বিনোদন দুনিয়ায় মা-মেয়ের জুটির কথা উঠলেই যে ক’টি নাম উঠে আসে, তাদের মধ্যে নীনা গুপ্তা ও মাসাবা গুপ্তা আলাদা করে নজর কাড়েন। সমাজের তৈরি করা ছক ভাঙতে তাঁরা কখনও ভয় পাননি। কোনও দিন নিয়মের কাছে মাথা নত করেননি। জীবনের কঠিন বাস্তবতা, প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত আর সমাজের কটাক্ষ-সব মিলিয়েই নিনা ও মাসাবাকে গড়ে তুলেছে এই দৃঢ়চেতা নারীতে।
নীনা গুপ্তা বিয়ে না করেই সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন আর সেই সিদ্ধান্তেই তোলপাড় হয়েছিল সমাজ ও সংবাদমাধ্যম। কিন্তু সমস্ত চাপ, কটূক্তি আর বিতর্ককে উপেক্ষা করে মেয়েকে একা হাতে মানুষ করেছিলেন তিনি। তবে এই শক্তির গল্পের আড়ালে লুকিয়ে ছিল যন্ত্রণার অধ্যায়, যার কথা সম্প্রতি প্রকাশ্যে এনেছেন মাসাবা নিজেই।
১৯৮৯ সালের ২ নভেম্বর জন্ম মাসাবা গুপ্তার। তাঁর বাবা ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ভিভিয়ান ‘ভিভ’ রিচার্ডস। নীনা ও ভিভ কখনও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি। সেই কারণেই নিনার গর্ভাবস্থা ও সম্পর্ক নিয়ে একসময় রীতিমতো তোলপাড় হয়েছিল মিডিয়ায়। ট্যাবলয়েডে চলেছিল লাগাতার চর্চা, জল্পনা আর সমালোচনা।
সম্প্রতি, দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাসাবা জানান, তাঁর জন্মের আগেই নাকি সংবাদমাধ্যম তাঁদের ব্যক্তিগত পরিসরে হস্তক্ষেপ শুরু করেছিল। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্যটি ছিল, তাঁর জন্মের শংসাপত্র অর্থাৎ বার্থ সার্টিফিকেটটি হাসপাতাল থেকে চুরি করে সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করে দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য একটাই, প্রমাণ করা যে তিনি ‘অবৈধ সন্তান’ এবং ভিভ রিচার্ডসই তাঁর বাবা।
মাসাবার কথায়, “আমার জন্মের শংসাপত্র হাসপাতাল থেকেই চুরি করা হয়েছিল। তারপর সেটা সংবাদপত্রে ছাপা হয় প্রথম পাতায়। কেউ চেয়েছিল প্রমাণ করতে যে আমি অবৈধ সন্তান। ৯-১০ বছর বয়সে আমি বিষয়টা মোটামুটি বুঝতে শুরু করি। পুরোটা না বুঝলেও দেখেছি, শুনেছি। কেন এমন করা হয়েছিল, আজও বুঝি না। এটা ছিল নিষ্ঠুর, অদ্ভুত এবং আমার মায়ের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। আমি আজ এখানে বসে দুঃখ প্রকাশ করতে পারি, কিন্তু সত্যি বলতে কী, জানি না মা কীভাবে এই সবটা সামলেছিলেন। মানুষ খুব নিষ্ঠুর হতে পারে, এর কোনও ব্যাখ্যা আমার জানা নেই।”
অন্যদিকে, নীনা গুপ্তা নিজেকে কখনও ‘একজন সিঙ্গল মাদার’ হিসেবে ভাবেন না বলেও জানিয়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে নিনা বলেন, মাসাবার জন্মের দু’বছর পর তাঁর বাবা সবকিছু ছেড়ে দিয়ে তাঁদের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। নীনার জীবনে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বড় ভরসা, ‘আমার জীবনের পুরুষ’, এই ভাষাতেই বাবাকে উল্লেখ করেছেন অভিনেত্রী।
নিজের আত্মজীবনী ‘সচ কহু তো’-তে নীনা গুপ্তা লিখেছেন, সমাজের একাংশ তাঁকে গর্ভপাতের পরামর্শ দিয়েছিল। কেউ আবার সতর্ক করেছিলেন একা মা হওয়ার কঠিন বাস্তবতা নিয়ে। কিন্তু সব মন্তব্য শুনে শেষ পর্যন্ত তিনি নিজের মনকেই প্রশ্ন করেছিলেন।
নীনার লেখায়,“অনেকে বলেছিল সন্তান নষ্ট করে দিতে। কেউ বলেছিল, একা মা হওয়া খুব বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত। আমি সবার কথা মন দিয়ে শুনেছিলাম। সবাই ভেবেছিল আমার ভালর জন্যেই বলছে। কিন্তু যখন ঘরে ফিরলাম, একা বসে নিজেকে প্রশ্ন করলাম,‘তুমি কী চাও? তোমার কেমন লাগছে?’ উত্তরটা ছিল একটাই, আমি আনন্দে ভীষণ উচ্ছ্বসিত ছিলাম।”
নীনা গুপ্তা ও মাসাবা গুপ্তার এই গল্প শুধু মা-মেয়ের নয়, এটি সাহস, আত্মসম্মান আর সমাজের চোখে চোখ রেখে বাঁচার এক অনন্য দলিল।
