ওটিটি দুনিয়ায় নারীকেন্দ্রিক ক্রাইম থ্রিলার ধীরে ধীরে তৈরি করেছে আলাদা এক শক্ত ভিত। যেখানে গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন নারীরাই, যাঁরা সমাজের বাঁধা নিয়ম ভাঙেন, অপরাধীদের বুদ্ধিতে হার মানান, কিংবা নৈতিকতার ধূসর এলাকায় দাঁড়িয়ে নিজের মতো করে ন্যায়বিচারের পথ তৈরি করেন। কখনও তাঁরা তদন্তকারী অফিসার, কখনও অনিচ্ছুক গ্যাং লিডার, আবার কখনও নিরীহ মধ্যবিত্ত নারী যে সময়ের সঙ্গে বদলে যান ভয়ঙ্কর খেলোয়াড়ে। টানটান রহস্য, সাইকোলজিক্যাল টানাপোড়েন আর একের পর এক টুইস্টে ভরা এই সিরিজগুলি প্রমাণ করে দেয় থ্রিল, সাসপেন্স আর অ্যাকশনে মেয়েরাও গল্পের দখল নিতে পারেন। এমনই সাতটি অবশ্যই দেখার মতো ওটিটি নারীকেন্দ্রিক ক্রাইম থ্রিলারের হদিস রইল।
2
8
দিল্লি ক্রাইম (নেটফ্লিক্স): বাস্তব অপরাধের প্রেক্ষাপটে তৈরি এই সিরিজ় শুরু হয় ২০১২ সালের নির্ভয়া মামলার পরবর্তী সময়ে। দিল্লি পুলিশে কর্মরত ডিসিপি বর্তিকা চতুর্বেদী (শেফালি শাহ) ও তাঁর টিমের নিরলস তদন্তই গল্পের চালিকাশক্তি। দ্বিতীয় সিজনে আসে কুখ্যাত ‘কচ্চা-বানিয়ান’ গ্যাং-এর ছায়া, আর তৃতীয় সিজন কেন্দ্রীভূত মানুষ পাচারের মতো ভয়ংকর বাস্তবতার দিকে। প্রতিটি সিজনেই উঠে আসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী নারীদের মানসিক চাপ, সাহস এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, যা এই সিরিজ়কে শুধু ক্রাইম ড্রামা নয়, এক শক্ত সামাজিক দলিলও করে তোলে।
3
8
সাস, বহু ঔর ফ্লেমিংগো (জিও হটস্টার): চিরাচরিত শাশুড়ি-বউমার গল্পকে একেবারে উল্টে দিয়েছে এই স্টাইলিশ ক্রাইম ড্রামা। বাইরে থেকে সাধারণ ব্যবসায়ী মনে হলেও, রানি (ডিম্পল কাপাডিয়া) আসলে এক শক্তিশালী ড্রাগ কার্টেলের মাথা। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন কন্যা ও পুত্রবধূরা, যাঁরা প্রয়োজনে বন্দুক ধরতেও পিছপা নন। পরিবার, বিশ্বাসঘাতকতা আর আন্ডারওয়ার্ল্ডের সংঘর্ষ মিলিয়ে এই সিরিজ নারীকেন্দ্রিক অ্যান্টি-হিরো ধারণাকে নতুন সংজ্ঞা দেয়।
4
8
আর্যা: (জিও হটস্টার): স্বামীর খুনের পর সন্তানদের বাঁচাতে অপরাধজগতে পা রাখতে বাধ্য হন আর্যা সারিন (সুস্মিতা সেন)। যে নারী কখনও এই জীবন চাননি, সেই তিনিই হয়ে ওঠেন ভয়ংকর ড্রাগ সাম্রাজ্যের মুখ। বিশ্বাসঘাতকতা, পুলিশের চাপ আর প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাং-এর মাঝেও নিজের নৈতিকতা ধরে রাখার লড়াই এই সিরিজের আসল শক্তি। একজন মায়ের ধীরে ধীরে অপরাধজগতের নেত্রী হয়ে ওঠার যন্ত্রণাময় রূপান্তরই ‘আর্যা’।
5
8
ডাব্বা কার্টেল (নেটফ্লিক্স): থানের পাঁচজন সাধারণ মহিলা যাঁদের শুরুটা ছিল শুধুই টিফিন পরিষেবার মাধ্যমে। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে সেই ডাব্বার মধ্যেই ঢুকে পড়ে মাদক। সাধারণ মধ্যবিত্ত জীবনের আড়ালে তৈরি হয় বিপজ্জনক ড্রাগ রুট। ব্যবসা যত বাড়ে, তত বাড়ে ঝুঁকি। পুলিশ, গ্যাং আর নিজেদের মধ্যে অবিশ্বাস। এই সিরিজ় দেখায়, অতি পরিচিত পরিবেশেও কীভাবে অপরাধের বীজ অজান্তেই গড়ে ওঠে।
6
8
মেয়ার অফ ইস্ট টাউন (জিও হটস্টার): পেনসিলভানিয়ার ছোট শহরে এক খুনের তদন্তে নামেন ডিটেকটিভ মেয়ার শিহ্যান (কেট উইন্সলেট)। চাকরির চাপের সঙ্গে লড়ছেন ব্যক্তিগত ট্রমা আর ভাঙতে থাকা পরিবারকেও। অন্ধকার গোপন সম্পর্ক আর চাপা যন্ত্রণা ধীরে ধীরে সামনে আসে। মানসিক গভীরতা, ধীরগতির টেনশন আর কেট উইন্সলেটের অসাধারণ অভিনয় এই হুডানিটকে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে যায়।
7
8
গ্রিসেল্ডা (নেটফ্লিক্স): বাস্তব চরিত্র গ্রিসেল্ডা ব্লাঙ্কোর জীবনকে ঘিরে তৈরি এই সিরিজে সোফিয়া ভার্গারা অভিনয় করেছেন ‘গডমাদার অব কোকেন’ চরিত্রে। নির্যাতন থেকে পালিয়ে এসে মিয়ামিতে শুরু হয় তাঁর ক্ষমতার উত্থান। পুরুষশাসিত ড্রাগ দুনিয়ায় নিজের জায়গা তৈরি করতে তিনি হয়ে ওঠেন নির্মম, কৌশলী এবং ভয়ংকর। ক্ষমতা, পরিবার ও অপরাধ -এই তিনের সংঘর্ষই ‘গ্রিসেল্ডা’র মেরুদণ্ড।
8
8
শার্প অবজেক্টস (জিও হটস্টার): গিলিয়ান ফ্লিনের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি এই সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারে সাংবাদিক ক্যামিল প্রিকারের (অ্যামি অ্যাডামস) শহরে ফেরা মানেই পুরনো ক্ষতের আবার রক্তপাত। একের পর এক কিশোরীর খুনের রহস্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তার নিজের অতীত, বিষাক্ত পারিবারিক সম্পর্ক আর মানসিক অসুখ। নিঃশব্দ, গা ছমছমে এই সিরিজ় ভয় দেখায় শব্দ নয়, অনুভূতির গভীরতা দিয়ে।