আজকাল ওয়েবডেস্ক: জম্মু ও কাশ্মীরের কিশ্তওয়ার জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম চাশোতি। সেখানে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে হঠাৎ এক প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। ঘটনাটি এমন সময় ঘটে যখন 'মচাইল মাতা' যাত্রায় অংশ নিতে হাজার হাজার তীর্থযাত্রী জড়ো হয়েছিলেন গ্রামে। তাঁরা সকলে গ্রামের শেষ চলাচলযোগ্য সড়কের ধারে জড়ো হয়েছিলেন। সেখানে একটি লঙ্গরে (সামাজিক রান্নাঘর) তাঁরা ভোজে অংশ নিচ্ছিলেন। জানা গিয়েছে, সকলেই ভক্তিমূলক গান (ভজন) শুনতে শুনতে নিজ কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সূত্রে জানা গিয়েছে তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ পাহাড় থেকে নেমে আসা একটি ছোট ইস্পাতের ফুটব্রিজ অতিক্রম করছিলেন। কিন্তু কেওই তখনও বুঝতে পারেননি সামনে কী ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে সকলের জন্য।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, আচমকা একটি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ হয় এলাকাজুড়ে৷ ঘটনার কয়েক মিনিট পরই শুরু হয় চরম বিশৃঙ্খলা। বিকট শব্দ, মানুষের আর্তচিৎকারে ভরে ওঠে পুরো এলাকা। একজন পুলিশ কর্মী বলেন, 'সবকিছু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ঘটে যায়। সবাই যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। চারপাশে শুধু আর্তনাদ। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে বহু মানুষ প্রাণ হারান।'
এক প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছিলেন। তবে দ্রুত উদ্ধার অভিযানের ফলে কয়েকজনকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। যেই লঙ্গরখানায় একাধিক মানুষ খাচ্ছিলেন, মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে পড়ে তাঁদের ওপর। রান্নাঘরের দৃশ্য এখন ভয়াবহ। চারিদিকে ডালের বস্তা, চাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। ওগুলো এখন নিরাপত্তা বাহিনীর জুতার নিচে পিষ্ট হচ্ছে। উদ্ধার বাহিনী বর্তমানে ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে জীবতদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
ঘটনার জেরে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, 'অনেকেই তখন ফুটব্রিজ পার হচ্ছিলেন, যেটি দু্র্ঘটনায় ভেসে গিয়েছে। আমাদের ধারণা, বহু মানুষ চেনাব নদীতে ভেসে গিয়েছেন।' সূত্র মারফত, চেনাব নদীতে এখন জাল বসানো হয়েছে যাতে দেহগুলো প্রবল স্রোতে ভেসে না যায়।
এক কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা একজন মহিলার মাথাবিহীন দেহ পেয়েছি। এখনও অনেকে এসে তাঁদের নিখোঁজ স্বজনদের সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছেন।' স্থানীয় একটি খাবারের দোকানের কর্মী দুর্ঘটনার মাত্র ১৫ সেকেন্ড আগে বাইরে গিয়েছিলেন জল আনতে। তিনি এবিষয়ে জানান, 'এটা একটা অলৌকিক ঘটনা। আমি ১৫ সেকেন্ড দেরি করলেই হয়তো আজ মৃতদের মধ্যে থাকতাম। আমার দোকান থেকে প্রায় সাতটি দেহ উদ্ধার হয়েছে।'
ঘটনার জেরে পাথর, গাছপালা এবং ধ্বংসাবশেষ পুরো এলাকা বদলে দিয়েছে। যেখানে আগে গাড়ি পার্কিং হতো, এখন সেটি একটি ছোট পাহাড়ের মতো হয়ে গিয়েছে। চাশোতি ও তার নিচের এলাকায় দশটি আবাসিক ঘর, ছয়টি সরকারি ভবন, তিনটি মন্দির, চারটি জলচালিত কল, দুটি গবাদিপশুর ঘর, একটি ৩০ মিটার দীর্ঘ সেতু এবং এক ডজনেরও বেশি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। ধ্বংস হয়ে গিয়েছে গোটা এলাকা।
এহেন ভয়াবহ ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার ইতিমধ্যে ধ্বংসাবশেষ সরাতে বুলডোজার মোতায়েন করেছে। নিখোঁজদের সন্ধানে একটি সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। চেনাব নদীর তীরে পাঁচটি পরিবারের সদস্যদের সৎকার সম্পন্ন হয়েছে। নদীর রোষ এখনও প্রবল, আর তার পাড়ে স্বজনহারা মানুষদের চোখে অশ্রু আর মুখে শোক।
আরও পড়ুনঃ জন্মদিনের কেক এ বিস্ফোরণ! আনন্দ মুহূর্তে বদলাল আতঙ্কে, সত্য ঘটনা জানলে ভিরমি খাবেন
খবর অনুযায়ী , প্রতিবেশীরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী, এনডিআরএফ ও বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবকরা নিযুক্ত হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ধ্বংসাবশেষের পরিমাণ এতটাই বেশি যে অভিযান সহজ হবে না। অঞ্চলটি অত্যন্ত দুর্গম এবং রাস্তা সরু হওয়ায় উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার এখনও ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি বলে খবর৷ পাশাপাশি আবহাওয়াও সহায়ক নয়।
যেসব তীর্থযাত্রী ধ্বংস হওয়া সেতুর অপর প্রান্তে আটকে পড়েছিলেন, এমনকি যাঁরা সেতুর মাঝে আটকে ছিলেন, তাঁদের নিরাপদে উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। উদ্ধারকারীরা একটি কাঠের ছোট সাঁকো তৈরি করে তাঁদের পার করে আনেন।
ঘটনার জেরে বিরোধী দলের নেতা এবং স্থানীয় বিধায়ক সুনীল কুমার শর্মা সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, এখনও বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। অনেকের দেহ শনাক্ত করে তাঁদের নিজ নিজ এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তল্লাশি চলছে। উদ্ধারকাজ চলমান।
