বলিউড মানেই গ্ল্যামার, স্টাইল, আর স্বপ্নপূরণের মঞ্চ। কিন্তু এই ঝকঝকে আলোর পিছনে লুকিয়ে থাকে অনেক অন্ধকার— বিশেষ করে যখন প্রসঙ্গ আসে সৌন্দর্যের মানদণ্ড আর বর্ণবৈষম্যের। সদ্য একটি সাক্ষাৎকারে বলিউড অভিনেত্রী বাণী কাপুর সেই অন্ধকার দিকেই তীব্র আঙুল তুললেন, তুলে ধরলেন কীভাবে ত্বকের রঙের কারণে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছিল একটি ছবির কাস্ট থেকে।

 

সম্প্রতি, দেওয়া এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে বাণী বলেন, “একজন পরিচালক— যে মুম্বইয়েরও নন— তাঁর ছবির থেকে আমাকে বাদ দিয়েছিলেন এই বলে যে আমি ধবধবে ফর্সা নই অর্থাৎ ‘মিল্কি হোয়াইট’ নই।” যদিও পরিচালক সোজাসুজি বলেননি, কিন্তু বাণীর কাছে খবর পৌঁছেছিল অন্য পথ দিয়ে। এই অপমানের জবাবে বাণী সাহসিকতার সঙ্গে বলেছিলেন, “যদি এটাই হয় কারও ছবি বানানোর মানদণ্ড, তবে আমি নিজেই সেই ছবির অংশ হতে চাই না। সে যেন নিজের ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি নায়িকা খুঁজে নেয়। আমি জানি আমার জন্য অন্য আরও ভালোপরিচালক আছেন। তাঁদের না হয় আমি খু নিজে নেব!” 
সৌন্দর্য-বৈষম্যের ছুরি আরও ধারালো মেয়েদের জন্য, মত অভিনেত্রীর।  সেই সাক্ষাৎকারে বাণী আরও বলেন, “বলিউডে এখনও শরীরের গঠন, গায়ের রঙ— এই সবকিছু নিয়েই চলে কড়া বিচার। ‘একটু ভারী চেহারা করো  নইলে ছবির বাজারে কিন্তু টিকে থাকা যাবে না, পুরুষ দর্শকেরা ভারী চেহারার মেয়ে পছন্দ করে’— এই জাতীয় মন্তব্য শুনতে হয়েছে আমায়।” যদিও তিনি স্পষ্ট জানান, “আমি যেমন, ঠিক তেমনই ভালবাসি নিজেকে। আমি ফিট, আমি সুস্থ এবং আমি ঠিক আছি। কেউ যদি এটা না বোঝে, তবে সেটা তার সমস্যা।”

 

সোজা কথায়, চাপ না নিয়ে নিজের মতো থাকতে ভালবাসেন এই অভিনেত্রী। বাণী কাপুরের এই স্পষ্ট বক্তব্য প্রমাণ করে দেয়, একজন শিল্পী শুধু রূপ নয়— আত্মবিশ্বাস আর সম্মানের প্রতীকও হতে পারেন। তিনি বলেন, “আমি বদলাতে চাই না নিজেকে। সমাজের মনোমতো রূপে নিজেকে গড়ে তুলব না। আমি যেমন, তেমনই ভালো।”

কাজের ময়দানে বাণী কাপুর কী করছেন? বাণী  করছেন নতুন ওয়েব সিরিজ মণ্ডলা মার্ডার্স-এ, যেখানে তিনি ধরা দেবেন এক শক্তিশালী, নির্ভীক তদন্তকারী অফিসারের ভূমিকায়। সিরিজটি পরিচালনা করছেন ‘মর্দানি’ খ্যাত গোপী পুথরন। বাণীর মতে, এখনকার দর্শক নারীর রাগ, প্রতিবাদ, শক্তিকে আলাদাভাবে দেখছে। তবে তিনি এটাও বলেন, “নারীর শক্তিকে অনেক সময় রাগ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়— এটা ভুল।”

 

এই কথা শুধু বাণী কাপুরের নয়— এটা সেই সমস্ত শিল্পীর কণ্ঠস্বর, যাঁরা বাহ্যিক রঙ, শরীর কিংবা গ্ল্যামারের ফর্মুলা ছাড়াও নিজের দক্ষতায় বলিউডে জায়গা করে নিতে চান। বাণীর এই সাহসী বক্তব্য আবারও প্রমাণ করে দেয়— আলো ছাড়াও, অন্ধকারের ভিতর থেকেও উঠে আসে আলো জ্বালানোর মানুষ।

 

প্রসঙ্গত, পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খান-এর বিপরীতে ‘অবির গুলাল’-এ কাজ করেছেন বাণী। তবে ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কের অবনতির জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য মুক্তি স্থগিত রাখা হয়েছে এই ছবির। ‘অবির গুলাল’ সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন আরতি এস. বাগদি, যিনি ‘চলতি রহে জীবন’ সিনেমার জন্য পরিচিত। আর এই সিনেমাটি প্রযোজনা করছে ইন্ডিয়ান স্টোরিজ, এ রিচার লেন্স, এবং আরজে পিকচার্স। ফাওয়াদ এবং বাণী ছাড়াও এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন লিসা হায়ডন, ঋধি ডোগরা, সোনি রাজদান, ফরিদা জলাল, রাহুল ভোরা, এবং পরমীত শেঠি। একটি আন্তর্জাতিক প্রযোজনা হিসেবে এই ছবি ভারত এবং যুক্তরাজ্য থেকে শিল্পীদের নিয়ে তৈরি। লন্ডনে গত বছরের সেপ্টেম্বর ২৯ তারিখে শুরু হয়েছিল শুটিং।

 

‘আবির গুলাল’ দুই মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের গল্প, যারা একে অপরের পাশে এসে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে শান্তি এবং ভালবাসা খুঁজে পায়। এই প্রেমের গল্পই ‘অবির গুলাল’-এর মূল রসদ।