সংবাদ সংস্থা মুম্বই: ‘১০২ নট আউট’— ছবিতে অমিতাভ বচ্চন ও ঋষি কাপুর একসঙ্গে কাজ করেছিলেন। সেই শুটিংয়ের নেপথ্যের বহু অজানা কাহিনি এবার সামনে আনলেন পরিচালক উমেশ শুক্লা। এক পডকাস্টে তিনি জানান, কেমন ছিল এই দুই কিংবদন্তির সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা, পরস্পরের ব্যাপারে তাঁদের পারস্পরিক শ্রদ্ধা, অভিনয়ের প্রতি নিষ্ঠা এবং সেই আবেগঘন মুহূর্ত, যা আজও উজ্জ্বল তাঁর স্মৃতিতে।

 

উমেশ বলেন, “দুজন একেবারে বিপরীত ধাঁচের অভিনেতা—ঋষিজি ছিলেন একেবারে স্বতঃস্ফূর্ত আর বচ্চনসাহেব পুরোদস্তুর মেথড অ্যাক্টর। কিন্তু যখন ওঁরা একসঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করলেন, তখন বোঝা গেল কীভাবে আলাদা আলাদা স্টাইল মিলে তৈরি করতে পারে ম্যাজিক।”এই ছবি নিয়ে একবার ওয়ার্কশপের প্রসঙ্গে উমেশ বলেন, “বচ্চনজি তো সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু ঋষিজি প্রথমে বললেন, ‘স্ক্রিপ্ট হাতে পেলেই তো অভিনয় করা যায়।’ আমি তখন বললাম বচ্চনজি ওয়ার্কশপ করবেন, আর তা শুনেই চিন্টুজি সম্মতি দেন। সেটা থেকেই বোঝা যায় উনি অমিতাভজিকে কতটা শ্রদ্ধা করতেন।”

 

ছবিতে দুই অভিনেতাকেই গুজরাটি চরিত্রে দেখা গিয়েছিল। উমেশ বললেন, “আমি বলেছিলাম, গুজরাতিদের মতোই যেন শুটিং সেটে কেউ চটি না পরে। ক্লোজ শটে অনুমতি দিলেও ওঁরা কেউ স্লিপার পরতেন না—এতটাই ডিসিপ্লিনড!”

 

ঋষি কাপুরকে নিয়ে এক মজার ঘটনা বলেন উমেশ, “চিন্টুজি দ্বিতীয় টেক একদমই পছন্দ করতেন না। প্রথম টেকেই বলতেন, ‘এইটাই সেরা।’ দ্বিতীয়বার শুটিং করতে গেলে পরিচালককে প্রশ্ন করতেন, ‘দ্বিতীয় বার কেন? আপনি তো পরিচালক, আপনি জানেন তো?’ যদি কারণ ঠিকঠাক পেতেন, তবেই রাজি হতেন। আমি আগে ‘অল ইজ ওয়েল’-এ ওঁর সঙ্গে কাজ করেছিলাম, তাই আমার সঙ্গে সম্পর্ক ভাল ছিল।”

 

 

“অমিতাভজি শুটিং শেষ হওয়ার পরেও ফোন করতেন—‘একটা দৃশ্যের শুট আবার নেওয়া যাবে?’—এই প্যাশন, এই পারফেকশনই ওঁকে ‘অমিতাভ বচ্চন’ বানিয়েছে,” বলেন উমেশ। সেই দিনটা ভুলতে পারেন না উমেশ… “একদিন ঋষিজি ডাবিং করতে এসেছিলেন। আগে একটা দৃশ্যদেখে নিলেন, যেটাতে বচ্চনসাহেবের আবেগপূর্ণ অভিনয় ছিল। সেই দৃশ্য দেখে কেঁদে ফেললেন চিন্টুজি। বললেন, ‘আমি ভাবতাম ছবিতে আমি খুব ভাল কাজ করেছি, কিন্তু ওর এই পারফরম্যান্স দেখে মনে হচ্ছে আমি কিছুই করিনি।’ এরপর ডাবিং না করে বাড়ি চলে যান এবং বচ্চনজিকে একটা বিশাল ফুলের তোড়া পাঠান। ওই মুহূর্তেই আমি বুঝেছিলাম—এই শ্রদ্ধা, এই ভালবাসা সত্যি বিরল।”

 

এই কাহিনিগুলো শুধু সিনেমার নয়—এগুলো একেকটা কিংবদন্তির ছোঁয়া, অভিনয়ের প্রতি তাঁদের নিষ্ঠা, আর একে অপরের প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধার সাক্ষ্য। ‘১০২ নট আউট’ শুধু একটা ছবি নয়, তা হল এক অনবদ্য অধ্যায়—ঋষি-বচ্চনের বন্ধনের এক জীবন্ত দলিল।