আজকাল ওয়েবডেস্ক: জম্মু অঞ্চলের বিভিন্ন নদী ও খালে জলস্তর ক্রমশ বেড়ে যাওয়ায় বড় অংশে বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জম্মু শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া টাউই নদী উধমপুরে বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করেছে বলে জানা গিয়েছে। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জম্মুতেও জলস্তর বিপজ্জনক পরিসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। জানিয়েছে কাশ্মীরের আবহাওয়া দপ্তর। জম্মু ও কাশ্মীর সরকারও জনসাধারণকে সতর্ক করে বলেছে, বন্যা প্রবণ এলাকা ও নদীর তীরের কাছাকাছি না যাওয়ার জন্য। সরকার জানিয়েছে, আগামী ৪০ ঘণ্টায় জম্মু বিভাগের জন্য ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বর্তমানে বাসানতার, টাউই এবং চেনাব নদীর জল সতর্কতার স্তরে রয়েছে। ভারী বর্ষণ এবং চেনাব ও রবি নদীর জল বাড়তে থাকার কারণে ভারত ইতিমধ্যেই পাকিস্তানকে সম্ভাব্য বন্যা সম্পর্কে জানিয়েছে।
চেনাব নদীর জল সহ টাউই নদীর জল পাকিস্তানের দিকে যায়। যা সিন্ধু জলচুক্তির আওতায় পড়ে। এছাড়া রবি নদীর স্পিলওভার গেট থেকে পাকিস্তানের দিকে জল বইছে ক্রমশ। সাধারণত, ভারত এই তথ্য সিন্ধু চুক্তির কমিশনারদের মাধ্যমে ভাগ করত। তবে ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত চুক্তি স্থগিত রাখে। এই পরিস্থিতিতে, প্রথমবারের মতো ভারত কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে পাকিস্তানকে জল সংক্রান্ত তথ্য জানালো। ভারী বর্ষণের ফলে জম্মু ও কাশ্মীরে ভূমিকম্প ও ভূমিধস ঘটেছে এবং সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিধসের কারণে শ্রীনগর–জম্মু জাতীয় সড়ক বন্ধ রাখা হয়েছে। সোমবার কঠুয়া–পাঠানকোট জাতীয় সড়কের ওপর একটি বড় সেতু ভেঙে পড়ে। ফলে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। রবি নদী ও বিভিন্ন খালের জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় কাঠুয়া জেলাতেও বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
অধিকর্তারা জানান, লগাতে মোড়ের কাছে সাহার খাঁদ নদীর জোয়ার হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় জাতীয় সড়কের মাঝ বরাবর ভেঙে পড়ে একটি সেতু। তীব্র স্রোতের কারণে সাহার খাঁদের উপর থাকা দুটি সেতুতেই যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিকল্প রাস্তায় গাড়ি ঘোরানো হয়েছে। কাঠুয়ার জেলা শাসক রাজেশ শর্মা জানান, পুরনো সেতুটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন সেতুতেও দুর্বলতার লক্ষণ দেখা গেছে। তিনি বলেন, ‘পুরনো সেতুতে গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। নতুনটির অবস্থাও সন্দেহজনক মনে হওয়ায় আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দিই। হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ ও তাঁদের ইঞ্জিনিয়াররা পরিদর্শনে আসছেন, তার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ বৃষ্টির জেরে জম্মু শহরের একাধিক এলাকা পুরোপুরি জলমগ্ন। জানিপুর, রূপ নগর, তালাব টিল্লু, জুয়েল চৌক, নিউ প্লট ও সঞ্জয় নগরে ঘরে ঘরে জল ঢুকে পড়েছে।
বেশ কিছু বাড়ির পাঁচিল ভেঙে পড়েছে, প্রায় এক ডজন গাড়ি ভেসে গেছে বন্যার জলে। আবহাওয়া দপ্তর ২৭ আগস্ট পর্যন্ত মাঝারি থেকে প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। সেই সঙ্গে জারি হয়েছে মেঘভাঙা, আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের সতর্কবার্তা। প্রশাসন মানুষকে নদী, খাল ও ভূমিধস–প্রবণ এলাকা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। তবে প্রবল বর্ষণ সত্ত্বেও ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ জম্মু–শ্রীনগর জাতীয় সড়ক ও ৪৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ শ্রীনগর–লেহ সড়ক চালু রয়েছে। কিন্তু ভূমিধসের কারণে পুঞ্চ ও রাজৌরিকে শোপিয়ানের সঙ্গে যুক্ত করা মুঘল রোড এবং কিশ্তোয়ার ও ডোডাকে আনন্তনাগের সঙ্গে যুক্ত করা সিন্থান রোড বন্ধ রাখতে হয়েছে বলেন জানা গিয়েছে। কাঠুয়ায় উঝ ও রাভি নদীর জল বিপজ্জনক মাত্রায় ফুলে উঠেছে। পাশাপাশি সাম্বায় বসন্তর নদী, ডোডা, কিশ্তোয়ার, রামবান ও জম্মুর চেনাব নদী এবং উদমপুর ও জম্মুর তাওয়ি নদীর জলস্তর হঠাৎই বেড়ে গেছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর ও পুলিশকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
