আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে গত কয়েকবছরে সমীকরণ বদলে গিয়েছে বারেবারে। একনাথ শিন্ডের শিবির বদল, অজিত পাওয়ারের শিবির বদল। আবার দুই ঠাকরে ভাইয়ের একজোট হওয়া। এসবের মাঝে কি আবার বদলাচ্ছে সমীকরণ? শুক্রবার সেই জল্পনা তুঙ্গে ওঠে কিছুক্ষণের জন্য। যখন একসঙ্গে হাসিমুখে দেখা যায় উদ্ধব ঠাকরে, দেবেন্দ্র ফড়নবিস এবং আদিত্য ঠাকরেকে। বিধান ভবনে বিধান পরিষদের চেয়ারম্যান রাম শিন্ডের ঘরে দু’ জনের বৈঠক হয় প্রায় মিনিট কুড়ি।
জল্পনা সেই কারণে নয়। জল্পনার কারণ ঠিক তার আগেই দেবেন্দ্র ফড়নবিসের মন্তব্য। কী বলেছিলেন দেবেন্দ্র? মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ রাজ্য বিধানসভায় শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী উদ্ধব ঠাকরেকে খোলা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বলেছিলেন ঠাকরে চাইলে তাঁদের সঙ্গে অর্থাৎ মহাবিকাশ আঘাড়ি জোট ছেড়ে মহায়ুতি জোটে যোগ দিতে পারেন। তিনি বলেন, ‘২০২৯ সাল পর্যন্ত আমাদের বিরোধী দলে বসার কোনও সুযোগ নেই। কিন্তু উদ্ধবজি, আপনি এই দিকে সরে আসতে পারেন। এটি নিয়ে ভাবতে পারেন।‘
আরও পড়ুন: উত্তপ্ত গোপালগঞ্জে শুক্রবারেও কার্ফু, নিজের জেলা অশান্ত হতেই কি দেশে ফিরছেন হাসিনা? দিলেন বড় বার্তা
সমাবেশের পরে স্বাভাবিকভাবেই এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয় বালাসাহেব-পুত্রকে। যদিও তখন উদ্ধব বলেছিলেন এগুলি অত্যন্ত হালকাভাবে বলা কথা। এসব নিয়ে এত চিন্তার বা আলোচনার কারণ নেই।
কিন্তু জল্পনা বাড়ে, তারপরেই দু’ জনের বৈঠকে বসা নিয়ে। জনা গিয়েছে স্পিকারের কাছে উদ্ধব মূলত গিয়েছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতার দাবি নিয়ে। গত অধিবেশনে এই পদের জন্য ভাস্কর যাদবের নাম সুপারিশ করা হয়েছিল। মহাযুতি সরকার গঠনের পর এটি বিধানসভার দ্বিতীয় অধিবেশন। তার আগেই নিজের দাবি নিয়ে স্পিকারের কাছে যান উদ্ধব ঠাকরে। যাদব শিব সেনা (ইউবিটি) শিবিরের নন, কিন্তু তাঁর দল মহাবিকাশ আঘাড়ির সঙ্গে যুক্ত, অর্থাৎ জোট সঙ্গী তাঁদের। যদিও স্পিকার এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত জানাননি এখনও। অন্যদিকে ফড়নবিস সাফ জানিয়েছেন, এই বিষয়ে একমাত্র সিদ্ধান্ত নিতে পারেন স্পিকার।

বৃহস্পতিবারের সাক্ষাতে উদ্ধব ঠাকরে ফড়নবিসকে ‘কেন হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়’ শীর্ষক একটি বইও উপহার দেন, যা মহারাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন সম্পাদকের লেখা নিবন্ধের সংকলন।ভাষা নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানা গিয়েছে।
অন্যদিকে মহারাষ্ট্রে ভাষা বিতর্কের জেরেই এক হচ্ছেন ঠাকরে ব্রাদার্স। রাজ ঠাকরে এবং উদ্ধব ঠাকরে। গত কয়েকদিন ধরেই জল্পনা দু’ জনের এক হওয়ার। সেই জল্পনার অবসান ঘটে গিয়েছে একপ্রকার। দিনকয়েক আগেই প্রায় দু’ দশক পর একসঙ্গে মঞ্চে এসে একজোট হয়ে লড়ার বার্তা দিয়েছেন রাজ এবং উদ্ধব। এই দুজনের একত্রিত হওয়ার পুরধা হিসেবে কাজ করেছে বর্তমান সরকারের একটি সিদ্ধান্ত। শনিবার মঞ্চে রাজ ঠাকরে বলেওছেন, যা বালা সাহেব করতে পারেননি, আরও অনেকে পারেননি, তা করেছেন ফড়ণবীশ। তাঁর সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতাতেই মূলত এক হয়েছেন দু’ জনে।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ অনুসারে স্কুলে তিন ভাষা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মহারাষ্ট্র সরকার। মহারাষ্ট্রের মারাঠি এবং ইংরেজিমাধ্যম স্কুলগুলিতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত হিন্দি বাধ্যতামূলক তৃতীয় ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শোরগোল শুরু হয় রাজ্যে। বিতর্কের মধ্যে আপাতত এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীশ। সম্প্রতি রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে তৃতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দিকে বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই ইস্যুতে ঠাকরে ভাইদের একজোট হওয়া। উদ্ধব ঠাকরে আগেই জানিয়েছেন, মুম্বইয়ের পুরভোটে দুই ভাই লড়বেন জোট বেঁধে।

চলতি বছরের শেষ দিকে বৃহন্মুম্বই পুরসভা নির্বাচন। অনেকেই আগেই বলেছিলেন হিন্দি ভাষা বাধ্যতামূলক করার প্রতিবাদে দুই ভাইয়ের কাছাকাছি আসার পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্ক। পুর নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে একজোট হচ্ছেন উদ্ধব এবং রাজ ঠাকরেরা।তাঁরা যে একজোট হচ্ছেন জানিয়ে দিলেন তাও। এবার দেখার শিবসেনার হিন্দুত্ববাদ বনাম গেরুয়া শিবিরের হিন্দুত্ববাদের লড়াইয়ে মহারাষ্ট্রের মানুষ ভোট দেন কোনদিকে।
