আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছে হওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণের তদন্তে উঠে এসেছে এক শিহরণজাগানো তথ্য। তদন্তকারী সংস্থাগুলি জানিয়েছে, ধৃত সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী চক্রের সদস্যরা—যারা জইশ-ই-মহম্মদ ও আনসার গজওয়াত-উল-হিন্দের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ—আগামী ৬ ডিসেম্বর জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে (এনসিআর) একযোগে ছয়টি বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা করেছিল।
তদন্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তারিখ বেছে নেওয়া হয়েছিল প্রতীকী কারণে—১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা পাঁচ ধাপে পুরো হামলার পরিকল্পনা সাজিয়েছিল।
পর্যায়ভিত্তিক পরিকল্পনা নিম্নরূপ ছিল:
১. প্রথম ধাপে জইশ-ই-মহম্মদ ও আনসার গজওয়াত-উল-হিন্দের সঙ্গে যুক্ত একটি সন্ত্রাসী চক্র গঠন করা হয়।
২. দ্বিতীয় ধাপে নুহ ও গুরগাঁও অঞ্চল থেকে বিস্ফোরক তৈরির কাঁচামাল ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করা হয়।
৩. তৃতীয় ধাপে রাসায়নিক উপাদান মিশিয়ে প্রাণঘাতী আইইডি (Improvised Explosive Device) প্রস্তুত এবং সম্ভাব্য লক্ষ্যস্থলের পর্যবেক্ষণ চালানো হয়।
৪. চতুর্থ ধাপে প্রস্তুত বোমাগুলি দলের বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
৫. পঞ্চম ও শেষ ধাপে ৬ থেকে ৭টি স্থানে সমন্বিত বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মূলত আগস্ট মাসেই হামলা চালানোর কথা ছিল, কিন্তু অপারেশনাল বিলম্বের কারণে তারিখ পিছিয়ে ৬ ডিসেম্বর করা হয়।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ১৬ শতকে নির্মিত বাবরি মসজিদটি ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর এক উগ্র হিন্দুত্ববাদী জনতার হাতে ধ্বংস হয়। সেই ঘটনার পর থেকেই পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মহম্মদ সংগঠন প্রকাশ্যে “প্রতিশোধের” হুমকি দিয়ে আসছে। জইশ প্রধান মসুদ আজহার তাঁর সাপ্তাহিক কলামে অযোধ্যা ও দিল্লিকে লক্ষ্য করার ডাক দিয়েছিলেন বলেও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
লালকেল্লা বিস্ফোরণ ও প্রধান অভিযুক্ত:
গত ১০ নভেম্বর দিল্লির লালকেল্লার কাছে একটি গাড়ি বিস্ফোরণে অন্তত ৯ জন নিহত এবং ২০ জনেরও বেশি আহত হন। ঘটনাস্থল ছিল রেড ফোর্ট মেট্রো স্টেশনের কাছে একটি ব্যস্ত ট্র্যাফিক সিগন্যাল। ওই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন কাশ্মীরের বাসিন্দা এবং ফারিদাবাদের আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. উমর মহম্মদ ওরফে উমর উন-নবি।
বিস্ফোরণের পর তদন্তে জানা যায়, উমরের শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় এবং তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করতে ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। পরে ফারিদাবাদে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২,৯০০ কেজি বিস্ফোরক পদার্থ (সম্ভবত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট) উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় আরও দুই চিকিৎসক—মুজাম্মিল শেখ ও শাহিন সাঈদকে।
তদন্তকারীরা মনে করছেন, জইশ-ই-মহম্মদের এই নতুন মডিউলে উচ্চশিক্ষিত পেশাজীবীদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যাতে গোয়েন্দাদের নজর এড়িয়ে অপারেশন চালানো সহজ হয়।
প্রাথমিক তদন্তে ইঙ্গিত মিলেছে, দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ব্যাপক নাশকতার পরিকল্পনা চলছিল। উমর তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে ভয় পেয়ে যান এবং “শেষ চেষ্টা” হিসেবে একাই গাড়ি বিস্ফোরণ ঘটান বলে ধারণা তদন্তকারীদের।
তদন্ত এখন সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থা, দিল্লি পুলিশ স্পেশাল সেল, এবং জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-র হাতে। গোয়েন্দারা মনে করছেন, এই নাশকতা রুখতে না পারলে রাজধানীতে ২০০৮ সালের দিল্লি সিরিজ বিস্ফোরণের মতো বড় বিপর্যয় ঘটতে পারত।
সূত্রমতে, আগামী কয়েক দিনে ফারিদাবাদ, নুহ ও গুরগাঁও অঞ্চলে আরও তল্লাশি অভিযান চালানো হবে এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের সূত্র খুঁজে দেখা হবে, বিশেষত তুরস্কভিত্তিক সন্দেহভাজন হ্যান্ডলার “উকাসা”-র ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বলছে, এই ঘটনার মাধ্যমে পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলি আবারও ভারতের অভ্যন্তরে শিক্ষিত পেশাজীবীদের ব্যবহার করে "অদৃশ্য যুদ্ধ" চালানোর নতুন কৌশল নিয়েছে—যা নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
