দক্ষ অভিনেতা। দুই বাংলায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। ওপার বাংলার সেরা অভিনেতাদের মধ্যে প্রথম সারিতেই উঠে আসে তাঁর নাম। তাঁর ভক্তের সংখ্যাও ঈর্ষণীয়। তিনি, মোশারফ করিম। ওপার বাংলার আরও এক বিপুল জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী যাঁর সম্বন্ধে বলেন, “মোশারফ করিমকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নাই। সে সত্যিকারের জাত অভিনেতা।” আজ, ২২ আগস্ট, 'মহানগর'-এর সেই ‘ওসি হারুন’-এর জন্মদিন।এদিন ৫৩ তম জন্মদিনের কেক কাটবেন এই জাত অভিনেতা । পর্দার বাইরে কেমন মানুষ মোশারফ? সত্যিই কি অত হাসিখুশি না কি স্বভাবগম্ভীর? প্রচণ্ড রেগে গেলেই বা কী করেন তিনি? সব নিয়ে আজকাল ডট ইন-এর সঙ্গে খোলামেলা আড্ডা দিলেন বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ধারাবাহিক পরিচালক সাজিন আহমেদ বাবু। 

 

গত ১৫ বছর ধরে মোশারফ করিমের সঙ্গে কাজ করছেন বাবু। ‘উচ্চতর ভালবাসা’, ‘ভারপ্রাপ্ত বউ’, ‘কিড সোয়ামান’, ঘরের শত্রু বিভীষণ’, ‘স্বভাবদোষে’-এর মতো একের পর এক জনপ্রিয় ধারাবাহিকে তাঁর পরিচালনায় কাজ করেছেন মোশারফ। বাংলাদেশে যাকে বলে নাটক।

পরিচালকের কথায়, "মোশরফ করিম যত বড় শিল্পী, তার থেকেও ভাল মানুষ। মানুষ হিসেবে তিনি আরও দুর্দান্ত। ওঁর সঙ্গে এত কাজ করেছি, তাই বলতে পারছি অভিনেতা থেকে ব্যক্তি মোশারফকে আমার বেশি পছন্দ। সব বয়সের মানুষের সঙ্গে দিব্যি মিশে যেতে পারেন। এত বছরে কখনও দেখিনি ভাই কাউকে অপমান করছেন, তাচ্ছিল্য করছেন। হয়ত ভীষণ রেগে গিয়েছেন কারও উপরে, তবুও তাঁকে অপমান করতে পারেন না। একেবারে চুপ করে যান তখন। আর এও দেখেছি, ওঁর উপরে কেউ রাগ করে থাকতে পারে না। এত প্রাণবন্ত! মোশারফ ভাই সেটে থাকা মানে পুরো ইউনিট টগবগে এনার্জি নিয়ে ছোটে। আবার হয়ত কারও রাগ হল মোশারফ ভাইয়ের উপরে, কিন্তু যেই উনি এক গাল  হেসে মুখ খুলবেন, অমনি সব রাগ উবে যায়। এরকম মানুষ মোশারফ করিম... "

 

 

 

সামান্য থেমে  ‘অশিক্ষিত এমবি’ ধারাবাহিকের এই পরিচালক বলে চললেন, “অভিনেতা হিসেবে মোশারফ করিম কত দক্ষ সেকথা আজ প্রমাণিত। আমি নতুন করে কী বলব? আমি একবার ওঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই যে, আপনি বছরের বেশিরভাগ সময়টাই ব্যস্ত থাকেন অভিনয় নিয়ে, কখনও বিরক্তি লাগে না? একঘেয়ে লাগে না?  জবাব পেয়েছিলাম, ‘না লাগে না একঘেয়ে। এক জীবনে এতগুলো চরিত্রে বাঁচতে পারছি, এত জীবনে প্রচুর জীবন যাপন করতে পারি, ক'জন পারে তা? ক’জন মানুষ এই সুযোগ পায়?’”

 

বাবু আরও বলেন, “পর্দায় যেরকম সবসময় মজার মজার কথা বলতে দেখা যায় তাঁকে, বাস্তবে সবসময় সেরকম তিনি বলেন না, সেটা বলাই বাহুল্য। বিস্তর পড়াশোনা করেছেন। জীবন নিয়ে, দর্শন নিয়ে মোশারফ ভাই চমৎকার কথা বলেন। মজা করেন অবশ্যই, তবে সেটা নীচু তারে... আসলে মোশারফ ভাইয়ের সঙ্গে এত বছর ধরে কাজ করেছি যে ওঁর পালসটা বুঝি। উনিও আমাকে খুব স্নেহ করেন। হয়ত আমাদের পড়াশোনা, পছন্দের বিষয়গুলো এক বলে সেটা আরও উত্তরোত্তর বেড়েছে। একটা উদাহরণ দিলে আরও ভাল করে বুঝবেন - একবার আমি ঢাকায় নিজের লেখালিখির কাজ করছি আর উনি তখন কক্সবাজারে সমুদ্রের ধরে শুটিং করছেন। হঠাৎ ফোন এল- 'আমার ভাল লাগছে না। টিকিট পাঠিয়ে দিচ্ছি, তুই এখানে সোজা চলে আয় ল্যাপটপ নিয়ে। তোর লেখালিখি কর। তারপর সেসব শেষে আড্ডাও মারব। এরকম আন্তরিক ডাক কি কেউ ফিরিয়ে দিতে পারে? চলে গেলাম এক সপ্তাহের জন্য। তা এরকম মানুষ হলেন মোশারফ করিম...প্রার্থনা করি, উনি সুস্থ থাকুন, ছবি-সিরিজ-নাটকে দুরন্ত সব চরিত্রে অভিনয় করতে থাকুক। আর আমরা আমরা তাঁর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে এই হানাহানির পৃথিবীতে কয়েক পশলা নিশ্চিন্তের আনন্দ খুঁজে পাই। ”