আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারের রাজধানী পাটনায় ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য করে একের পর এক খুনের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার গভীর রাতে রামকৃষ্ণ নগর থানার অন্তর্গত জখরিয়াপুর এলাকায় ফের এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সম্প্রতি এই ঘটনা ঘিরে শহরে ফের চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর,নিহত ব্যবসায়ীর নাম এখনও সরাসরিভাবে প্রকাশ্যে আনা হয়নি। স্থানীয় সূত্রের খবর অনুযায়ী, তিনি 'ত্রিশনা মার্ট' নামের একটি দোকানের মালিক ছিলেন। শুক্রবার রাত প্রায় ১১ টা নাগাদ তিনি দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন। এহেন সময়ে কিছু অজ্ঞাত দুষ্কৃতীরা তাঁকে লক্ষ্য করে আচমকা গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। ঘটনার তদন্ত শুরু করে। পুলিশ জানিয়েছে এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে খতিয়ে দেখছে তারা। পাশাপাশি প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তদের শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

সূত্রে জানা গিয়েছে,ঘটনাটি ঘটে এক সপ্তাহের মাথায়। কিছুদিন আগে ৪ জুলাই রাতে আরেক প্রখ্যাত ব্যবসায়ী ও বিজেপি নেতা গোপাল খেমকা কে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। খেমকা হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল গান্ধী ময়দান থানার অন্তর্গত টুইন টাওয়ার এলাকার প্যানাশ হোটেলের সামনে। জানা গিয়েছে, সেদিন তিনি একটি বৈঠক সেরে ফিরছিলেন। সেই মুহূর্তে তাঁর উপর অতর্কিতে হামলা চালানো হয়। পুলিশ অনুমান করেছে ঘটনাটি সম্পূর্ণরূপে সুপরিকল্পিত। এমনকি একাধিক হামলাকারী এতে জড়িত ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, হামলার আগে খেমকার গতিবিধি নজরে রাখতে 'স্পটার' ব্যবহার করা হয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কেউ তাঁকে অনুসরণ করছিল পুলিশের ধারণা৷ সুযোগ বুঝে অভিযুক্তদের তথ্য সরবরাহ করছিল।
এই ঘটনার তদন্ত চলাকালীন এই সপ্তাহেই মূল অভিযুক্তদের একজন পুলিশি এনকাউন্টারে হত্যা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ও ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। যদিও এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে আরও বড় কোনও চক্র রয়েছে কি না, তা নিয়ে বর্তমানে তদন্ত চলছে।
এক সপ্তাহে দুইজন ব্যবসায়ীর খুন। একদিকে গোপাল খেমকার মতো প্রভাবশালী রাজনৈতিক-ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব, অন্যদিকে স্থানীয় দোকানদার। এই ধরণের ধারাবাহিক ঘটনায় ব্যবসায়ী সমাজ ও নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক ভয় ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে৷ ব্যবসায়ীরা বলছেন, 'প্রতিদিন দোকান খুলতে ভয় লাগে। কার কখন কী হবে, বোঝা যাচ্ছে না। প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমাদের ব্যবসা চালানোই মুশকিল হয়ে পড়বে।' পাটনার বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ইতিমধ্যেই বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচীর ডাক দিয়েছে। দ্রুত তদন্ত শেষ করে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা৷
আরও পড়ুনঃ স্বর্গরাজ্যে ভয়াবহ দু্র্ঘটনা! আচমকা খাদে পড়ে প্রাণ হারালেন একাধিক...
পাটনা পুলিশ এই দুটি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে। দুই ঘটনাতেই পদ্ধতির মিল থাকায় পুলিশের সন্দেহ, এটি কোনো অপরাধচক্রের কাজ হতে পারে। এরা টার্গেট করে ব্যবসায়ীদের উপর হামলা চালাচ্ছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, 'প্রাথমিকভাবে দুটি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র না থাকলেও আমরা সম্ভাবনাগুলি খতিয়ে দেখছি। প্রত্যেক সন্দেহভাজনকে নজরে রাখা হয়েছে। গোয়েন্দা বিভাগকে আরও সক্রিয় করা হয়েছে।' এরই মধ্যে পাটনা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাজার, ব্যস্ত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাত্রিকালীন টহল বাড়ানো হয়েছে এবং কিছু এলাকায় নাকা চেকিং চালানো হচ্ছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পাটনা শহরের সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী সমাজ এবং রাজনৈতিক মহলে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাঁরা এই ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে জরুরি পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। একজন প্রাক্তন বিধায়ক ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বর্তমানে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চলছে। অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করতে না পারলে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ আরও বাড়বে বলে পুলিশের ধারণা।
