প্রয়াত জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী জুবিন গর্গের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অবশেষে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিল সিঙ্গাপুর পুলিশ ফোর্স (এসপিএফ)। ভারতের অনুরোধেই সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ এই রিপোর্ট এবং জুবিনের মৃত্যু সংক্রান্ত তাদের প্রাথমিক তদন্তের তথ্য হস্তান্তর করেছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে একটি দুর্ঘটনায়, জলে ডুবে এই অসমীয়া সঙ্গীত আইকনের মৃত্যু হয়।

 


জানা যায়, তিনি সেখানে একটি 'নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভাল'-এ গান গাওয়ার জন্য গিয়েছিলেন। এই আকস্মিক ও রহস্যজনক মৃত্যু ভারতে, বিশেষ করে অসমে ব্যাপক শোকের জন্ম দেয় এবং পুরো ঘটনাটি নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।

 


জুবিনের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে তদন্তে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় এসেছে। জুবিন গর্গের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মী এবং এক সহযোগীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় এক কোটি টাকা আর্থিক লেনদেন খুঁজে পেয়েছে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (এসআইটি)। এই বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন, যা গত চার-পাঁচ বছরে হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে জুবিনের মৃত্যুর সাথে এর কোনও যোগসূত্র আছে কিনা। তদন্তকারীরা এটিকে মামলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক-থ্রু হিসেবে দেখছেন।

 

জুবিন গর্গের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী নন্দেশ্বর বোরাহ এবং একজন সহযোগী 'বৈশ্য'-এর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে এই বিশাল অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও কিছু সূত্রে খবর, জুবিন গর্গ এই অর্থ তাঁর সহযোগীদের কাছে রেখেছিলেন গরিব বা অভাবী মানুষদের সাহায্য করার জন্য, এবং নেট ব্যাঙ্কিং-এর মাধ্যমে সেই টাকা বিতরণ করা হত। তবে, এসআইটি এই টাকার উৎস এবং প্রবাহের পথ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করছে।

 

 

আরও পড়ুন: রশ্মিকার সঙ্গে বাগদানের জল্পনার মাঝে ভয়ঙ্কর পথ দুর্ঘটনা বিজয়ের! এখন কেমন আছেন অভিনেতা?

 

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই মামলার আর্থিক দিকটি গভীরভাবে খতিয়ে দেখার জন্য এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং আয়কর দপ্তরকে অনুরোধ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবে। জুবিনের মৃত্যুতে আর্থিক অপরাধের এবং ইভেন্ট ম্যানেজার শ্যামকানু মোহন্তের অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগের ভিত্তিতে অসম পুলিশ ইতিমধ্যে একটি পৃথক তদন্ত শুরু করেছে। সিআইডি শ্যামকানু মহন্তের ২০ বছরের পুরনো আর্থিক কেলেঙ্কারিও খুঁজে পেয়েছে যখন তিনি একটি নন-ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থায় কর্মরত ছিলেন।

 

 

ইতিমধ্যে, এসআইটি এই মামলায় ইভেন্ট অর্গানাইজার শ্যামকানু মহন্ত এবং জুবিনের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা সহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও অন্যান্য গুরুতর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এসআইটি জুবিন গর্গের মোবাইল ফোন থেকে তথ্য উদ্ধার করেছে, যা তদন্তের জন্য অতিরিক্ত সূত্র দিয়েছে। তদন্তকারীরা বিশেষ করে সিঙ্গাপুর ভ্রমণের আগের মাসের সমস্ত আর্থিক লেনদেন এবং যোগাযোগের রেকর্ড খুঁটিয়ে দেখছেন, যাতে কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ না যায়।

 


এই মামলায় জুবিনের স্ত্রীও তাঁর স্বামীর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পুলিশকে ফিরিয়ে দিয়েছেন, যা নিয়েও নানা জল্পনা চলছে। সামগ্রিকভাবে, জুবিন গার্গের মৃত্যু নিয়ে তদন্তে আর্থিক লেনদেনের এই নতুন দিকটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা যোগ করেছে এবং মামলার রহস্য আরও বাড়িয়েছে।