সঙ্কর্ষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
আজ বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে বিকেল ৪টায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে উৎসবের উদ্বোধন করবেন অভিনেতা, তথা তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা। অনুষ্ঠানে প্রদীপ জ্বালাবেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক, তথা সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। উপস্থিত থাকবেন 'শোলে' ছবি খ্যাত পরিচালক, তথা এবারের সত্যজিৎ রায় স্মারক বক্তৃতার বক্তা রমেশ সিপ্পি, পরিচালক আদুর গোপালকৃষ্ণন, পরিচালক সুজয় ঘোষ এবং কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী আরতি মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
বুধবার বিকেলে নন্দন চত্বরে প্রবেশ করতেই শেষ পর্যায়ের ব্যস্ততা চোখে পড়ল। সেজে উঠছে নন্দন-রবীন্দ্র সদন চত্বর। ১৮২৭ টি ছবির মধ্যে ৩৯ টি দেশের ২১৫ টি ছবি বেছে নেওয়া হয়েছে এবারের উৎসবে দেখানোর জন্য। এর মধ্যে প্রতিযোগিতা বিভাগের জন্য মনোনীত হয়েছে ৪৩ টি ফিচার ছবি এবং ২৯ টি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি এবং তথ্যচিত্র। ৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে উদ্বোধনী ছবি হিসেবে দেখানো হবে 'সপ্তপদী'। ১৯৬১ সালে মুক্তি পাওয়া, অজয় কর পরিচালিত এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন, ছবি বিশ্বাস, ছায়া দেবী প্রমুখ। উদ্বোধনের পর ধনধান্য স্টেডিয়ামে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় দেখানো হবে ছবিটি।
এবারের ফোকাস কান্ট্রি পোল্যান্ড। উৎসবে দেখানো হবে সেদেশের ১৯ টি চলচ্চিত্র। থাকবে পোল্যান্ডের ছবির প্রদর্শনী। উপস্থিত থাকবেন সেদেশের চলচ্চিত্র পরিচালকেরা।
এবারে ৩১ তম চলচ্চিত্র উৎসবে শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হবে ঋত্বিক ঘটক, রিচার্ড বার্টন, সাম পিচকিনপা, সন্তোষ দত্ত, সলিল চৌধুরী ও রাজ খোসলাকে। বিশ্ববন্দিত পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের জন্মশতবর্ষে দেখানো হবে 'অযান্ত্রিক', 'বাড়ি থেকে পালিয়ে'-সহ সাতটি ছবি। নন্দনে অনুষ্ঠিত হবে তাঁকে নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী, 'দ্য সাবঅল্টার্ন ভয়েস'। শিশির মঞ্চে তাঁকে নিয়ে সেমিনারে বলবেন পরিচালক আদুর গোপালকৃষ্ণন। গগনেন্দ্র প্রদর্শনশালায় প্রদর্শনীতে শতবর্ষে শ্রদ্ধা জানানো হবে প্রদীপ কুমার, গুরু দত্ত, সন্তোষ দত্ত, স্যামুয়েল ওল্টম্যান, রিচার্ড বার্টন, সাম পিচকিনপা এবং ওজিসিচ হ্যাসকে। এছাড়াও প্রদর্শনীতে ফোকাস দেশ পোল্যান্ডের ছবির পোস্টার এবং এন্ড্রোজাজ পোজস্কির আঁকা ছবির প্রদর্শনী হবে গগনেন্দ্র প্রদর্শনশালার দ্বিতীয় তলে।
এবারের সত্যজিৎ রায় স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হবে ৭ নভেম্বর। এই অনুষ্ঠানে শিশির মঞ্চে বক্তব্য রাখবেন 'শোলে' ছবি খ্যাত পরিচালক রমেশ সিপ্পি।
এছাড়াও প্রতিদিনই চলচ্চিত্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে থাকছে সেমিনার। এবারে মোট ২০ টি প্রেক্ষাগৃহে উৎসবের ছবি দেখা যাবে।
এবারও প্রতিযোগিতামূলক বিভাগ থাকছে ছটি। ১৪টি ছবি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভাগ, ১৪টি ছবি নিয়ে ভারতীয় বিভাগ, ৯টি ছবি নিয়ে এশিয়ান সিলেট নেটপ্যাক বিভাগ, ৭টি ছবি থাকবে বাংলা প্যানোরামা বিভাগে। এ ছাড়াও থাকছে ২৯টি ছবি নিয়ে তথ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবির বিভাগ। এই সব কটি বিভাগের সেরা ছবি পাবে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ট্রফি এবং অর্থমূল্য। এছাড়া এশিয়ার সেরা ছবির জন্য থাকছে নেটপ্যাক পুরস্কার। প্রতিযোগিতা বিভাগ ছাড়াও বর্ডার, শরণার্থী এবং মাইগ্রেশন নিয়ে দেখানো হবে ৯টি ছবি। এ বছরে মুক্তি পাওয়া আন্তর্জাতিক ১৪ টি সেরা ছবি দেখানো হবে সিনেমা ইন্টারন্যাশনাল বিভাগে।
পরিবেশের উপরে থাকছে চারটি ছবি, খেলার উপরে ৩টি ছবি। রেস্টোর্ড ক্লাসিক বিভাগে থাকছে 'অরণ্যের দিনরাত্রি' সহ তিনটি ছবি। অপ্রচলিত ভারতীয় ভাষার ৮টি ছবিও দেখানো হবে এই বছর। প্রতিদিন সন্ধ্যায় একতারা মঞ্চে বসবে সিনে আড্ডা। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ভাবনায় গানে গানে সিনেমা শীর্ষক ছবির গানের সহ বিভিন্ন শিল্পীর গান উপস্থাপন করা হবে।
উৎসবের ক'টা দিন কলকাতা শহর কার্যত চাঁদের হাটে পরিণত হবে। বিদেশি অতিথিদের পাশাপাশি থাকবেন দেশের খ্যাতনামা চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বরা। ১৩ নভেম্বর সব বিভাগের সেরা ছবির নাম ঘোষণা করা হবে রবীন্দ্র সদন মঞ্চ থেকে, উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে। ওই দিন দুপুরে পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের শতবর্ষ উপলক্ষে সম্মানিত করা হবে তাঁর ছবির কলাকুশলী, টেকনিশিয়ান এবং ছাত্রদের। উৎসবে প্রতিদিন প্রকাশিত হবে সুদৃশ্য বুলেটিন, থাকবে উৎসবের খবর ও ছবি।
