আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিটকয়েনের স্রষ্টার পরিচয় ঘিরে রহস্য আবারও বিশ্বব্যাপী কৌতূহল জাগিয়ে তুলেছে। বিশ্বের প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সি আবিষ্কারের কৃতিত্ব রয়েছে সাতোশি নাকামোতোর কাছে। কিন্তু তাঁর পরিচয় এখনও আড়ালেই রয়েছে। বিটকয়েন বাজারে আসার ১৬ বছর পরেও। স্রষ্টা আদৌ প্রকৃত ব্যক্তি না কি কোনও গোষ্ঠীর তার কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ না করা সত্ত্বেও, বিটকয়েনের অভূতপূর্ব উত্থানের ফলে নাকামোতো এখন বিশ্বের দ্বাদশ ধনীতম সত্তা হিসেবে স্থান পেয়েছেন। যার সম্পদের পরিমাণ ১২৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। ২০০৮ সালে বিটকয়েনের শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং ২০০৯ সালে প্রথম বিটকয়েন ব্লক মাইনিংয়ের কৃতিত্ব সাতোশি নাকামোতোর।
বিটকয়েন চালু হওয়ার প্রায় দেড় দশক পর, সাতোশি বিশ্বের দ্বাদশ ধনী ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন, যার আনুমানিক সম্পদের পরিমাণ ১২৮.৯২ বিলিয়ন ডলার (১১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি)। ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ বিটস্ট্যাম্প জানিয়েছে, নাকামোতো প্রায় ১০.৯৬ লক্ষ বিটকয়েনের মালিক বলে মনে করা হচ্ছে। যার মাইকেল ডেলের ১২৪.৮ বিলিয়ন ডলারের মোট সম্পদের পরিমাণকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে সাতোশির সম্পদ।
আরও পড়ুন: দিল্লি থেকে কলকাতা মাত্র আড়াই ঘণ্টায়! ১২০০ কিমি মাত্র ১৫০ মিনিটে পৌঁছে দেবে এই ট্রেন
নাকামোতোর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নাম যুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছেন সফটওয়্যার ডেভেলপার হ্যাল ফিনি, কম্পিউটার বিজ্ঞানী নিক সাজাবো, উদ্যোগপতি ইলন মাস্ক এবং প্রাক্তন টুইটার সিইও জ্যাক ডরসি। সকলেই বিটকয়েনের স্রষ্টা হওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।

অস্ট্রেলিয়ার কম্পিউটার বিজ্ঞানী ক্রেগ রাইটই একমাত্র ব্যক্তি যিনি বারবার নিজেকে নাকামোতো বলে দাবি করেছেন। তবে, ২০২৪ সালে ব্রিটেনের একটি আদালত তাঁকে ১২ মাসের কারাদণ্ড দেয়। তাঁকে মিথ্যাবাদী বলে অভিহিত করে এবং তাঁর ক্রমাগত মিথ্যাচারের জন্য ‘আইনি সন্ত্রাসবাদ’-এর অভিযোগে অভিযুক্ত করে। তাঁর সাজা বর্তমানে স্থগিত করা হয়েছে, তবে তিনি যদি এই ধরনের দাবি পুনরাবৃত্তি করেন তবে তাকে কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে।
সাতোশি নাকামোতোর পরিচয় উন্মোচনের জন্য অসংখ্য তদন্ত পরিচালিত হয়েছে। এমনকি এইচবিওর তথ্যচিত্র 'মানি ইলেকট্রিক: দ্য বিটকয়েন মিস্ট্রি'ও এই রহস্য উন্মোচনে হাত পাকিয়েছিল। একটি পর্যায়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা কুলেন হোব্যাক দাবি করেছিলেন যে পিটার কে টড নামে একজন ব্যক্তি বিটকয়েনের স্রষ্টা হতে পারেন। কিন্তু টড তা অস্বীকার করেন।
আরও পড়ুন: পাথরের খাঁজেই লুকিয়ে রয়েছে একটি মেয়ে, হাতে ১০ সেকেণ্ড সময়, দেখুন তো খুঁজে পান কি না
সোমবার বিটকয়েনের দাম সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। CoinMarketCap-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিটকয়েনের মূল্য দাঁড়িয়েছে ১২০,৯৩৮.৯৫, যা গত সাত দিনে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বিটকয়েনের বাজার মূলধন এখন ২.৪ ট্রিলিয়ন, যা গুগলের ২.১৯ ট্রিলিয়ন বাজার মূলধনকে অতিক্রম করে এক লাফে বিশ্বের ৬ষ্ঠ বৃহত্তম সম্পদে পরিণত হয়েছে।
এই উত্থানের পেছনে মূল কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা দেখছেন ট্রাম্পের প্রো-ক্রিপ্টো অবস্থান, ETF-এ প্রবল বিনিয়োগ প্রবাহ এবং বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থার ট্রেজারিতে বিটকয়েন সংরক্ষণের প্রবণতা। BuyUcoin-এর সিইও শিবম ঠাকরাল বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্রিপ্টো সপ্তাহ’ নিয়ে উত্তেজনা এবং প্রতিষ্ঠিত বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ এই উত্থানের বড় চালিকা শক্তি।’’ শুধু বিটকয়েন নয়, অন্যান্য ক্রিপ্টো মুদ্রাও উল্লেখযোগ্য লাভ দেখাচ্ছে। Ethereum (ETH) ১৮.২৬% বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,০৪৪.৯৩-এ, Solana (SOL) ১০.০৩% বেড়ে ১৬৭.২৮, এবং Dogecoin (DOGE) ১৭.৫০% বেড়ে হয়েছে ০.২০৫০। সবচেয়ে বড় চমক দিয়েছে Stellar (XLM), যা ১০০.৭৭% লাফিয়ে ০.৫০৪৯-এ পৌঁছেছে। XRP-ও ২৯.৪৪% বেড়ে ২.৯৩-এ পৌঁছেছে, যা সম্ভবত আইনি স্বচ্ছতা ও বাজার আস্থার কারণে।
