আজকাল ওয়েবডেস্ক: শেষ ওভারগুলোতে ব্যাটার'রা যে ভাবে ছয় মারেন, অবসরের আগে বেশ কয়েকজন বিচারপতির একাধিক নির্দেশও যেমন তেমনই। অবসরের ঠিক আগে বিচারকদের এই 'ছক্কা হাঁকানোর' চেষ্টাকে "দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতা" বলে মনে করেন দেশের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত। এই ধরণের আদেশের ক্ষেত্রে বিচারপতিদের ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি।
প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তের নেতৃত্বাধীন এবং বিচারপতি বিপুল এম পঞ্চোলি ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচিকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ, মধ্যপ্রদেশের একজন প্রধান জেলা বিচারকের দায়ের করা একটি পিটিশনের শুনানি করছিল। নিম্ন আদালতের প্রধান জেলা বিচারককে অবসরের মাত্র ১০ দিন আগে বরখাস্ত করা হয়। মধ্যপ্রদেশের হাইকোর্টের ফুল কোর্টের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন বরখাস্ত হওয়া বিচারক।
অভিযোগ অনুযায়ী, এই বরখাস্তের ঘটনাটি বিচারকের দেওয়া দু'টি আদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। এ দিন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ মন্তব্য করে, "আবেদনকারী অবসরের ঠিক আগে ছক্কা হাঁকাতে শুরু করেছেন। এটা একটি দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতা। আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে চাই না।"
ওই জেলা বিচারকের মূলত ৩০ নভেম্বর অবসর নেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দু'টি আদেশের কারণে ১৯ নভেম্বর তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। যদিও প্রাথমিকভাবে তাঁর ৩০ নভেম্বর অবসর নেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু রাজ্য সরকার কর্মচারীদের অবসরের বয়স ৬২ বছর করার পর সুপ্রিম কোর্ট ২০ নভেম্বর মধ্যপ্রদেশ সরকারকে ওই বিচারকের অবসর এক বছরের জন্য স্থগিত করার নির্দেশ দেয়।
পরিস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করে প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত মন্তব্য করেন, "ওই বিচারক যখন সেই দু'টি আদেশ দিয়েছিলেন, তখন তিনি জানতেন না যে তাঁর অবসরের বয়স এক বছর বাড়ানো হয়েছে। অবসরের ঠিক আগে বিচারকদের একসঙ্গে এতগুলো আদেশ দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে এবং তা বেড়েই চলেছে।" বেঞ্চ জানতে চায় যে, বরখাস্ত জেলা বিচারক কেন হাইকোর্টের ফুলকোর্টের বরখাস্ত করার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য হাইকোর্টে যাননি?
বিচারকের আইনজীবী শীর্ষ আদালতকে জানান যে, যেহেতু এটা একটি পূর্ণাঙ্গ আদালতের সিদ্ধান্ত ছিল, তাই ওই বিচারক মনে করেছেন যে- একটি সুষ্ঠু শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়াই ভাল হবে। বিচারকের পক্ষে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবী বিপুল সাংঘি আদালতকে ওই বিচারকের আকর্ষণীয় কর্মজীবনের কথা জানান এবং বলেন যে, তিনি তাঁর বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে খুব ভাল মূল্যায়ন পেয়েছেন।
সাংঘি প্রশ্ন করেন, "যেসব আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যায় এবং উচ্চতর বিচার বিভাগ দ্বারা সংশোধন করা যায়, সেগুলোর জন্য একজন নিম্ন আদালতের বিচারককে কীভাবে বরখাস্ত করা যেতে পারে?"
পাল্টা বেঞ্চ উত্তরে জানায়, "ভুল আদেশ দেওয়ার জন্য একজন বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা শুরু করা যায় না। এর জন্য তাঁকে বরখাস্ত করা যাবে না।" কিন্তু যদি আদেশগুলো সুস্পষ্টভাবে অসৎ হয়? এই প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে যেখানে হাইকোর্ট বিচারকের নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ আদালতের সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট আবেদনটি গ্রহণ করতে অস্বীকার করে এবং আবেদনকারীকে পরিবর্তে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে বলে।
শীর্ষ আদালত ওই বিচারকের আরটিআই আবেদনের মাধ্যমে তাঁর বরখাস্তের কারণ জানতে চাওয়ার বিষয়েও আপত্তি জানিয়েছে। আদালত মন্তব্য করেছে, "তিনি এ বিষয়ে একটি আবেদন জমা দিতে পারতেন। একজন সিনিয়র বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার জন্য আরটিআই-এর পথ অবলম্বন করা প্রত্যাশিত নয়।"
