আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্ব অর্থনীতির মানচিত্রে আরও এক ঐতিহাসিক মাইলফলক স্পর্শ করল ভারত। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জাপানকে পিছনে ফেলে ভারত এখন বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। ভারতের মোট উৎপাদন বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৪.১৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে। পাশাপাশি, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে জার্মানিকে ছাপিয়ে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার পথে দ্রুত এগিয়ে চলেছে ভারত।
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বাণিজ্যিক টানাপোড়েনের মধ্যেও ভারত ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের দ্রুততম দেশ হিসাবে নিজের অবস্থান বজায় রেখেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের মতে, শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা, উন্নয়ন এবং ধারাবাহিক কাঠামোগত সংস্কারই এই সাফল্যের মূল চালিকাশক্তি।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ভারতের প্রকৃত জিডিপি বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৮.২ শতাংশে, যা প্রথম ত্রৈমাসিকের ৭.৮ শতাংশ এবং আগের অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকের ৭.৪ শতাংশের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এটি গত ছয় ত্রৈমাসিকের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি হার, যা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে বিশ্ব বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও ভারতের অর্থনীতি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে।
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উৎপাদন, পরিষেবা এবং নির্মাণ—এই তিন প্রধান ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে পরিষেবা খাত এবং ডিজিটাল অর্থনীতি ভারতের সামগ্রিক বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কাঠামোতে বিপুল সরকারি বিনিয়োগ এবং স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের বিস্তার অর্থনীতিকে নতুন গতি দিয়েছে।
অভ্যন্তরীণ ব্যয় বৃদ্ধিও ভারতের অর্থনৈতিক উত্থানের অন্যতম স্তম্ভ। গ্রামীণ ও শহুরে উভয় ক্ষেত্রেই চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিল্পোৎপাদন ও পরিষেবা খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। একই সঙ্গে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা এবং কর সংস্কারের ফলে অর্থনীতির উন্নতি ত্বরান্বিত হয়েছে।
সরকারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বর্তমান বৃদ্ধির ধারা বজায় থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের জিডিপি ৭.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছতে পারে। সেক্ষেত্রে জার্মানিকে ছাপিয়ে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে ভারতের এখনও দীর্ঘ পথ অতিক্রম করা বাকি, তবুও সামগ্রিক অর্থনৈতিক শক্তি ও বাজারের আকারের দিক থেকে ভারতের গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সাফল্য শুধু পরিসংখ্যানগত অর্জন নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের প্রভাব বৃদ্ধির স্পষ্ট প্রতিফলন। আগামী দিনে যদি সংস্কারের গতি বজায় থাকে এবং কর্মসংস্থান ও দক্ষতার ওপর আরও জোর দেওয়া যায়, তবে ভারতের অর্থনৈতিক উত্থান আরও টেকসই হয়ে উঠবে।
