টেলিভিশন অভিনেত্রী শ্বেতা তিওয়ারি আজ ৪৪ বছরেও দারুণ ফিট। এক সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর ফিটনেস এবং প্রিয় খাবার সম্পর্কে কথা বলেছিলেন। আশ্চর্যের বিষয়, তাঁর প্রিয় খাবারের তালিকায় এমন একটি পদও রয়েছে, যা একসময় মোগল সম্রাটদেরও প্রিয় ছিল। শ্বেতা জানিয়েছেন, নানা ধরনের সবজির সঙ্গে তৈরি খিচুড়ি তাঁর সবচেয়ে প্রিয় খাবার। বিশেষত স্যুপের মতো পাতলা খিচুড়ি তিনি খুব পছন্দ করেন।

খিচুড়ি ভারতের সবচেয়ে পুরনো খাবারের মধ্যে একটি। বিশিষ্ট শেফ হরপাল সিং সোকি বলেন, “খিচুড়ি ভারতের প্রাচীনতম খাবার, যার উল্লেখ দ্বিতীয় শতাব্দীর নথিতেও পাওয়া যায়।”

শেফের মতে, খিচুড়ি শুধু সাধারণ মানুষের নয়, মোগল সম্রাটদেরও পছন্দের খাদ্য ছিল। সম্রাট আকবর এবং তাঁর পুত্র জাহাঙ্গির দু’জনেই খিচুড়ির ভক্ত ছিলেন। এমনকি এর উল্লেখ আইন-ই-আকবরি বইতেও পাওয়া যায়।

সাধারণত মনে করা হয়, ভারতের মোগল শাসকেরা মাংসাশী খাবারই বেশি পছন্দ করতেন। কিন্তু ইতিহাসবিদদের মতে, তাঁদের রান্নাঘরও ভারতীয় প্রভাবের অধীনে ছিল। ফলে লাড্ডু, পুরি এবং খিচুড়ির মতো দেশীয় খাবারও তাঁদের রাজরন্ধনে জায়গা করে নেয়।

জানা যায়, আকবরের পুত্র জাহাঙ্গির পিস্তাবাদাম এবং কিশমিশ দিয়ে সাজানো মশলাদার খিচুড়ি পছন্দ করতেন। অপরদিকে, সরল জীবনযাপন এবং কঠোর স্বভাবের জন্য পরিচিত ঔরঙ্গজেবের প্রিয় ছিল আলমগিরি খিচুড়ি, যাতে মাছ এবং সেদ্ধ ডিম যোগ করা হতো। ধীরে ধীরে এটি রমজানের একটি বিশেষ পদে পরিণত হয়।

খিচুড়ির খ্যাতি শুধু ভারতে সীমাবদ্ধ ছিল না। দশম শতাব্দীর মরক্কোর এক পর্যটকের ভ্রমণবৃত্তান্তে চাল এবং মুগডাল দিয়ে তৈরি খিচুড়ির উল্লেখ রয়েছে। পঞ্চদশ শতাব্দীর নথিতেও এর বর্ণনা পাওয়া যায়, যা প্রমাণ করে খিচুড়ির ঐতিহ্য কতটা প্রাচীন।

শেফ সোকির কথায়, “যদিও খিচুড়ি মূলত চাল ও ডাল দিয়ে তৈরি হয়, তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর ভিন্ন রূপ দেখা যায়। মুম্বইয়ের রেস্তোরাঁগুলিতে আবার এর নানা অভিনব সংস্করণ পাওয়া যায়। আমি একে ডিটক্স ফুড বলব না, তবে এটি খুবই হালকা ও সহজপাচ্য।”

খিচুড়ির উল্লেখ প্রাচীন বৈদিক গ্রন্থ যজুর্বেদ-এও রয়েছে। সেখানে একে মিশ্রান্ন বলা হয়েছে। কারণ এটি চাল, ডাল এবং কখনও কখনও সবজির মিশ্রণে তৈরি হয়। ধারণা করা হয়, খিচুড়ির ইতিহাস প্রায় ৩৫০০ বছরের পুরনো।

মোগলরা খিচুড়িকে এতটাই ভালবাসতেন যে একসময় এটি রাজকীয় খাদ্যে পরিণত হয়। আয়ুর্বেদেও একে ‘সাত্ত্বিক আহার ’ বলা হয়—সহজপাচ্য, শরীরকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখে এবং মনকে শান্ত করে এমন এক নিখুঁত খাবার হিসাবে।