সে বহু বছর আগের কথা। আমেদাবাদের নিছকই এক সাধারণ পরিবারের ছেলের দু’চোখ ভরে স্বপ্ন। তাঁকে স্বপ্ন দেখান ‘বিগ বি’। অমিতাভ বচ্চন। পর্দায় তাঁর সাফল্যের গাঁথা চাক্ষুষ করেই স্বপ্নপূরণের পথে পাড়ি দিয়েছিলেন আনন্দ কমলনয়ন পণ্ডিত। বর্তমানে ভারতের অন্যতম সফল ব্যবসায়ি এবং প্রযোজক। এক সময় অমিতাভের ‘ত্রিশূল’ দেখে বদলে ফেলতে চেয়েছিলেন নিজের ভাগ্য। আর সেই যাত্রাপথে নীরবে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে গিয়েছেন তাঁর জীবনের নায়ক।
ভারতের রিয়েল এস্টেট এবং বিনোদন জগতের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব আনন্দ কমলনয়ন পণ্ডিতের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৮৬৬০ কোটি টাকা। ‘গ্রেট গ্র্যান্ড মস্তি’, ‘প্যায়ার কা পঞ্চনামা ২’, ‘টোটাল ধামাল’ এবং ‘সরকার ৩’এর মতো হিট ছবি প্রযোজনা করে বলিউডে নিজের অবস্থান পোক্ত করেছেন তিনি। সম্প্রতি হুরুন ইন্ডিয়া ২০২৫ তালিকায় দেশের দশম ধনী রিয়েল এস্টেট উদ্যোক্তা হিসেবে নাম লিখিয়েছেন আনন্দ। তাঁর বিপুল সম্পদের বড় অংশ এসেছে নিজের সংস্থা শ্রী লোটাস ডেভেলপার্স অ্যান্ড রিয়েলটি লিমিটেড থেকে, যা তাঁর প্রযোজনা সংস্থা আনন্দ পণ্ডিত মোশন পিকচার্স-এর পাশাপাশি সমান সাফল্যে এগিয়ে চলছে।
শাহরুখ খান এবং স্বয়ং অমিতাভের মতো সুপারস্টাররা আনন্দের সংস্থায় আলাদা করে ১০ কোটি করে বিনিয়োগ করেছেন। এছাড়াও হৃতিক রোশন, অজয় দেবগণ, একতা কাপুর, সারা আলি খান, টাইগার শ্রফ এবং রাজকুমার রাও-সহ আরও বেশ কয়েকজন বলিউড তারকাও তাঁর রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছেন। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা মূলত মুম্বইয়ের পশ্চিমাঞ্চলের অভিজাত এলাকাগুলিতে পুনর্নির্মাণ এবং প্রিমিয়াম হাউজিং প্রকল্পের কাজ করে।
অমিতাভ এবং শাহরুখের সঙ্গে আনন্দের সম্পর্ক শুধু ব্যবসায়িক নয়, ব্যক্তিগতও বটে। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ১৯৭৮ সালের অমিতাভ অভিনীত ‘ত্রিশূল’ সিনেমা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ছবিতে অমিতাভের চরিত্র এক সাধারণ মানুষ থেকে এক বিশাল রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্যের মালিক হয়ে ওঠন— পর্দায় এই সাফল্যের আখ্যানই কিশোর আনন্দের মনে গভীর ছাপ ফেলে। আহমেদাবাদে বেড়ে ওঠা আনন্দ সেই সময়ই ঠিক করেন, একদিন তিনিও মুম্বই গিয়ে নিজের মতো করে বড় কিছু করবেন।
অমিতাভের চরিত্র বিজয়ের মতোই তিনি নিজের স্বপ্ন গড়তে শুরু করেন—এবং প্রতিষ্ঠা করেন লোটাস ডেভেলপার্স। মাত্র এক বছরের মধ্যেই ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। মুম্বইয়ে এসে তিনি অমিতাভের বাংলো ‘জলসা’র পিছনে একটি বাড়ি কেনেন এবং ধীরে ধীরে তাঁদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আনন্দ একাধিকবার বলেছেন, অমিতাভ শুধু তাঁর বন্ধু নন, একজন পরামর্শদাতা এবং পরিবারও বটে। ২০১৩ সালে অমিতাভ যখন ‘জলসা’ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করেন, তখন আনন্দ তাঁর সেই বাড়িটি ৫০ কোটিতে বিক্রি করে দেন তাঁকে।
এই বন্ধুত্ব পরবর্তীতে সিনেমার পর্দাতেও জায়গা করে নেয়। আনন্দ প্রযোজনা করেন সরকার ৩ (২০১৭) ও চেহরে (২০২১), যেখানে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন অমিতাভ। এছাড়াও তিনি প্রযোজনা করেন দ্য বিগ বুল (২০২১), যেখানে অভিনয় করেছেন অমিতাভের পুত্র অভিষেক বচ্চন।
একজন স্বপ্নদ্রষ্টা ব্যবসায়ী থেকে সফল প্রযোজক—আনন্দের গল্প যেন ছবির মতোই, যেখানে পরিশ্রম, অনুপ্রেরণা এবং সম্পর্কের মেলবন্ধন তাঁকে ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী উদ্যোক্তাদের কাতারে দাঁড় করিয়েছে। আর সেই উড়ানের নেপথ্যে রয়ে গিয়েছেন ‘বিগ বি’।
