আজকাল ওয়েবডেস্ক: সাতসকালে চায়ের দোকানে সামান্য কথা কাটাকাটি। যা থেকেই শুরু তুমুল বচসা। আচমকাই তৃণমূল কর্মীকে বেধড়ক মারধর। গুরুতর আহত অবস্থায় কিছুক্ষণেই মৃত্যু হল তাঁর। ঘটনাটি ঘিরে তুমুল চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বর্ধমানের মেমারিতে।
মৃত তৃণমূল কর্মীর নাম, লাল্টু সিকদার (৬৬)। জানা গেছে, বুধবার সকালে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর ব্লকের বড়পলাশণ এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। নিত্যদিনের মতো
এদিন সকালে চায়ের দোকানে এসেছিলেন লাল্টু। খানিকক্ষণ পরেই তাঁকে লক্ষ্য করে কটুক্তি করতে শুরু করেন দারু শেখ নামের এক ব্যক্তি।
জানা গেছে, এই কটুক্তির জেরেই বচসা শুরু হয় লাল্টু ও দারু শেখের। হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। প্রকাশ্যে লাল্টুকে বেধড়ক মারধর করেন দারু। গুরুতর আহত অবস্থায় চায়ের দোকানের সামনেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষরক্ষা হয়নি। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত তৃণমূল কর্মীর পরিবার জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর উদ্যোগে আয়োজিত বইমেলার অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন লাল্টু। সেই অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথেই লাল্টুর উদ্দেশে কটুক্তি করতে শুরু করেন দারু শেখ। এমনকী হুমকিও দিয়েছিলেন তাঁকে। আজ সকালে চায়ের দোকানের সামনেই লাল্টুর বুকে সজোরে ঘুষি মারেন দারু। এরপরই লাল্টু লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। হাসপাতালে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
প্রসঙ্গত, নভেম্বরের শেষেও রাজ্যে আরও এক তৃণমূল কর্মীকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছিল। বহরমপুর থানার কুমড়োদহ ঘাট এলাকায় খুন হন এক তৃণমূল কর্মী। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই তৃণমূল কর্মীর নাম হায়াতুল্লাহ শেখ (৪৪)। তাঁর বাড়ি বহরমপুর থানার অন্তর্গত কুমড়োদহ ঘাট এলাকায়। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই তৃণমূল কর্মীকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনার খবর পাওয়ার পরই বহরমপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকায় পৌঁছয়। তবে এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি বলেই জানা গিয়েছে।
মৃত কর্মী সম্পর্কে তৃণমূল পরিচালিত বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আইজুউদ্দিন মণ্ডলের শ্যালক হতেন। আইজুউদ্দিন বলেন, 'মৃত হায়াতুল্লাহ আমাদের দলের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। এই খুনের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তারা এলাকায় কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী বলে পরিচিত। আমার ধারণা রাজনৈতিক কারণেই হায়াতুল্লাহকে খুন করা হয়েছে।'
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত হায়াতুল্লাহ শেখের কুমড়োদহ ঘাট এলাকায় একটি ফার্নিচারের দোকান ছিল। শুক্রবার সন্ধে নাগাদ কুমড়োদহ ব্রিজের কাছে স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে হায়াতুল্লাহর বিবাদ চলছিল। অভিযোগ উঠেছে সেই সময় দুষ্কৃতীরা তাঁকে ছুরি দিয়ে কোপাতে থাকে। রক্তাক্ত অবস্থায় হায়াতুল্লাহ মাটিতে পড়ে গেলে দুষ্কৃতীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী তাঁকে উদ্ধার করে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন।
প্রসঙ্গত, জুলাই মাসেই জেলায় জেলায় একাধিক তৃণমূল খুন হয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় আক্রান্ত হয়েছেন একাধিক তৃণমূল কর্মী, সমর্থক। বীরভূমের লাভপুরের শ্রীনিধিপুর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি পীযূষ ঘোষকে খুন করা হয়েছিল। গভীর রাতে আচমকা ফোন যায় পীযূষের কাছে। ফোন পেয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। বাড়ির অদূরে রাস্তায় তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। জানা গিয়েছে, যেখানে তৃণমূল নেতার দেহ উদ্ধার হয়েছে, সেখানেই পাওয়া গিয়েছে তাঁর মোটরসাইকেলটিও।
নেতাকে মাথার পিছনদিক থেকে গুলি করে খুন করা হয়েছে বলে খবর। বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁর দেহ। সেখানেই হয় ময়নাতদন্ত। সূত্রের খবর, ঘটনায় ইতিমধ্যেই তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে দু’ জন মহিলা। ঘটনাস্থলের সামনে থাকা একটি বাড়ি থেকে মৌসুমী মাল নামে এক মহিলাকে আটক করেছে পুলিশ।
এরপর বীরভূমে ফের আরও এক তৃণমূল নেতা খুন হন। মৃত তৃণমূল নেতার স্ত্রীর অভিযোগ সিপিএম সমর্থদের বিরুদ্ধে। বীরভূমে বোমাবাজিতে ফের রাজনৈতিক খুনের ঘটনা ঘটে। ময়ূরেশ্বর-১ পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য কর্মাধ্যক্ষের স্বামী ও তৃণমূল নেতা বাইতুল্লা শেখকে বোমা মেরে খুন করা হয়েছে। মৃতের স্ত্রী তথা মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ শাকিলা বিবির অভিযোগ, গ্রামের সিপিএম সমর্থকরাই পরিকল্পনা করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
আরও এট তৃণমূল নেতাকে গুলি করে খুনের অভিযোগ উঠেছে ভাঙড়ে। মৃত ব্যক্তির নাম রাজ্জাক খাঁ। ১০ জুলাই, বৃহস্পতিবার রাতে ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজারের কাছে ওই তৃণমূল নেতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। এরপর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁকে তড়িঘড়ি উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে সেখানেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে খবর।
আবার বৃহস্পতিবার রাতেই মালদহে জন্মদিনের পার্টিতে ঘর বন্ধ করে কুপিয়ে খুন করা হয় এক তৃণমূল নেতাকে। মৃত তৃণমূল নেতার নাম, আবুল কালাম আজাদ। খুনের অভিযোগ উঠছে মাইনুল শেখ-সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ব্যক্তিও তৃণমূল নেতা বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে অভিযুক্ত মাইনুল শেখ কাজিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য। এই গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেসের হয়ে ভোটে জিতলেও পরবর্তীতে জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সির হাত ধরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন। ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের ইংরেজবাজারের লক্ষীপুরে।
