আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশের নর্দমা ও সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের সময় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশের শরীরে ছিল না কোনও সুরক্ষা সরঞ্জাম। কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় মন্ত্রকের এক সামাজিক নিরীক্ষা (Social Audit) এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে। ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে আটটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১৭টি জেলায় ঘটে যাওয়া ৫৪টি মৃত্যু ঘটনা বিশ্লেষণ করে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সংসদে এই রিপোর্ট পেশ করেন সামাজিক ন্যায় মন্ত্রক, কংগ্রেস সাংসদ প্রণীতি সুশীলকুমার শিন্দের এক প্রশ্নের উত্তরে।

নিরীক্ষা অনুযায়ী, ৫৪টি মৃত্যুর মধ্যে ৪৯টি ক্ষেত্রেই কোনও ধরনের সুরক্ষা সরঞ্জাম বা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষামূলক উপকরণ (PPE) শ্রমিকদের দেওয়া হয়নি। মাত্র ৫টি ক্ষেত্রে শ্রমিকদের হাতে গ্লাভস ছিল, আর মাত্র ১টি ক্ষেত্রে গ্লাভসের সঙ্গে গামবুট দেওয়া হয়েছিল। ৪৭টি মৃত্যুর ক্ষেত্রে কোনও যান্ত্রিক যন্ত্রপাতি বা সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহারই করা হয়নি। শুধু ২টি ঘটনাতেই শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছিল এবং একমাত্র একটি ক্ষেত্রে শ্রমিকদের কাজ শুরুর আগে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এর পাশাপাশি, ২৭টি মৃত্যুর ক্ষেত্রে কোনও রকম সম্মতি নেওয়া হয়নি। এমনকি যেসব ক্ষেত্রে লিখিত সম্মতি নেওয়া হয়েছে (১৮টি), সেখানেও শ্রমিকদের কাজের ঝুঁকি সম্পর্কে কোনও রকম কাউন্সেলিং করা হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

আরও পড়ুন: স্বামীর জীবন বাঁচাতে ৬০ লাখে কিডনি 'দান' স্ত্রী'র! পরে স্বামীকে 'অক্ষম' দেগে দিয়ে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক স্ত্রীয়ের

২০২২ ও ২০২৩ সালে সারা দেশে নর্দমা বা সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন মোট ১৫০ জন শ্রমিক। চলতি বছরের শুরুতে, ম্যানুয়াল স্যাভেন্জিং ও হাতে নর্দমা পরিষ্কারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট এক কড়া বার্তা দেয়। কলকাতা, দিল্লি, বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদ শহরের পুর কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে পরিকাঠামোগত পরিকল্পনা না থাকার জন্য আদালত তিরস্কার করে। ২৯ জানুয়ারি, বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া ও অরবিন্দ কুমারের বেঞ্চ দেশের ছয়টি মহানগরে ম্যানুয়াল স্যাভেন্জিং এবং হাতে নর্দমা পরিষ্কারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই বিপজ্জনক কাজের জন্য এখনো কোনও কার্যকরী প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, যা শ্রমিকদের জীবন সুরক্ষার ক্ষেত্রে চরম অবহেলার প্রমাণ বহন করে। এখন প্রশ্ন উঠছে—তথাকথিত ডিজিটাল ভারত ও স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সময়েও কেন এই শ্রমিকদের জন্য নেই ন্যূনতম মর্যাদা ও নিরাপত্তা?