ধর্মীয় বক্তা অনিরুদ্ধাচার্য মহারাজ তাঁর সাম্প্রতিক এক ধর্মসভায় এমন এক বিতর্কিত মন্তব্য করেন, যা শুনে ক্ষুব্ধ দেশের বহু মানুষ। লিভ-ইন সম্পর্কের প্রসঙ্গে তিনি বলেন— “ছেলেরা ২৫ বছরের মেয়েদের নিয়ে আসে, যারা ৪–৫ জায়গায় মুখ মেরে আসে।”এই বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় প্রবল বিতর্ক। অনেকে এই মন্তব্যকে নারীবিদ্বেষী, অশালীন এবং অসম্মানজনক বলে আখ্যা দিয়েছেন।

 

কিন্তু এই বিতর্কের মধ্যে দাঁড়িয়ে যিনি সবচেয়ে স্পষ্ট, নির্ভীক ও বিস্ফোরক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, তিনি খুশবু পাটানি— বলিউড অভিনেত্রী দিশা পাটানির দিদি তথা প্রাক্তন সেনা আধিকারিক।

আরও পড়ুন: ভোর ৬টায় মহেশ ভাটকে ফোন, এরপর কোন টোটকায় সফল ‘সইয়ারা’র সবচেয়ে গা শিউরে ওঠা দৃশ্য?

 

“এটা যদি আমার সামনে বলত, আমি ওকে বুঝিয়ে দিতাম মুখ মারা মানে কী!”— রগে ফেটে পড়লেন খুশবু পাটানি। একটি ইনস্টাগ্রাম ভিডিওয় খুশবু বলেন— “যদি এই লোকটা আমার সামনে এসে এই কথা বলত, আমি ওকে শেখাতাম মুখ মারা আসলে কাকে বলে! এরা দেশের শত্রু। সমাজের সব নপুংশক এই হারামিকে  অনুসরণ করে।”তিনি আরও বলেন—“সে বলছে মেয়েরা যারা লিভ -ইনে থাকে তারা মুখ মেরে আসে। কিন্তু ছেলেরাও তো লিভ-ইনে থাকে, সেটা বলল না কেন?  খুশবু স্পষ্ট ভাষায় প্রশ্ন তোলেন—“মেয়েরা কি একা লিভ-ইনে থাকে? ছেলেরাও তো থাকে! তাহলে শুধু মেয়েদের কেন দোষ দেওয়া হচ্ছে?” তিনি জোর দিয়ে বলেন, লাইভ-ইনে থাকা নিজস্ব পছন্দ, সেটা নিয়ে অপমান করার অধিকার কারও নেই।মেয়েদের দিকে আঙুল তোলার এত সাহস কোথা থেকে আসে?”

 


প্রসঙ্গত, উত্তরপ্রদেশের বেয়ারেলির বাসিন্দা খুশবু পাটানি একজন প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট। বিবিএল (BBL) পাবলিক স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে ইলেকট্রনিক্স ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন ডিআইটি স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং (DIT School of Engineering) থেকে। এরপর সরকারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। দিশা পাটানি বহুবার নিজের দিদিকে নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেছেন। একবার ইনস্টাগ্রামে তাঁর সেনা পোশাক পরা ছবি শেয়ার করে লিখেছিলেন—“আমার ওয়ান্ডার ওম্যান!”

 

অভিনেত্রী দিশা পটানির দিদি, খুশবু পটানি—একসময়ের ভারতীয় সেবাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট, বর্তমানে একজন ফিটনেস কোচ। আর এবার তাঁর একটি মানবিক কাজে মুগ্ধ গোটা দেশ।এক সময়ে লেফটেন্যান্ট পদে কর্মরত এই সেনা-অফিসার গত এপ্রিলের এক রবিবার সকালে দেখালেন, আসল নায়ক আসলে পর্দায় নয়, সমাজের ভেতরেই বাস করে।


নিজের ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও শেয়ার করেন খুশবু, যেখানে দেখা যায়— উত্তর প্রদেশের বেরেলি অঞ্চলের একটি একটি পোড়ো ঝুপড়িতে পড়ে রয়েছে এক সদ্যোজাত কন্যাশিশু। সহজ করে বললে, ফেলে দেওয়া হয়েছে!  খুশবু নিজে ছুটে গিয়ে শিশুটিকে কোলে তুলে নেন, তার কান্না থামাতে স্নেহভরা গলায় বলেন, “ভয় পাস না, তোর দেখভালের ব্যবস্থা আমি করব।”ভিডিওর শেষে ক্যামেরাম্যানকে বলেন, "এই বাচ্চার মুখটা ভালো করে দেখাও। যদি কেউ বেরেলির বাসিন্দা হয়ে থাকেন আর শিশুটিকে চেনেন, তাহলে বলুন—এই নিষ্পাপ প্রাণটাকে কে ফেলে গেল? এমন বাবা-মায়ের উপর ঘৃণা হওয়া উচিত।" ভিডিওটির ক্যাপশনে খুশবু লেখেন:


“যাকে ঈশ্বর রক্ষা করেন, তাকে কেউ মারতে পারে না। আশা করি প্রশাসন যথাযথ নিয়ম মেনে তার দায়িত্ব নেবে। আমি নিশ্চিত করব এই মেয়েটির জীবন এখান থেকেই বদলে যায়। কবে পর্যন্ত চলবে এসব? দয়া করে, এই দেশের প্রতিটি কন্যাশিশু যেন নিরাপদে বড় হতে পারে—এইটাই একমাত্র প্রার্থনা।”