রবিবার ভারতীয় সঙ্গীত জগতের কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকরের ৯৬তম জন্মদিন। যদিও তিনি এখন আর এই দুনিয়ায় নেই। তবুও তাঁর গানের জাদু, কণ্ঠের মাধুর্য আর সঙ্গীতসাধনা আজও কোটি মানুষের হৃদয়ে একইভাবে বেঁচে আছে। এই বিশেষ দিনে লতার ছোট বোন, প্রখ্যাত গায়িকা আশা ভোঁসলে একান্ত আলাপচারিতায় দিদির সঙ্গে কাটানো অমূল্য মুহূর্তগুলো মনে করে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
আশা ভোঁসলে জানান, 'লতাদিদি' শুধু তাঁর বড় বোনই ছিলেন না, ছিলেন মাতৃসম স্নেহময়ী অভিভাবক। তিনি বলেন, “আমাদের দু’জনের সম্পর্ক ছিল একেবারে বিশুদ্ধ। আমি ওঁকে ভীষণ মিস করি। ছোটবেলায় তিনি আমাকে কোলে নিয়ে ঘুরতেন, আমাকে কখনওই একা ছেড়ে যেতেন না। সেই শৈশবের স্মৃতিগুলো আজও চোখে ভাসে। দিদি ছিলেন আমাদের পরিবারের মেরুদণ্ড।”
লতা মঙ্গেশকর ও আশা ভোঁসলে এই দুই বোনের সম্পর্ক ছিল ভারতীয় সংগীতের ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়। যদিও তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনে অনেক ওঠাপড়া ছিল। তবুও সঙ্গীতের জগতে তাঁরা দু’জনেই নিজ নিজ জায়গায় অমর হয়ে আছেন। আশা বলেন, “আমাদের দিদি-বোনের সম্পর্ক কখনও বদলায়নি। দিদি ছিলেন সবসময় এক ধাপ উপরে, আমি তাঁর ছায়াতেই বড় হয়েছি।”

গত বছর প্রকাশিত হয় আশা ভোঁসলের আত্মজীবনী। সেখানে তিনি জীবনের নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, লতা মঙ্গেশকর ও তাঁর জীবনের ওপর যদি কোনও বায়োপিক তৈরি হয়, তবে কারা তাঁদের চরিত্রে অভিনয় করতে পারেন, তখন আশা এক চমকপ্রদ উত্তর দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “সত্যি বলতে কী, দিদি আর আমাকে নিজেকেই আবার জন্মাতে হবে, তাহলেই হয়তো সঠিকভাবে সেই চরিত্রে অভিনয় সম্ভব হবে। তবে বর্তমানের অভিনেত্রীদের মধ্যে কাজল, বিদ্যা বালান কিংবা তাবু হয়তো আমাদের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারবেন।”
লতা মঙ্গেশকরের জন্মদিনে আশার এই আবেগঘন স্মৃতিচারণ ভক্তদের চোখ ভিজিয়ে দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও আজ তাঁকে নিয়ে ভক্তরা স্মৃতিচারণ করছেন, তাঁর অমর গানগুলো শেয়ার করছেন। লতা মঙ্গেশকর ভারতীয় চলচ্চিত্র ও সঙ্গীতের এক অমূল্য সম্পদ। তাঁর কণ্ঠ ছাড়া হিন্দি চলচ্চিত্রের সোনালি যুগকে কল্পনাও করা যায় না। প্রায় ছ'দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি যে হাজারো গান উপহার দিয়েছেন, তা ভারতীয় সঙ্গীত ভাণ্ডারের এক অনন্য সম্পদ। অন্যদিকে আশা ভোঁসলেও তাঁর স্বতন্ত্র ও বহুমুখী প্রতিভা দিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন।
আজকের দিনে যখন লতা মঙ্গেশকরকে স্মরণ করা হচ্ছে, তখন আশা ভোঁসলের এই আবেগঘন কথা প্রমাণ করে যে, তাঁদের বোনের বন্ধন শুধু রক্তের ছিল না, ছিল এক অন্তরঙ্গ আত্মিক সম্পর্কের। দুই বোনের সেই সঙ্গীতযাত্রা শুধু ভারতীয় সংগীতের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেনি, লক্ষ লক্ষ শ্রোতার হৃদয়েও চিরকালের জন্য জায়গা করে নিয়েছে।
