ঋষি কাপুর আজ আর আমাদের মাঝে নেই। ২০২০ সালে চলে যাওয়া এই কিংবদন্তি অভিনেতার কণ্ঠস্বর, সোজাসাপটা মন্তব্য আর সিনেমার প্রতি তাঁর অফুরন্ত ভালবাসা কিন্তু আজও হৃদয়ে বাজে। ৩ সেপ্টেম্বর তাঁর ৭৩তম জন্মবার্ষিকীতে ফিরে দেখা যাক সেই মিষ্টি মুহূর্তে, যখন আলিয়া ভট্ট এখনও তাঁর পুত্রবধূ নন, কেবলমাত্র ইন্ডাস্ট্রির এক তরুণী অভিনেত্রী। আর তখনই ঋষি কাপুর প্রকাশ্যে স্বীকার করেছিলেন—আলিয়া ভাট-ই তাঁর চোখে সমকালীন প্রজন্মের সেরা অভিনেত্রী।
২০১৮ সালের কথা। একদিকে তাঁর নিজের কেরিয়ার তখন জমজমাট— ‘১০২ নট আউট’ সদ্য মুক্তি পেয়েছে, সামনে ‘মুল্ক’ আর ‘রাজমা চাওয়াল’। একই সময়ে তিনি শুটিং করছেন ‘দ্য বডি’ ছবির, স্প্যানিশ থ্রিলার এল কুয়ারপো-এর ভারতীয় রূপান্তর। এই ব্যস্ত সময়েই ঋষি কাপুর কথা বলছিলেন নতুন প্রজন্মের অভিনেতাদের নিয়ে। সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন, কাদের কাজ তাঁকে মুগ্ধ করছে? এক মুহূর্ত দেরি না করে তিনি বলেছিলেন—আলিয়া ভাট।
ঋষির মন্তব্য ছিল স্পষ্ট —“আমি আলিয়া ভাটকে ভীষণ প্রশংসা করি। এত অল্প বয়সে ‘হাইওয়ে’ বা ‘রাজি’-র মতো চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করা খুব কঠিন। কিন্তু আলিয়া তা করেছে। এমন কাজ কেবল প্রতিভাবান অভিনেতার পক্ষেই সম্ভব। অবশ্যই ভাগ্যের সহায়ও লাগে, কিন্তু প্রতিভা না থাকলে ভাগ্যও কিছু করে না। আলিয়ার দুটোই আছে।”
সেই মুগ্ধতার গল্প কয়েক বছরের মধ্যেই আরও গভীর সম্পর্কের বাঁধনে গাঁথা পড়ল। ২০২২ সালে আলিয়া হয়ে গেলেন তাঁরই পুত্রবধূ। শেষ জীবনযুদ্ধে, যখন ঋষি কাপুরর নিউ ইয়র্কে ক্যানসারের চিকিৎসাধীন, তখন আলিয়াকে বারবার দেখা গিয়েছিল কাপুর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে। শুধু পেশাগত শ্রদ্ধা নয়, তাঁকে ঘিরে জন্ম নিল এক অন্তরঙ্গ বন্ধন।
আজ, প্রয়াত এই অভিনেতার জন্মবার্ষিকীতে, আলিয়া ভাট স্মৃতিচারণ করেছেন হৃদয়ভরা আবেগে। ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেছেন ঋষির পুরনো একটি ভিডিও, ক্যাপশনে লিখেছেন—“সবসময় এবং প্রতিমুহূর্তে তোমাকে মিস করি...শুভ জন্মদিন।”
তাঁর আরও আবেগঘন কথায় ফুটে উঠেছে সেই সম্পর্কের রঙ— “এই মানুষটি আমার জীবনে এত ভালবাসা আর উষ্ণতা এনেছিলেন! সবাই আজ তাঁকে কিংবদন্তি অভিনেতা হিসেবে চেনে, কিন্তু শেষ দু’ বছরে আমি ওঁকে পেয়েছি একজন বন্ধু হিসেবে, একজন চাইনিজ ফুড লাভার হিসেবে, একজন অগাধ সিনেমাপ্রেমী হিসেবে, একজন যোদ্ধা, একজন সুন্দর গল্পকার, একজন উষ্ণ মানুষ হিসেবে। ওঁর কাছ থেকে যে ভালবাসা পেয়েছি, তা চিরকাল মনে রাখব। ঋষি আঙ্কল, আপনাকে সবসময় ভালবাসব, মিস করব।”
এ যেন এক সম্পর্কের পূর্ণতা—শুরু হয়েছিল একজন কিংবদন্তির প্রশংসা দিয়ে, শেষ হয়েছিল এক পরিবারের ভালবাসায়। আজ জন্মদিনে ঋষি কাপুর নেই, কিন্তু তাঁর উষ্ণতা, তাঁর শব্দ আর সেই অনন্য বন্ধন—থেকে গেছে চিরকাল।
