প্রয়াত হয়েছেন কিংবদন্তি অভিনেতা আসরানি। ৮৪ বছর বয়সে, দীর্ঘদিনের অসুস্থতার পর, গত সোমবার (২০ অক্টোবর, ২০২৫) দুপুর ১টা নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গত কয়েকদিন ধরেই বুকে ব্যথার কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এই বর্ষীয়ান শিল্পী। মুম্বইয়ের জুহুর আরোগ্য নিধি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রায় পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, শারীরিক জটিলতা ও ফুসফুসে জল জমে যাওয়ায় তাঁর অবস্থা ক্রমশ অবনতি হচ্ছিল বলে সূত্রের খবর। সোমবার রাতেই সান্তাক্রুজ শ্মশানে সম্পন্ন হয় তাঁর শেষকৃত্য। একেবারে নিভৃতে, কেবল ঘনিষ্ঠ পরিবারের উপস্থিতিতে। দীপাবলির রাতে আসরানির মৃত্যুসংবাদে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছে পুরো বলিপাড়া ও তাঁর অনুরাগীরা।
আরও পড়ুন: ‘মাত্র এক সপ্তাহ আগেই জড়িয়ে ধরেছিলেন…’ প্রিয় সহ-অভিনেতা আসরানিকে হারিয়ে ‘বাকরুদ্ধ’ অক্ষয়!
আরও মর্মান্তিক, মৃত্যুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে আসরানি লিখেছিলেন— “শুভ দীপাবলি”। কিছুদিন আগেই তাঁর মৃত্যু নিয়ে ভুয়ো গুজব ছড়িয়েছিল, তাই প্রথমে অনেকেই এ বারও সেটিকে গুজব ভেবে উড়িয়ে দেন। কিন্তু পরে তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকেই নিশ্চিত খবর আসে, কিংবদন্তি অভিনেতা সত্যিই প্রয়াত হয়েছেন।

কেন তাঁর মতো এত বড় মাপের অভিনেতার শেষকৃত্যের খবরটুকুও কাকপক্ষীতে টের পেল না? কেনই বা আসরানির শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার পরেই তাঁর পরিবার এই মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আনল? জানা গিয়েছে, আসরানির ইচ্ছেতেই তাঁকে দেওয়া হায়েছিল এই ‘নিঃশব্দ বিদায়’। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জীবনের শেষ সময়ে আসরানি নিজেই জানিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর যেন কোনও আড়ম্বর বা প্রচার না হয়। খ্যাতির আলোয় থেকেও তিনি চেয়েছিলেন এক সাধারণ মানুষের মতো শান্ত বিদায়। তাই তাঁর স্ত্রী মঞ্জু আসরানি তাঁর ইচ্ছেমতো নিভৃতে শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন, আর মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয় অন্ত্যেষ্টির পরেই।
আসরানি ছিলেন ভারতীয় সিনেমার অন্যতম প্রিয় মুখ। এক অনবদ্য কৌতুকাভিনেতা, যিনি পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়ে ৩৫০টিরও বেশি ছবিতে হাসির রঙ ছড়িয়েছেন। পুনের এফটিআইআই -এর প্রাক্তন ছাত্র আসরানি ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি বলিউডে পা রাখেন। শুরুতে গুরুগম্ভীর চরিত্রে অভিনয় করলেও খুব তাড়াতাড়িই তাঁর অনবদ্য হাস্যরস ও কমিক টাইমিং তাঁকে বানিয়ে তোলে দর্শকদের প্রিয় মুখ। বিশেষত সাত ও আটের দশকে, তিনি ছিলেন প্রতিটি পরিবারের হাসির কারণ। একেক সময় গোঁড়া কেরানি, কখনও বা দিশেহারা সহকারী আবার কখনও সরল, বিভ্রান্ত প্রেমিকের চরিত্রে অবিস্মরণীয়। আজও তাঁর প্রতিটি সংলাপ, প্রতিটি হাসি বলিউডের এক সোনালি যুগের স্মৃতি হয়ে বেঁচে আছে তাই তো সিনেমা রসিকদের কথায়, "আসরানির প্রাণবন্ত অভিব্যক্তি আর নিখুঁত টাইমিং যেন হয়ে উঠেছিল ভারতের হাস্যরস অভিনয়ের পাঠ্যবই।"
আসরানির মৃত্যুসংবাদে ভেঙে পড়েছেন অক্ষয় কুমার। সোমবার, ৮৪ বছর বয়সে দীর্ঘ অসুস্থতার পর প্রয়াত হন এই অভিনেতা। মাত্র এক সপ্তাহ আগেও অক্ষয় তাঁর সঙ্গে নিজের আসন্ন ছবি ‘হেওয়ান’-এর শুটিংয়ে কাজ করেছিলেন। তাই খবরটা যেন কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।
পাঁচ দশকেরও বেশি দীর্ঘ কেরিয়ারে ৩৫০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন আসরানি। তাঁর অতুলনীয় কমিক টাইমিং আর অভিব্যক্তি তাঁকে করে তুলেছিল হিন্দি সিনেমার সেরা চরিত্রাভিনেতার মুখের একটিতে। ১৯৭৫ সালের কালজয়ী ছবি শোলে-তে তাঁর অভিনীত জেলারের চরিত্র আজও ভারতীয় পপ সংস্কৃতির অঙ্গ। ‘শোলে’-তে জেলারের ভূমিকায় তাঁর সংলাপ, “হাম ইংরেজোঁ কে জামানে কে জেলর হ্যায়” আজও অমর। ‘ভুলভুলাইয়া’, ‘ধামাল’, ‘বান্টি ঔর বাবলি ২’, ‘আর... রাজকুমার’, ‘অল দ্য বেস্ট’, ‘ওয়েলকাম’-এর মতো বক্স অফিস সফল ছবিতেও অভিনয় করেছেন।
