আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজ্যে ফের এসআইআর আতঙ্কে মৃত্যুর অভিযোগ। এবার ঘটনাস্থল হাওড়ার উলুবেড়িয়া। মঙ্গলবার জাহিদ মাল (৩০) বলে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ, এসআইআর আতঙ্কে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে উলুবেড়িয়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের উলবেরিয়া ব্লক ২এর খালিসানি গ্রাম পঞ্চায়েতে। সূত্রের তথ্য, রামনগরেও এক ব্যক্তির এসআইআর আতঙ্কে মৃত্যু হয়েছে বলে তথ্য।
জাহিদের মৃত্যু প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, এসআইআর সংক্রান্ত একটি নামের ত্রুটি সংশোধন করতে না পারায় চরম হতাশা ও আতঙ্ক থেকে উলুবেড়িয়া ২ নম্বর ব্লকের খালিশানি গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই যুবক আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, বারবার চেষ্টা করেও তিনি তার পরিচয় নথির ত্রুটি সংশোধন করাতে পারছিলেন না, যার জেরে গভীর উদ্বেগ ও ভয়ে ছিলেন। বাসিন্দারা দাবি করেছেন যে এই সমস্যা মেটাতে না পারার মানসিক চাপ এবং এসআইআর সম্পর্কিত ভয়ই তাঁকে এমন চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।
খালিশানির স্থানীয় ব্যাক্তিদের বক্তব্য অনুযায়ী, জহিদ মাল দীর্ঘদিন ধরে তাঁর এসআইআর নথিতে থাকা একটি ভুল সংশোধনের জন্য বিভিন্ন স্তরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু, তাঁর আবেদন বারবার খারিজ হয়েছে অথবা কোনও প্রতিকার পাননি। সম্প্রতি এসআইআর সংক্রান্ত বিভিন্ন সরকারি কড়াকড়ি এবং তার ফলস্বরূপ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা এলাকার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। জহিদের ক্ষেত্রেও একই ভয় কাজ করে গত কয়েকদিন ধরেই।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, 'জাহিদ তার নামটা ঠিক করার জন্য পাগলের মতো ছুটে বেড়াচ্ছিল। সে খুব ভয়ে ছিল যে এই ভুলের জন্য তার সব সরকারি সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা ভাবিনি সে এমন কিছু করে বসবে।' ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর স্থানীয় থেকে শুরু করে রাজ্য রাজনীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শ্রী অভিষেক ব্যানার্জি বিষয়টি সম্পর্কে জানার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন বলে খবর সূত্রের। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় নেতৃত্বকে নির্দেশ দেন এবং পুলক রায়কে জাহিদ মালের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এবং তাঁদের সমস্ত রকম আইনি ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দেন। পুলক রায় দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃত যুবকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং এই কঠিন সময়ে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। পুলক রায় সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। একটি সামান্য ভুলের কারণে এমন মর্মান্তিক ঘটনা কাম্য নয়। আমরা পরিবারকে সব ধরনের সাহায্য করব এবং নিশ্চিত করব যে তাঁদের বাকি নথি সংক্রান্ত সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হয়।' পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে, এসআইআর আতঙ্কে মৃত্যুর অভিযোগ এবার পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে। অভিযোগ তেমনটাই। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক জানিয়েছে বিষয়টি খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
মৃতের নাম শেখ সিরাজ উদ্দিন। রামনগর ১ব্লকের কাঁটাবনি গ্রামে বাড়ি তাঁর। পূর্ব পুরুষরা কেউ অন্য দেশ থেকে আসেননি বলেই দাবি এলাকাবাসীর। বহুদিন বিদেশেও ছিলেন। বর্তমানে দেশে ফিরে দিঘায় একটি হোটেলও করেছেন। যদিও এলাকার বিধায়ক অখিল গিরি জানাচ্ছেন, কাজগপত্র বের করতে গিয়ে বাবার নাম ভুল দেখেন। তারপর থেকেই বেশ চিন্তায় ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। রবিবার সন্ধে সাতটায় কাঁথি মহাকুমা হাসপাতালে তার মৃত্যু হলে পরিবারের লোকজন দেহ বাড়ি নিয়ে গিয়ে সৎকার করেছেন।
