বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম কিংবদন্তি পরিচালক ছিলেন তফন সিংহ, যিনি ৪৭টির বেশি ছবি পরিচালনা করেছিলেন।সিনেমা-রসিকদের মতে, তার মধ্যে বেশিরভাগই প্রায় কাল্টের পর্যায়ে। তপন সিংহ পরিচালনা করেছেন দিলীপ কুমারের মতো অভিনেতাকেও 'সাগিনা মাহাতো' ছবিতে! তাঁর কাজগুলোতে গল্প, চরিত্র এবং আবহের মধ্যে স্বতন্ত্রতা লক্ষ্য করা যায়, যা তাঁকে অন্যান্য পরিচালকদের থেকে আলাদা করেছে। অভিনেতা অর্জুন চক্রবর্তী তাঁর সঙ্গে একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন, যার মধ্যে 'হুইল চেয়ার' ছবির নাম অগ্রগণ্য।

বৃহস্পতিবার, এই কিংবদন্তি পরিচালকের জন্মবার্ষিকীতে তাঁকে নিয়ে ফেসবুকে একটা নাতিদীর্ঘ পোস্ট করলেন অর্জুন চক্রবর্তী। যে লেখায় উঠে এল প্রয়াত পরিচালকের নানান অজানা দিক, খুঁটিনাটি বিষয়।

অর্জুন চক্রবর্তী লিখেছেন, "উনি শুধু মাত্র আমার অনেক পরিচালকদের মধ্যে একজন ছিলেন না।
ওনার সাথে আমার সম্পর্কটা ঠিক কী, এখনো পর্যন্ত ঠাওর করে উঠতে পারিনি।
তবে মনে হতো উনি আমার মনে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গা দখল করে আছেন।

ওনার সাথে ৫টি ছবিতে কাজ করা ছাড়াও আরো অনেক বেশি কিছু ছিল যা ঠিক শব্দের গন্ডি তে আনা যাবে না।
ঘন্টার পর ঘন্টা ওনার সান্নিধ্য (আড্ডা বলতে দ্বিধা), সেখানে থাকত সিনেমা নিয়ে কথা, ঘটনা, দুর্ঘটনা, অভিনয় পদ্ধতি, নিজেকে নিয়ে বিশ্লেষণ আর আমার জন্মস্থানের প্রতি অদম্য জানার আগ্রহ।

কোথায় যেন মনে হতো উনি আমার মধ্যে নিজের কিছু মিল খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছেন ( আমরা দুজনেই প্রবাসী বাংগালী)
উনি ভাগলপুর আর আমার রাজস্থানে জন্ম।
একদিন সকালের দিকে গেলাম, দেখি চুপচাপ (এমনিতেই কম কথার মানুষ) বসে, আমার দিকে কিছুক্ষন একদৃষ্টে তাকিয়ে আস্তে করে বললেন " তোমার সাথে দশ বছর আগে দেখা হয়নি কেন? কয়েকটি ভালো কাজ করতাম"।
কী বলব ভাবছি তার আগেই,
" তোমার চেহারায় দুটো জিনিস একসাথে অনায়াসে দেখানো যায়, you have got a mobile face যা খুব একটা চোখে পড়ে না you can be nice at the same time nasty"!
নিজের কানে শোনা, ফোনে স্বনামধন্য দিলিপ কুমার কাকুতি মিনতি করছেন,
"তপন দা তুমি শুধু তোমার স্ক্রিপ্ট আর বলাই (ওনার প্রধান সহকারী) কে নিয়ে মুম্বাই চলে এসো, বাকি সব দায়িত্ব আমার"!
উনি মিটি মিটি হাসছেন, কোনো অযথা উচ্ছাস বা উত্তেজনার রেশ মাত্র নেই।
খুব মনে পড়ে। মাঝে মাঝে হতাশা প্রকাশ করে বলতেন "এই বাংলার কিছু হবে না, দর্শকদের আজে বাজে ছবি দেখিয়ে ভোঁতা করে দেওয়া হচ্ছে, যাত্রা, নাটক, খেউড়,সব হচ্ছে শুধু সিনেমা ছাড়া , একটা হে হে বাবু কালচার ঢুকে গেছে বাংগালী সংষ্কৃতির মধ্যে। একজন পরিচালকের ছবি বলে দেয় সেই পরিচালক কী চরিত্রের মানুষ। এত লোভ, এত মোসাহেবি মানসিকতা নিয়ে ভালো ছবি হয় নাকি"!
অনেক কথা, প্রচুর স্মৃতি। ভাবছি ওনাকে নিয়ে লিখবো। হয়তো একটু বড় হবে লেখা টা। কিন্তু কেন জানিনা ভীষণ ভাবে বলতে ইচ্ছে করে যে এমন সিনেমার মানুষ এই পৃথিবীতে খুঁজে বের করতে পারবেন যিনি ৪৭ টি ছবি করেছেন অথচ একটি গল্পের সাথে অন্য গল্পের মিল নেই! পারবেন? কিন্তু এই বাংলার মাটিতে উনি নিজের যোগ্য জেয়গা পেলেন না। এটা কার দুর্ভাগ্য বলা খুব মুশকিল কারণ উনি এই নিয়ে কোনো দিন ক্ষোভ বা দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে মনে পড়ছেনা।
আজকের দিন উনি জন্মেছিলেন।
ভালো থাকবেন দাদা।
Happy birthday Dada, I wish you enough.
ঠিক করেছি আপনাকে নিয়ে লিখবো আর নাম দেবো।
To Sir With Love.
*অর্জুন*
(পোস্টের বানান অপরিবর্তিত রাখা হল।)
