আজকাল ওয়েবডেস্ক: গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি) কাউন্সিল বুধবার থেকে দুই দিনের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শুরু করেছে। এই বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এমন এক প্রস্তাব যা ভারতের কর কাঠামোকে আমূল পরিবর্তন করতে পারে। মূল আলোচ্য বিষয় হল বর্তমান চার-স্তরের কর ব্যবস্থা সরল করে মাত্র দুটি স্ল্যাবে নামিয়ে আনা ৫% এবং ১৮%। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম কমতে পারে, যদিও বিলাসবহুল পণ্যের উপর কর বাড়ানো হবে।
কোন জিনিস সস্তা হতে পারে?
প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী, বর্তমানে ১২% হারে কর বসা প্রায় সব পণ্য যেমন ঘি, বাদাম, প্যাকেজড পানীয় জল, নন-অ্যারেটেড পানীয়, নেমকিন, ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম—৫% স্ল্যাবে চলে আসবে। পেন্সিল, সাইকেল, ছাতা ও হেয়ারপিনের মতো সাধারণ গৃহস্থালি সামগ্রীতেও কর কমে যাবে, যা ভোক্তাদের জন্য স্বস্তি বয়ে আনবে। ইলেকট্রনিক্স ও ভোগ্যপণ্যও সস্তা হতে পারে। বর্তমানে ২৮% হারে কর বসা টেলিভিশনের কিছু মডেল, ওয়াশিং মেশিন ও ফ্রিজকে ১৮% স্ল্যাবে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। ছোট গাড়ি ও এয়ার কন্ডিশনারেও কর কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
কোথায় কর বাড়বে?
যেখানে বেশিরভাগ পণ্য সস্তা হতে চলেছে, সেখানে বিলাসবহুল ও “সিন” (ক্ষতিকর) পণ্যে কর বাড়ানো হবে। বর্তমানে ২৮% জিএসটি ও ক্ষতিপূরণ সেস বসা বিলাসবহুল গাড়ি, প্রিমিয়াম এসইউভি এবং অন্যান্য উচ্চমানের যানবাহনকে নতুন ৪০% স্ল্যাবে আনা হতে পারে। তামাকজাত দ্রব্য, পান মসলা, সিগারেট এবং ২,৫০০ টাকার বেশি মূল্যের নির্দিষ্ট পোশাকের ওপরও বাড়তি কর বসতে পারে। এমনকি প্রিমিয়াম এয়ার ট্রাভেলেও জিএসটি ১২% থেকে বাড়িয়ে ১৮% করার প্রস্তাব রয়েছে।
আরও পড়ুন: ৫৬তম জিএসটি কাউন্সিল বৈঠক: বড় কর সংস্কারের প্রস্তাব
ইলেকট্রিক ভেহিকেল (EV) নিয়ে আলাদা নজর
ইলেকট্রিক গাড়ির উপর মাত্র ৫% জিএসটি রাখার মাধ্যমে এর ব্যবহার বাড়াতে চাইছে সরকার। তবে প্রিমিয়াম ইভির ক্ষেত্রে বেশি কর বসানো উচিত কি না, তা নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে যাতে সস্তা ও বিলাসবহুল মডেলের মধ্যে পার্থক্য বজায় থাকে।
রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কা
অর্থনীতিবিদদের হিসেব অনুযায়ী, এই ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে সরকারের প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১.৮৫ লাখ কোটি টাকা) রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে, যার বড় অংশ বহন করতে হবে রাজ্যগুলিকে। পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, তামিলনাড়ু, পঞ্জাব, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, হিমাচল প্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডসহ বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং স্পষ্ট ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থার দাবি তুলেছে।

এই প্রস্তাব এসেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বাধীনতা দিবসের ভাষণের পর, যেখানে তিনি কর কাঠামো সহজ করার পাশাপাশি ভোগ বাড়াতে বড় কর সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যদি অনুমোদন পায়, তবে এটি ভারতের ইতিহাসে অন্যতম বড় জিএসটি সংস্কার হয়ে দাঁড়াবে। একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমবে, অন্যদিকে বিলাসবহুল ও অপ্রয়োজনীয় খরচের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে।
