আজকাল ওয়েবডেস্ক: যাঁরা প্রতি মাসে মাত্র ৫,০০০ টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন, তাঁরা একা নন। দেশের বহু মানুষ ঠিক এই অঙ্ক দিয়ে তাদের বিনিয়োগযাত্রা শুরু করেন। আজকের দিনে দীর্ঘমেয়াদি সম্পদ গঠনের অন্যতম জনপ্রিয় উপায় হয়ে উঠেছে এসআইপি। নতুন বিনিয়োগকারীদের মনে তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে—এই ৫,০০০ টাকা কীভাবে ভাগ করবেন? কোন ফান্ডে দেবেন? কত বছর লাগবে ১ কোটি টাকা গড়তে? ঝুঁকি কতটা নেবেন? একটাই ফান্ড নেবেন, নাকি দুটো?
সন্তোষজনক খবর হল—ভারতে এসআইপি বিনিয়োগের জনপ্রিয়তা দেখিয়ে দিচ্ছে যে নিয়মিত ছোট অঙ্কেও দীর্ঘমেয়াদে বড় সম্পদ তৈরি করা সম্ভব। গত তিন বছরে দেশে এসআইপি বিনিয়োগ রেকর্ড গতি অর্জন করেছে।
অ্যামফি (AMFI)–র তথ্য অনুযায়ী—
FY22-তে ছিল ৫.২ কোটি এসআইপি অ্যাকাউন্ট
FY23-এ তা বেড়ে ৬.৩ কোটি
FY24-এ এক লাফে পৌঁছে যায় ৮.৪ কোটি
২০২৫ সালের মার্চ নাগাদ ভারতে এসআইপি–তে অবদান রাখা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮.১১ কোটিতে। শুধু FY25–এই তৈরি হয়েছে ৬.৮০ কোটি নতুন অ্যাকাউন্ট। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে সংখ্যা হয় ৯.৮৭ কোটি, এবং বাজারে ওঠানামা চললেও ২০২৫ সালের অক্টোবরে এখনও ৯.৪৫ কোটি সক্রিয় অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
এসআইপি–তে বিনিয়োগের পরিমাণও দ্রুত বেড়েছে—
FY22: ১.২৪ লাখ কোটি টাকা
FY23: ১.৫৬ লাখ কোটি টাকা
FY24: ১.৯৯ লাখ কোটি টাকা
FY25: ২.৮৯ লাখ কোটি টাকা
অর্থাৎ তিন বছরে এসআইপি–র অবদান দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। ক্রমবর্ধমান এই প্রবণতা দেখায়, এখন বেশি সংখ্যক ভারতীয় পরিবার বাজারের ওঠানামা ধরার চেষ্টা না করে পদ্ধতিগত বিনিয়োগকেই বেশি বিশ্বাস করছে। বিশেষ করে নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য, প্রতি মাসে মাত্র ৫,০০০ টাকা দিয়ে এসআইপি শুরু করা সহজ এবং কার্যকর উপায়।
৫,০০০ টাকা কীভাবে ভাগ করবেন
ছোট অঙ্ক হলেও সঠিকভাবে পরিকল্পনা করলে তা যথেষ্ট ফল দিতে পারে। যদি কেউ প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা এসআইপি করতে চান, তাহলে ৩,০০০ টাকা একটি ইনডেক্স ফান্ডে এবং ২,০০০ টাকা একটি ফ্লেক্সি-ক্যাপ ফান্ডে বিনিয়োগ করা বাস্তবসম্মত পদ্ধতি। এতে পোর্টফোলিও সহজ থাকে, আবার বৈচিত্র্যও আসে।
ইনডেক্স ফান্ড স্থিরতা দেয়, আর ফ্লেক্সি-ক্যাপ ফান্ড দেয় উচ্চ বৃদ্ধির সুযোগ। এভাবে দুই ফান্ডে ভাগ করলে অতিরিক্ত ঝুঁকি কমে, আবার বিনিয়োগও অতিরিক্ত জটিল হয় না। নতুনদের শুধুমাত্র ইকুইটি ফান্ড বেছে নিলে এই মিশ্রণ উপযুক্ত। আর যাঁরা ইকুইটির সঙ্গে ঋণপত্রেও বিনিয়োগ করতে চান, তাঁদের জন্য হাইব্রিড ফান্ড ভালো বিকল্প।
অনেকেই ভাবেন সম্পূর্ণ ৫,০০০ টাকা একটি শক্তিশালী ফান্ডে দিলেই ভাল। কিন্তু একটি ফান্ডে পুরো টাকা দিলে কনসেন্ট্রেশন রিস্ক বেড়ে যায়। অন্তত দুটি ফান্ডে ভাগ করলে ঝুঁকি কমে।
৫,০০০ টাকা থেকে ১ কোটি—কতটা সম্ভব?
বেশিরভাগ তরুণ বিনিয়োগকারীই ভবিষ্যতে ১ কোটি টাকা জমাতে চান। যদি ২০ বছর বিনিয়োগ করেন, প্রতি বছর ১০% করে এসআইপি বাড়ান এবং গড়ে ১২% রিটার্ন ধরেন, তাহলে ১ কোটি টাকার লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।
শুরু: ৫,০০০ টাকা
প্রতি বছর ১০% বৃদ্ধি
২০ বছর ধরে বিনিয়োগ
সবচেয়ে বড় বিষয়: নিয়মিততা। অনেকেই বহু বছর একই অঙ্কে আটকে থাকেন। অথচ বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসআইপি–ও বাড়ানো উচিত। বোনাস পেলেও বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। প্রতি মাসে মাত্র ৫,০০০ টাকা তুচ্ছ মনে হতে পারে, কিন্তু ভারতের এসআইপি বিপ্লব দেখিয়ে দিয়েছে—শৃঙ্খলা, সময় এবং অল্প হলেও ধারাবাহিক বিনিয়োগই সম্পদ তৈরির সত্যিকারের চাবিকাঠি।
