আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিরোধী দলগুলির অনুমান অনুসারে, চলমান বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা (SIR) প্রক্রিয়ার ফলে বিহারের ভোটার তালিকা থেকে ৩৫ লক্ষেরও বেশি নাম বাদ পড়তে চলেছে।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত ৬.৬ কোটি ভোটার তাদের গণনা ফর্ম জমা দিয়েছেন। এটি রাজ্যের মোট ভোটারের ৮৮.১৮ শতাংশ। ২৫ জুলাই পর্যন্ত ভোটাররা এই ফর্ম জমা করতে পারবেন, যার পরে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।
নতুন পরিসংখ্যান শেয়ার করেছে নির্বাচন কমিশন। সেই অনুসারে, ১.৫৯ শতাংশ ভোটার, অর্থাৎ ১২.৫ লক্ষ ভোটার মারা গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু তাঁদের নাম তালিকায় রয়ে গিয়েছে। আরও ২.২ শতাংশ, অর্থাৎ ১৭.৫ লক্ষ ভোটার স্থায়ীভাবে বিহার থেকে চলে গিয়েছেন। তাঁরা আর রাজ্যেভোট দেওয়ার যোগ্য নন। আরও ০.৭৩ শতাংশ, প্রায় ৫.৫ লক্ষ ভোটারের নাম দু'বার ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত রয়েছে।
এই তথ্য মোতাবেক, বিহারের ভোটার তালিকা থেকে প্রায় ৩৫.৫ লক্ষ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হবে। এই পরিসংখ্যান মোট ভোটারদের ৪.৫ শতাংশেরও বেশি। বিহারে চলতি বছরের শেষে বিধানসভা ভোট হবে। তার আগে একসঙ্গে এতজন ভোটারের নাম বাদ পড়ার বিষয়টি বেশ তাৎপর্যবাহী।
আরও পড়ুন- ‘জঙ্গল রাজের’ ছায়া! ১০ দিনে সাতটি খুন, বিধানসভা নির্বাচনের আগে অপরাধ বাড়ছে বিহারে...
নির্বাচন কমিশন আগেই জানিয়েছিল যে, বিহারে নেপাল, বাংলাদেশ এবং মায়ানমার থেকে আসা বহু বিদেশি নাগরিককে ভোটার হিসাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। আরও যাচাইয়ের পরে এই নামগুলিও বাদ দেওয়া হবে। ফলে ৩৫.৫ লক্ষের থেকেও সংখ্যাটা বাড়তে পারে।
ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ চলছে জোরকদমে। নির্বাচন কমিশনের কর্তাদের মতে, ভোটার তালিকা স্বচ্ছ করার জন্য বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা বা SIR করা হচ্ছে, যাতে ভোটার তালিকায় কারা অভিবাসী, কারা মৃত্যু এবং নকল নথিভুক্ত ভোটারদের সমন্ধে জানা যায়। কমিশনের কর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন যে, লক্ষ্য হল ২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকার অখণ্ডতা এবং নির্ভুলতা বজায় রাখা।
আরও পড়ুন- মেঘের বীজ বপন করবে দিল্লি! জানেন কী এই ‘ক্লাউড সিডিং’ প্রক্রিয়া? কেনই বা করা হয়?
তবে, এই প্রক্রিয়ার সমালোচনায় সরব বিরোধী নেতৃত্ব। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, প্রতি নির্বাচনী এলাকার এক শতাংশ ভোটার বাদ দিলেও প্রতিটি বিভাগে প্রায় ৩,২০০ জন নাম বাদ পড়বে। বর্তমানে এই হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম। এই সংশোধনের ফলে নির্বাচনী ফলাফলের উপর কী প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন, সেখানেই চলছে বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা সম্পর্কিত আবেদনের শুনানি। আগের শুনানিতে, আদালত নির্বাচন কমিশনকে ভোটারদের সঠিক যাচাইয়ের জন্য আধার কার্ড, রেশন কার্ড এবং ভোটার আইডি কার্ড ব্যবহার করার পরামর্শ দিলেও এই প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ জারি করেনি। এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে ২৮ জুলাই।
বিহারে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যেই ভোটার তথ্য যাচাইয়ের কাজ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। যদিও নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা পুনর্বিবেচনা প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে। লক্ষ লক্ষ নাম বাদ পড়া এবং ভোটার যোগ্যতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলার ফলে, সকলের নজর এখন আগামী দিনগুলিতে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াটি কীভাবে এগিয়ে যায়, সেদিকে।
