আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০০৬ সালের মুম্বই ট্রেন বিস্ফোরণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া ১২ জন পুরুষকে বোম্বে হাইকোর্ট সোমবার বেকসুর খালাস দিল। এই রায়ে প্রায় দুই দশক পরে ন্যায়বিচারের আলো দেখলেন দীর্ঘদিন ধরে জেলে থাকা অভিযুক্তরা। মুম্বইয়ের উপনগর রেলপথে সাতটি ট্রেনে একযোগে বিস্ফোরণে ১৮৯ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন এবং আহত হয়েছিলেন প্রায় ৮০০ জন। ভারতের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ MCOCA আদালত ২০১৫ সালে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
তবে সোমবার বিচারপতি রেবতী মোহিতে দোঠরে ও গৌরী গোডসে-র ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, “প্রসিকিউশনের মামলা মোটেই নির্ভরযোগ্য নয়। সাক্ষীদের বক্তব্য অসঙ্গত, পরিচয় শনাক্তকরণ পর্ব সন্দেহজনক, এবং একাধিক স্বীকারোক্তি জোর করে আদায় করা হয়েছে।” আদালত আরও জানায়, একাধিক সাক্ষী চার বছর বা তারও বেশি সময় চুপ থাকার পর হঠাৎ করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করেছেন—যা স্বাভাবিক নয়। বিচারপতিরা উল্লেখ করেন যে, “একজন সাক্ষী একাধিক অপরাধমূলক মামলায় পুলিশের ঘনিষ্ঠ সাক্ষী ছিলেন—যেমন ঘটকপাড়ার বিস্ফোরণ মামলা—ফলে তাঁর সাক্ষ্যকে বিশ্বাসযোগ্য বলা যায় না।”
আরও পড়ুন: কিশোরের অণ্ডকোষে কামড় পিটবুলের! মুম্বইয়ে বিভীষিকাময় ঘটনা, কুকুর লেলিয়ে দিয়ে অভিযুক্ত পলাতক
আদালত এটাও বলে, “কোনও কোনও সাক্ষী বিচারপর্বে আদৌ সাক্ষ্য দেননি। বিস্ফোরক উদ্ধার সংক্রান্ত প্রমাণ আদালতে টিকিয়ে রাখা যায়নি, ফরেনসিক ল্যাব পর্যন্ত ওই প্রমাণ কিভাবে নিরাপদে পৌঁছেছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।” আদালত চূড়ান্তভাবে জানায়, প্রসিকিউশন ‘যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের বাইরে’ দোষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এক অভিযুক্ত কামাল আনসারী ২০২১ সালে নাগপুর জেলে কোভিডে মারা যান। বাকি ১১ জন, যারা প্রায় ১৯ বছর জেলে ছিলেন, এখন মুক্তি পাচ্ছেন। আসামীদের পক্ষের আইনজীবী ইউগ মোহিত চৌধুরী বলেন, “এই রায় ভুলভাবে কারাবন্দিদের জন্য আশার প্রতীক হয়ে থাকবে।” পাবলিক প্রসিকিউটর রাজা ঠাকরে রায়ের স্বীকৃতি দিয়ে বলেন, “এই রায় ভবিষ্যতের বিচারপ্রক্রিয়ার জন্য দিশানির্দেশ হয়ে উঠবে।”
২০০৬ সালের ১১ জুলাই সন্ধ্যার দিকেই মুম্বইয়ের ব্যস্ততম উপনগর রেলপথে ১১ মিনিটের ব্যবধানে সাতটি বিস্ফোরণ ঘটে। ওই সময় অফিস ফেরত গন্তব্যগামী যাত্রীদের ঠাসা ভিড় ছিল ট্রেনগুলিতে। মূলত প্রথম শ্রেণির কামরাগুলিকে নিশানা করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, যাতে সাধারণ মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত কর্মজীবীরাই মূলত হতাহত হন। বোরিভালি থেকে শুরু করে মাহিম, মতুঙ্গা, বান্দ্রা, জোগেশ্বরী, ভাইন্দর ও মীরা রোড—এই স্টেশনগুলির কাছাকাছি ট্রেনের ভিতরেই রাখা হয়েছিল টাইমারযুক্ত বিস্ফোরক। ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহরে। সন্দেহভাজন হিসেবে তৎকালীন পুলিশ তদন্তে নিয়ে আসে ‘সিমি’ এবং পাকিস্তানের ‘লস্কর-এ-তৈবা’-র সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা।
