আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রসূতি মায়েদের মৃত্যু বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তায় পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দপ্তর। মৃত্যুর হার কমাতে কঠোর নির্দেশিকা জারি করল রাজ্য। মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজের প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনার ঠিক পরেই স্যালাইন এর ব্যবহার নিয়ে রাজ্য জুড়ে কড়া গাইড লাইন জারি করল স্বাস্থ্য দপ্তর। শহরাঞ্চলের মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শুরু করে একেবারে নিম্নস্তরে থাকা গ্রামীণ হাসপাতালে আসা, প্রতিটি প্রসূতি মায়েদেরকে স্যালাইন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ কমিটির দেওয়া প্রোটোকল আদৌও কি মানছেন চিকিৎসকরা? তা খতিয়ে দেখবে স্বাস্থ্য দপ্তর। নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করায় প্রশ্ন উঠছে যে নিয়ম মেনে চিকিৎসা করা হচ্ছে প্রসূতিদের।

রাজ্যজুড়ে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও গ্রামীণ হাসপাতাল, ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ডেলিভারি পয়েন্ট, প্রতিটি জায়গায় চিকিৎসক, অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট, নার্স প্রত্যেককে মেনে চলতে হবে নয়া ফ্লুইড গাইডলাইন।

কি রয়েছে এই গাইডলাইনে? যে সমস্ত প্রসূতি মায়েদের সিজারের ক্ষেত্রে, অস্ত্রোপচারের পর রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে যে ধরনের স্যালাইন ব্যবহার করা হয় তা দেওয়ার সময় অতিসতর্ক থাকতে হবে। সঠিক মাত্রায় স্যালাইন দিতে হবে। সঠিক সময়ে, যদি স্যালাইন দেওয়া না হয় বা স্যালাইন এর মাত্রা যদি ঠিক না থাকে অথবা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি স্যালাইন ব্যবহার ডেকে আনতে পারে বিপদ। সে বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে নির্দেশিকায়। অতিরিক্ত পরিমাণে ক্রিস্টালয়েড স্যালাইন দেওয়ার সঠিক প্রটোকল না মানলে, কিডনি ফেইলিওর হতে পারে। হতে পারে অ্যানিমিয়া।

আরও পড়ুন: যুদ্ধ বিমান থেকে প্রযুক্তি, ভারতীয় প্রতিরক্ষায় কতটা প্রভাব ফেলবে এই 'শুল্ক বোমা? জানাচ্ছেন প্রাক্তন এই সেনাকর্তা

চিকিৎসকদের দাবি, এই ধরনের নির্দেশিকাকে স্বাগত। তবে স্যালাইনের গুণগত মান অবশ্যই যাচাই করা উচিত, না হলে নির্দেশিকা মেনে চলার পরেও প্রসূতি মৃত্যু আটকানো সম্ভব হবে না।

প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারি মাসে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে মৃত্যু হয় এক প্রসূতির। অভিযোগ ওঠে সিজার হওয়া ছ’জন প্রসূতি আচমকা গুরুতর অসুস্থ হয়ে শুরু পড়েন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের স্থানান্তরিত করা হয় আইসিইউতে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয় তিনজনকে। তাঁদের মধ্যেই এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। অভিযোগের তির হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগের দিকে। মৃতার নাম ছিল মামণি রুইদাস। তাঁর বাড়ি ছিল গড়বেতা থানা এলাকায়। পরিবারে অভিযোগ ছিল, ভুল স্যালাইন প্রয়োগ করা হয়েছিল প্রসূতির শরীরে। যার ফলে ১২ ঘন্টা ধরে প্রস্রাব বন্ধ ছিল। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্তে আসে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি দল। পাশাপাশি ড্রাগ কন্ট্রোল অফিসের একটি দলও হাসপাতালে পৌঁছয় ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করার জন্য।

আরও পড়ুন: বুধেই ট্রাম্পের নতুন শুল্কের কোপ পড়ল ভারতের উপর, কোন কোন শিল্প সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

বিগত কয়েক বছরে স্বাস্থ্য দফতরের রাতের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা। রাজ্যের জেলাগুলির মধ্যে প্রসূতি মৃত্যুতে শীর্ষে কলকাতা। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪-এর মার্চ পর্যন্ত যে ১১৬২ জন প্রসূতি মারা গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কলকাতার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে মৃতের সংখ্যা রাজ্যে সর্বাধিক। কলকাতায় মারা গিয়েছেন ২০৪ জন প্রসূতি।