বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় দম্পতি ঋষি ও নীতু কাপুরের সন্তান রণবীর কাপুরের মুখ থেকেই উঠে এলো এক অজানা গল্প—তাঁর শৈশব, উদ্বেগ, দায়িত্ববোধ ও মা-বাবার সম্পর্কের ছায়া নিয়ে। এক সাক্ষাৎকারে রণবীর নিজেকে এতটাই খুলে বললেন, যেন এক নতুনভাবে আলো পড়ল উঠল তাঁর কাটানো 'অস্বাভাবিক' ছোটবেলার উপর!  

 

শৈশব মোটেও মজাদার হয়নি — ভয়, উদ্বেগ আর অস্থিরতার ভিতর দিন কাটাতেন ঋষি-পুত্র।  ওই সাক্ষাৎকারে রণবীর বললেন, “যারা এখনও  জোর গলায়, চিৎকার করে কথা বলেন আর তা যদি আমার সামনে হয়...আমার এখনও তীব্র অস্বস্তি হয়।  আসলে, শৈশব থেকেই এটা আমার মধ্যে থেকে গিয়েছে। কারণ মা-বাবার জীবনটা ছিল বিশৃঙ্খল। আমি যে দাঙ্গাবাজ ছবি বা হুমকি-ভরা দৃশ্য দেখার জন্য বন্ধুদলের মধ্যে সবার আগে তৈরি হইনি, তার পেছনে এই  উদ্বেগের হাতও ব্যাপক”।

 

এরপর অভিনেতা সামনে আনলেন এমন কিছু স্মৃতি যা রীতিমতো ভাবাবে যে কাউকে। ঘরের মধ্যে চলতে থাকা চরম অশান্তির  মধ্যে ছোট্ট রণবীর তাঁর শান্তি খুঁজে পেতেন ঘরের নীচের সিঁড়িতে। অভিনেতার কথায়, “আমরা একটি বড় বাংলোতে  থাকতাম। আমি প্রায় সময় বাথরুমে অথবা সিঁড়িতে তলায় জায়গায় গিয়ে বসতাম, মা-বাবার ঝগড়ার সাংঘাতিক শব্দগুলো শুনে, পরে আবার উঠে ঘরে যেতাম।” এগুলো শুধু সাধারণ দৃশ্য নয়, বরং এক দীর্ঘায়িত উদ্বেগবহুল যাত্রার অংশ ছিল—যা রণবীরের ব্যক্তিত্ব তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে।

 

রণবীর জানান, ছোট বেলার এক সময় মুক্তি, সান্ত্বনা ও সান্ত্বনার জন্য মা তাঁকে নিজের কথাগুলো একান্তভাবে বলতেন—“আমার কোনও জায়গা নেই, তুমি যা বলবে করব”—এমন স্বাধীনতায় ভরা সম্পর্ক গড়ে ওঠেছিল মা-ছেলে মধ্যে। কিন্তু বাবার সঙ্গে রণবীরের বন্ধুত্ব তৈরি হয়নি। বরং তৈরি হয়েছে এক যুগের শীতল সম্পর্কের পোক্ত সেতু। “বাবা  যে আবেগপ্রবণ ছিলেন না, সেটা আমি বুঝতে পারিনি। আমি তাঁর বক্তব্য শুনতে পারতাম না... হয়ত তিনি নিজেই বলতে চাইতেন  না”- বক্তব্য অভিনেতার। এই তফাৎ, অন্তরে গভীর ছাপ ফেলেছিল রণবীরের।

 

রণবীরের জীবনে এসে আলোয় আসেন আলিয়া ভাট—মা-বাবার ঝগড়াকে ফেলে, পরস্পরের মধ্যে শান্তি ও সমর্থন খুঁজে নেন তাঁরা। তিনি গভীর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বললেন, “জানেন, একদম অন্যরকম ছিল। গত ৩০ বছরের আচার-আচরণ একসঙ্গে বদলানো সহজ নয়, তবুও আমি চেষ্টা করেছি।” রণবীরের কথায়, তিনি চেয়েছেন সুখী সন্তান তৈরি করতে—একনিষ্ঠ, স্থির ও আবেগপ্রবণ পিতা হতে। এমন মানুষটার কাছে নিজেকে অপ্রাপ্য মনে করলেও রণবীর জানালেন, আলিয়ার শান্তচিত্তে দেওয়া সেই মুহূর্তগুলোই তার শৈশবের ভয়কে ধাপে ধাপে “তুচ্ছ” করে তুলেছে।

 

রণবীর বলেন, মা-বাবার ঝগড়ার যন্ত্রণা তাঁকে ‘যে বাবা হতে চাইনি’ সেই ছায়া থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করতে কাজে লাগিয়েছে—তিনি চান “স্বস্তির রোল মডেল” হতে। “আমি এখন নিজেকে প্রশ্ন করি—আমি কি আলিয়াকে ভাল রাখার মতো কিছু করেছি? হয়তো নয়, কিন্তু তিনি এমন একজন, যিনি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেন আমাকে পুরোটা শান্ত করতে।” রণবীরের  ভাষায়, আজ তাঁর চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার এবং ব্যক্তিগত জীবনের মর্যাদা—সব কিছু তৈরী হয়েছে সেই অপূরণীয় শৈশব ও বেদনার অভিজ্ঞতা থেকে আত্মপ্রকাশ করে।

 

রণবীর কাপুর শুধু একজন মেধাবী অভিনেতা নন, তাঁর জীবনের আবেগ ও শান্তি—সবই মিশে রয়েছে তাঁর শৈশবের অস্থিরতার খোলসে। এই দৃঢ় অন্তর্মুখী যাত্রা আজ তাঁকে এনে দিয়েছে শীতল দৃষ্টিভঙ্গি, যা অভিনয় ও মানবিকতায় ফুটে ওঠে।

 

রণবীরের মনের কথা, শৈশবের অস্থিরতার কথা শোনার পর অভিনেতাকে মনে হয় যেন এক জীবন্ত গল্প, যেখানে উত্তেজনা, আবেগ ও মুক্তির অনুভব একযোগে কাজ করছে— আর তার সঙ্গে একজন মানুষ, একজন বাবার নিজেকে খুঁজে পাওয়ার যাত্রা।