাইনের পতাকা ছিঁড়ে দিল। এই হল দেশের বর্তমান অবস্থা—আপনি আর প্রতিবাদ করতেও পারবেন না।”
একজন প্রবীণ শিক্ষিকা যিনি বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন, তিনি বলেন, “এই ভারত কি সেই গান্ধীর ভারত? যেখানে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকেও দমন করা হয়? আমরা ভাবতেই পারিনি যে এমন একটি বর্বরতা, একটি জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করার ঘটনা এত খোলাখুলিভাবে সমর্থন পাবে, পশ্চিমা বিশ্ব চোখ বুজে থাকবে, আর আমাদের দেশের পুলিশ পর্যন্ত নিরপেক্ষ ভূমিকা না নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেবে।” এই ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হল—প্যালেস্তাইনের জন্য সংহতি জানানো এখন শুধু আন্তর্জাতিক নৈতিকতার প্রশ্ন নয়, ভারতীয় গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সাথেও গভীরভাবে জড়িয়ে।
