আজকাল ওয়েবডেস্ক: অল্প বয়সে বিখ্যাত হওয়ার নেশায় রেল লাইনের উপর দাঁড়িয়ে বিভিন্ন রকম ভিডিও শুট করার সময় ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ গেল সদ্য কৈশোর পার হওয়া এক যুবকের। জানা গিয়েছে, কখনও রেললাইনের পাশে আবার কখনও তার উপর দাঁড়িয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করার জন্য বিভিন্ন রকম ছবি তোলা এবং 'রিলস' বানানোর সময়  সোমবার সকালে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় ওই যুবকের। 


ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের সুতি থানার অন্তর্গত সুজনিপাড়া স্টেশনের কাছে।  পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে মৃত ওই যুবকের নাম  ইয়াসের আহমেদ (১৯) । তার বাড়ি সুতি থানার দেবীপুর গ্রামে। জিআরপি-র তরফ থেকে ইতিমধ্যেই দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জঙ্গিপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

আরও পড়ুন: উড়ানের পরেই ভবনে ভেঙে পড়ল বিমান, মৃত্যু মিছিল পড়ুয়াদের, যেভাবে জুড়ে গেল আহমেদাবাদ-ঢাকা দুর্ঘটনা ...

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে সুতির দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা  ইয়াসের বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে সুজনিপাড়া এলাকায় নিজের সমাজমাধ্যমের পাতায় পোস্ট করার জন্য নতুন ভিডিও শুট করতে যান। 


বেলা ন'টা নাগাদ ইয়াসের যখন আপন মনে বিভিন্ন ছবি এবং ভিডিও তুলছিলেন সেই সময়  ওই লাইন ধরে দ্রুত গতিতে মালদার দিক থেকে জঙ্গিপুরের দিকে ছুটে আসছিল  ডাউন আজিমগঞ্জ-মালদা টাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেন। 

সূত্রের খবর, সুজনিপাড়া হল্ট স্টেশন এবং নিমতিতা স্টেশনের মাঝে ট্রেনের সঙ্গে ইয়াসেরের ধাক্কা লাগে। এরপরই ইয়াসেরের দেহটি ট্রেনের সঙ্গে আটকে যায়। চালক সুজনিপাড়া হল্ট স্টেশনে ট্রেন থামালে  ইঞ্জিনের সামনে লেগে থাকা দেহটি উদ্ধার করেন রেলকর্মীরা। 

 

ইয়াসেরের এক কাকা আশরাফুল হক বলেন,' ইয়াসের এক সময় পড়াশোনা করলেও বর্তমানে সে কোনও স্কুল বা কলেজে যেত না। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সবথেকে বড় ইয়াসের বছরখানেক আগে দিল্লিতে কাজ করতে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে বেশিদিন থাকতে পারেনি। এরপর থেকে বেশিরভাগ সময় সে বাড়িতেই থাকত।'
 
তিনি জানান,'সোমবার সকালে কাউকে কিছু না জানিয়ে  ইয়াসের বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে সুজনিপাড়া এলাকায় চলে যায়। পরে আমরা জানতে পারি একটি ট্রেনের সঙ্গে তার ধাক্কা লেগেছে।'
 
দুর্ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেন, আজ সকাল থেকেই ইয়াসের আপন মনে রেল লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন রকমের ছবি তুলছিল এবং ভিডিও শুট করছিল। ইয়াসেরকে লাইনের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ট্রেন চালক বহুদূর থেকেই হর্ন দিয়েছিলেন। অনেকের ধারণা ভিডিও শুট করার কারণে ইয়াসরের কানে 'এয়ারপড' লাগানো ছিল এবং তাতে জোরে গান বাজছিল।  সম্ভবত সেই কারণেই ট্রেন চালকের হর্ন ইয়াসের শুনতে পায়নি। দুর্ঘটনাস্থলের কিছুটা দূর থেকেই পুলিশ তাঁর মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করেছে।
 
সমাজমাধ্যমে খ্যাতি পাওয়ার জন্য ভিডিও শুট করতে গিয়ে অকালে ইয়াসের মৃত্যুতে গোটা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
প্রসঙ্গত , ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে সুতি থানারই আহিরণ ব্রিজের কাছে দাঁড়িয়ে সমাজমাধমের পাতায় পোস্ট করার জন্য 'রিলস ' বানানোর সময়  ট্রেনের  ধাক্কায় মৃত্যু হয় তিন কিশোরের। ওই ব্রিজের উপর থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয় আরও দুই কিশোর। ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনার পরও সাধারণ মানুষের মধ্যে যে বিন্দুমাত্র হুঁশ ফেরেনি এই ঘটনা তা ফের একবার প্রমাণ করে দিল। পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের সিনিয়র জন সংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, 'রেলের তরফে এবিষয়ে বারবার সতর্কতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু তারপরও বলব এই বিষয়ে অভিভাবকদেরও এগিয়ে আসা দরকার। তাঁরাই কিন্তু এর ভয়াবহ ঝুঁকি ও বিপদের দিকটি বাড়িতে তাঁদের সন্তানদের সামনে ব্যাখ্যা করতে পারেন।'