২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণ নিয়ে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরব হবেন, সে জল্পনা ছিলই। হয়েছিলও তাই। বক্তব্যের অনেকটা অংশ জুড়েই মমতা নিজের ভাষাকে আগলে রাখার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন একের পর এক। বাংলায় সব জাতিদের আপন করা হয়‌। তাঁদের কাজের সম্মান দেওয়া হয়।এমনই বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।‌ বাঙালিদের মাঝে কাজ করতে অবাঙালি টলিউড তারকাদের কী অসুবিধা হয়েছে কোনও? কী বলছেন তাঁরা? 

 


আজকাল ডট ইন-এর প্রশ্নে অভিনেতা ভরত কল বলেন, "এই ইন্ডাস্ট্রিতে বহু বছর কাজ করছি। আমিই বোধহয় সেই সময় প্রথম অভিনেতা ছিলাম যে অবাঙালি। আমার পর রাজেশ (রাজেশ শর্মা) এসেছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনওদিন ভাষা কিংবা জাতির জন্য বাধার মুখে পড়িনি। এখানে কাজ করতে গিয়ে আর্থিক অসুবিধার মধ্যে অভিনেতারা পড়তে পারেন, তবে জাতি-ধর্মের ভেদাভেদ দেখিনি।"

 

তিয়াশা লেপচার কথায়, "কাজই শুরু করেছি এই ইন্ডাস্ট্রির হাত ধরে। আমার বড় হয়ে ওঠা গোবরডাঙায়। মফস্বলের মেয়ে বলেও কোনওদিন অসুবিধায় পড়িনি। ঠাকুরদা ছিলেন কালিম্পং-এর বাসিন্দা। আমার জন্ম পশ্চিমবঙ্গেই। তাই এখানে কাজের পরিসরটা আমার চোখে অনেক বেশি।"

 

আরও পড়ুন: 'কনে দেখা আলো'য় নতুন বউয়ের সাজে নন্দিনী-সাইনা, প্রকাশ্যে ধারাবাহিকের প্রথম ঝলক

 

অভিনেত্রী পল্লবী শর্মার কথায়, "আমার পরিবার বাঙালিই। পদবি শুনে অনেকে ভাবেন আমরা অবাঙালি। তবে কাজের অসুবিধা তো কোন ছাড়, বাংলায় কাজ করতে গিয়ে কখনও ভেবেও দেখেনি এমনটা।"

 

ওম সাহানি বলেন, "আমি তো ছোট থেকে এখানেই বড় হয়েছি। কাজও করেছি এখানেই। পরিচিতিও পেয়েছি টলিউডেই। তাই অবাঙালির পরিচয়টা বোধহয় এখন নিজেই ভুলে গিয়েছি। টলিউডে আমার স্ট্রাগলটা অন্যরকম। কিন্তু অবাঙালি বলে বাধা আসেনি কখনও।"

 


প্রসঙ্গত, ২১-এর মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও তুলনায় টেনে আনলেন অন্য রাজ্যের প্রসঙ্গ। কখনও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম না করেই কটাক্ষ করে বোঝালেন, বাংলা ভাষায় যাঁরা কথা বলেন, ভিন রাজ্যে তাঁদের উপর আক্রমণ করে, টেলি প্রমটার থেকে দু' লাইন বাংলা লিখে এনে এখানে বাংলা ভাষায় কথা বললে, আদতে বাংলায় ভোট পাওয়া যাবে না।

 

আরও পড়ুন: গায়ক নয়, এবার সঞ্চালকের ভূমিকায় অনীক ধর! নতুন রিয়্যালিটি শো-এর মঞ্চে বিচারকের আসনে থাকবেন কারা? 

 

বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণ নিয়ে একুশের মঞ্চ থেকে বারবার সরব হলেন তিনি। বক্তব্যের মাঝেই কোচবিহারের উত্তমকে মঞ্চে সকলের সামনে দেখালেন, যাঁর কাছে এনআরসি নোটিস এসেছে, তাও ভিনরাজ্য অসম থেকে। মমতা তাঁকে সামনে এনে জবাব চাইলেন বিজেপির কাছে। এদিনও ফের বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণের বিরোধীতায় গর্জে ওঠেন মঞ্চ থেকে। বলেন, ‘বাংলা ভাষার উপর চলছে বিরাট সন্ত্রাস। বাংলা ভাষায় কথা বলা নাকি যাবে না। কে মাছ খাবে, কে মাংস খাবে,  কে ডিম খাবে, সব ওরা ঠিক করে দিচ্ছেন। এত সহজ নয়। বাংলা এসব মানবে না। সব মানুষের অধিকার এখানে সংরক্ষিত হবে।'

মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের সমর্থনে টলি তারকারাও। বাঙালি-অবাঙালির পরিচয় যে কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি তাঁদের কাজের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার পথে, তা যেন আরও একবার প্রমাণ করলেন তাঁরা।