আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া এক অভূতপূর্ব নজির গড়ছে। বর্তমানে প্রতি মাসে ২০ বিলিয়ন লেনদেন প্রক্রিয়া করছে সংস্থাটি। শুধু ২০২৫ সালের আগস্টেই এনপিসিআই ২০.০১ বিলিয়ন ইউপিআই লেনদেন সম্পন্ন করেছে, যার মূল্য প্রায় ২৪.৮৫ লক্ষ কোটি টাকা। গড়ে প্রতিদিন ৬৪.৫ কোটি বা ৬৪৫ মিলিয়ন লেনদেন সম্পন্ন হচ্ছে যা বিশ্বের যেকোনও পেমেন্ট নেটওয়ার্কের জন্যই বিস্ময়কর। এর সঙ্গে ইমিডিয়েট পেমেন্ট সার্ভিস, ন্যাশনাল অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউস ও অন্যান্য সিস্টেম যুক্ত করলে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হয়ে দাঁড়ায়।


সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, এই বিপুল লেনদেনের নেটওয়ার্ক বজায় রাখতে এনপিসিআই-এর বার্ষিক প্রযুক্তি ও অবকাঠামো খরচ মাত্র ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২১০ কোটি প্রযুক্তিগত খরচ এবং ২৯০ কোটি টাকার অবচয় ধরা হয়েছে। অর্থাৎ গোটা দেশের ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যাকবোন চলতে মাত্র কয়েকশো কোটি টাকার প্রয়োজন হচ্ছে।

আরও পড়ুন:  রেলকর্মীদের জন্য সুখবর, কত কোটি টাকার বোনাস ঘোষণা করল মোদি সরকার


২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনপিসিআই ৪,০০০ কোটি টাকার রাজস্বে প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকার মুনাফা করেছে। তাদের ইবিটিডা মার্জিন ৫০% এরও বেশি। আর পুরো দেশের পেমেন্ট অবকাঠামো চালাতে খরচ হয়েছে মাত্র ৫০০ কোটি। ২০২৫ সালের জুন মাসেই ইউপিআই একা ১৮ বিলিয়নেরও বেশি লেনদেন প্রক্রিয়া করেছে, যার মূল্য ২৪ লক্ষ কোটি টাকা। বর্তমানে ইউপিআই প্রতিদিন গড়ে ৬৪০ মিলিয়নেরও বেশি লেনদেন করে, যা ভিসার দৈনিক ৬৩৯ মিলিয়ন লেনদেনকেও ছাড়িয়ে গেছে।


গ্লোবাল মার্কেট শেয়ারের হিসেবে, বিশ্বের মোট ডিজিটাল লেনদেনের প্রায় ৪৬% এখন ইউপিআই-এর দখলে। প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ৩,৭২৯টি লেনদেন প্রক্রিয়া করে এই সিস্টেম—যা বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। এর পাশাপাশি এনপিসিআই ৯৯.৯৯% আপটাইম বজায় রেখেছে, যা নির্ভরযোগ্যতার এক বিরল উদাহরণ। বর্তমানে এটি ৪৯.১ কোটি ব্যবহারকারী, ৬.৫ কোটি ব্যবসায়ী ও ৬৭৫টি ব্যাংককে সংযুক্ত রেখেছে। এই ব্যাকবোনকে শক্তিশালী করছে এনপিসিআই-এর অত্যাধুনিক টিয়ার-৪ ডেটা সেন্টারগুলি, যা চেন্নাই ও হায়দরাবাদে অবস্থিত। এগুলি প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৭০ বিলিয়ন লেনদেন সামলানোর সক্ষমতা রাখে। বিশেষত হায়দরাবাদের ডেটা সেন্টার, যেখানে ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগে ৯৯.৯৯৫% আপটাইম নিশ্চিত করা হয়েছে।


ডেটা সেন্টারগুলিতে আট স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পূর্ণ রিডানড্যান্সি, সবুজ ভবন বৈশিষ্ট্য, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ও সৌরশক্তি ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত। ২০২৪ সালে এনার্জি এফিশিয়েন্সি উদ্যোগের মাধ্যমে সংস্থাটি ২৭,১৬৫ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ সাশ্রয় করেছে। শিল্প বিশেষজ্ঞদের হিসাবে, বর্তমানে ব্যাঙ্কগুলির খরচ প্রতিটি ইউপিআই লেনদেনে ৩–৪ বেসিস পয়েন্ট। ২০২০ সালে যেখানে টেকনোলজি সার্ভিস প্রোভাইডাররা ৩–৫ বেসিস পয়েন্ট চার্জ করত, এখন তা নেমে এসেছে ১ বেসিস পয়েন্টেরও নিচে।


২০২৫-এ মোট ২১৩ বিলিয়ন লেনদেন প্রক্রিয়া করেছে এনপিসিআই। অর্থাৎ ৫০০ কোটি টাকার খরচ ভাগ করলে প্রতিটি লেনদেনের খরচ দাঁড়ায় মাত্র ২৩ পয়সা। এটি অবিশ্বাস্যভাবে কম। যেখানে অন্যান্য দেশগুলোতে আলাদা আলাদা অবকাঠামোতে খরচ হয়, সেখানে এনপিসিআই-এর ইন্টারঅপারেবল আর্কিটেকচার একই প্ল্যাটফর্মে একাধিক পরিষেবা চালায়। ফলে খরচ যেমন কমেছে, তেমনই দক্ষতাও বেড়েছে। চীনের আলিপে বা ব্রাজিলের পিক্সও এখনও এই মাত্রার স্কেল, খরচ দক্ষতা ও ইন্টারঅপারেবিলিটি মেলাতে পারেনি।


সাম্প্রতিক আপডেটে ইউপিআই এপিআই-এর রেসপন্স টাইম ১৫–৩০ সেকেন্ড থেকে কমিয়ে ১০–১৫ সেকেন্ড করা হয়েছে, যা ৬৬% দ্রুত। এর ফলে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাও উন্নত হয়েছে। আজ ভারতের ডিজিটাল পেমেন্টের যাত্রা বিশ্বে এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে। ৮৫% ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণযোগ্যতা, ভোক্তাদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ইউপিআই এবং অত্যন্ত কম অপারেশনাল খরচ—এই ত্রয়ী ভারতকে বিশ্বের ফিনটেক পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।