নিজস্ব সংবাদদাতা: পুজোর সময় ছবির ডিস্ট্রিবিউশনকে ঘিরে ক্রমশই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে টলিউড। 'রঘু ডাকাত', 'রক্তবীজ ২', 'দেবী চৌধুরানী' এবং 'যত কান্ড কলকাতাতেই' - মূলত এই চারটি ছবির কোনটি কতগুলি শো পাবে তাই নিয়েই বিবাদ। অভিযোগের তীর মূলত সংসদ অভিনেতা দেবের 'রঘু ডাকাত'- এর দিকে। অন্য ছবিগুলির তুলনায় রঘু ডাকাত বেশি শো পাচ্ছে বলে অভিযোগ। এই বিষয় নিয়ে আজ মুখ খুললেন রক্তবীজ ২-এর অন্যতম পরিচালক, প্রযোজক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।

হল পাওয়া নিয়ে কি কোনও সমস্যা হয়েছে? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে রাখঢাক না রেখেই শিবপ্রসাদ বলেন, “সেটা তো কাম্য ছিল না। কারণ আমাদের যখন মিটিং হয়েছিল, যখন কমিটি গঠন হয়েছিল, তখন আমি যতদূর যা ধারণা পেয়েছিলাম এবং যা বলা হয়েছিল তাতে প্রত্যেকটি সিনেমা সমানভাবে হল পাওয়ার কথা। সেই কারণেই চারটি সিনেমা মুক্তির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কারণ সিঙ্গেল থিয়েটারের চারটি করে শো থাকে। ফলে সবক’টি সিনেমায় একটি করে শো পাবে এবং সবক’টি সিনেমা সমানভাবে ভাগ হবে। আমি অন্তত তেমনটাই জানতাম। এখনও শোকেসিং আসেনি, যদি শোকেসিংয়ে দেখা যায় নির্দিষ্ট কোনও সিনেমা দুটো করে শো পাচ্ছে, তাহলে আমার মনে হয় কোথাও আমরা যে ভাবনা নিয়ে শুরু করেছিলাম যে- বাংলা ছবিকে বাঁচানোর, বাঙালি প্রযোজকদের সাহায্য করা, বাংলা সিনেমাকে সাহায্য করা, বাংলা ভাষায় বাংলা সিনেমা তৈরি করছেন যেসব পরিচালক-প্রযোজক তাদেরকে তৈরি করা, সেটা হবে না। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী, মাননীয় মন্ত্রী শ্রী অরূপ বিশ্বাস, শ্রী স্বরূপ বিশ্বাস এবং ইম্পা প্রেসিডেন্ট পিয়া সেনগুপ্ত- সকলের সামনে যে আলোচনা হয়েছিল, যে কমিটি হয়েছিল তাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তাহলে আমাদের প্রশ্ন জাগবে যে সব সিনেমা তো সমান ভাবে শো পেল না, সেটাই একটা বড় প্রশ্ন জাগবে। কারণ আমরা তো সেই আশ্বাস নিয়েই ভেবেছিলাম যে প্রত্যেকটা সিনেমা সমানভাবে ভাগ হবে এবং সিঙ্গেল থিয়েটারে অন্তত একটি করে শো পাবে।”
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে
হিন্দি বা ইংরেজি সিনেমার তুলনায় বাংলা সিনেমা, হল পাচ্ছে না। কিছুদিন আগে এই নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়। সেই সময় বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ানোর ডাক দিয়েছিলেন দেব। দেবের সেই আহ্বানে সাড়া দেন কমবেশি সকলেই। কিন্তু পুজোয় হল পাওয়া না পাওয়া নিয়ে কি সেই ঐক্যে কি কোথাও ফাটল ধরল? অন্য ভাষার ছবির সঙ্গে লড়াইয়ের চেয়েও কি বাংলা ভাষার অন্য ছবির সঙ্গে লড়াই করাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। উঠেছে এমন প্রশ্নও। এবারেও সোজা ব্যাটে খেললেন শিবপ্রসাদ। তাঁর সাফ কথা, “অন্য ভাষার সিনেমার সঙ্গে যখন লড়াই হয়, তখন বাংলা সিনেমার জন্য লড়াইতে সবাই একসঙ্গে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এখন সমস্যাটা হল, যখন নিজেদের ছবির মধ্যেই লড়াইটা হয় তখন কেউ কারও পাশে দাঁড়ায় না। সেটাই মুশকিল হয়ে যায়।” শিবপ্রসাদ আরও বলেন, “যখন অন্য ভাষার সঙ্গে কোনও বাংলা ভাষার সিনেমার লড়াই ছিল তখন সেই সিনেমাকে দাঁড় করানোর জন্য সমস্ত প্রযোজক, পরিচালক বাংলা ভাষাকে, বাংলা সিনেমাকে বাঁচানোর জন্য একজোট হয়েছিলেন। কিন্তু যখন বাংলা সিনেমারই সংকট এসে দাঁড়াল, যখন বাংলা সিনেমা, বাঙালি প্রযোজক এবং বাংলা ভাষার সিনেমার কথা এল তখন কেউ নেই।”
এই প্রসঙ্গে নিজের উদাহরণ টেনে আনেন পরিচালক। বলেন, “আমার মনে হয় আমি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর এবং প্রডিউসারের মধ্যে পড়ি। সিনেমা ছাড়া আমাদের কিছুই নেই। আমরা একটা সিনেমা করি, সেই সিনেমা চলে আবার আরেকটা সিনেমা করি। আমাদের অন্য কোন ব্যবসাও নেই, কিছুই নেই। এই বৃত্তটা যেভাবে চলে, যাঁরা এটার মধ্য দিয়ে চলেন, তাঁদের কাছে এটা খুবই মুশকিল এবং সমস্যাজনক।”
কিছুদিন আগেই শিবপ্রসাদের স্ত্রী জিনিয়া সমাজমাধ্যমে উত্থাপন করেছিলেন শো পাওয়া নিয়ে সমস্যার কথা। তাতে সিনেপ্রেমীদের একাংশের আক্রমণের শিকার হন তিনি। সেই বিষয়টি নিয়েও মুখ খোলেন শিবপ্রসাদ। বলেন, “এগুলোতো কাম্য নয়। ব্যক্তিগত আক্রমণ করা ঠিক নয়। লকড প্রোফাইল থেকে যারা ব্যক্তিগত আক্রমণ করে, তারা কাপুরুষ। ক্ষত্রিয়রা কখনও পিছন থেকে যুদ্ধ করে না, চোখে চোখ রেখে যুদ্ধ করে। ক্ষত্রিয়রা কোনও দিন পিছন থেকে ছুরি মারে না। আমি অন্তত তাই জানি।”
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেও দেব এবং শিবপ্রসাদকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল মিটিংয়ে। কিন্তু তার পরেও এই মনোমালিন্য কেন? পরিচালকের কথায়, “আমি আবারও বলছি, কথা হয়েছিল যে প্রত্যেকটি সিনেমা একটি করে শো পাবে। সমানভাবে শো ভাগ হবে। সব প্রযোজকের কাছে নিজের সিনেমা সেরা। তাই প্রত্যেকটি সিনেমাকে সমানভাবে সুযোগ দেওয়া উচিত। যেভাবে ‘অংক কি কঠিন’ জায়গা পায়, যেভাবে ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ জায়গা পাবে, সেভাবে আজকে হাসানদার ছবিও (যত কাণ্ড কলকাতাতেই) জায়গা পাবে। সেভাবে আমাদের ছবিও জায়গা পাবে। সমানভাবে জায়গা পাবে। সেখানে আমাদের লড়াই করতে হবে কেন? আমাদের কেন ভাবতে হবে? সব ছবি সমান ভাবে দেখানো হোক। তারপর যে ছবি ভাল চলল সেই ছবির জন্য দর্শক এগিয়ে আসবে। যে ছবির জন্য দর্শক ভিড় করতে শুরু করবে, সেখানে তো হল মালিকের অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিয়ে শো ঠিক করবেন। কিন্তু পুজোর এক সপ্তাহ পর সেরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। আমার অন্তত তাই মনে হয়। এমনটাই কথা হয়েছিল যে পুজোর সময় অন্তত সব সিনেমার সমান ভাবে জায়গা পাবে।” সব মিলিয়ে শো ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে বিতর্কের জল কতদূর গড়ায় সেটাই এখন দেখার।