আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভিন রাজ্যে বাংলাভাষীদের উপর অত্যাচারের অভিযোগের মাঝেই সাইনবোর্ড নিয়ে বড় পদক্ষেপ নিল রাজ্যের এই পুরসভা। উত্তরবঙ্গের ধূপগুড়ি পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই পুরসভা এলাকায় সমস্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড বাংলা ভাষায় লিখতে হবে। পুর প্রশাসকের এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে খুব শীঘ্রই সকলকে নিয়ে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকরী করা হবে। প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ি পুর নিগম এলাকায় সমস্ত সাইনবোর্ড বাংলায় লেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এবার সেই পথেই হাঁটতে চলেছে ধূপগুড়ি পুরসভা। জানা গিয়েছে, পুরসভা অধীনস্থ এলাকায় ব্যবসায়ীক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিপণন কেন্দ্র, শপিং মল, অফিস, রেস্তোরাঁ, হোটেল, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরির মতো সমস্ত প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড বাংলায় লেখা বাধ্যতামূলক করা হবে।
পুরসভার একটি সূত্র এবিষয়ে জানিয়েছে, প্রথমে শহরের ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ এবং বিদ্বজ্জনদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। এরপর সেই কমিটির করা সুপারিশের ভিত্তিতেই কাজ করা হবে। এই সিদ্ধান্তের পক্ষে দাঁড়িয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক দেবাশিস দত্ত জানান, 'আমিও একজন বাঙালি। পুরসভার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। এলাকার ব্যবসায়ীরা তাদের পাশেই আছেন।' পুর প্রশাসক বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান রাজেশকুমার সিং বলেন, 'বাংলা ভাষায় দোকানের সাইনবোর্ড লেখা বাংলার মানুষের পক্ষে অবশ্যই ভালো। প্রচুর সংখ্যক গ্রামের বাসিন্দা বাজারে আসেন। সবার পক্ষে ইংরেজি বা হিন্দি পড়া সম্ভব নয়। কিন্তু তাঁরা বাংলা পড়তে পারবেন। সেই জন্যই আমরা একটি কমিটি গঠন করে বাংলায় সাইনবোর্ড লেখাটা কার্যকর করব।'
ভিন রাজ্যে বিশেষত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে সম্প্রতি বাংলাভাষীদের উপর অত্যাচারের একের পর এক অভিযোগে সরগরম হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি এই ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। বাঙালিদের উপর এই অত্যাচার এবং বাংলা ভাষার অমর্যাদা রুখতে সম্প্রতি বীরভূম থেকে তিনি শুরু করেছেন 'ভাষা আন্দোলন'। যেখানে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও সামিল হয়েছিলেন ওই এলাকার বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। এই মিছিলের আগেই তিনি বীরভূমে যে প্রশাসনিক বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন সেখানে তিনি তাঁর দলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলামকে দায়িত্ব দিয়ে বলেন, ভিন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে। যদিও এর আগেই মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন এরাজ্যে তাঁরা ফিরে এলে তাঁদের কাজের অভাব হবে না। সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্প থেকে তাঁদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানিয়েছিলেন।

এর পাশাপাশি সম্প্রতি রাজ্যের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের তরফেও পশ্চিমবঙ্গের দোকানগুলিতে সাইনবোর্ড বাংলা ভাষায় লেখার পক্ষে সওয়াল করা হয়। বিশিষ্টদের এই তালিকায় ভাষাবিদ থেকে সাহিত্যিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে সরকারি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ এবং সেইসঙ্গে নামকরা প্রাক্তন ফুটবলারও আছেন। তাঁদের মতে, অন্য রাজ্যে সেখানকার দোকানগুলিতে সাইনবোর্ড সেখানকার স্থানীয় ভাষায় লেখা হয়। যেটা এই রাজ্যেও করতে হবে। তাঁদের মতে, অন্য ভাষায় লেখা থাকতেই পারে। কিন্তু তার সঙ্গে যেন বাংলা ভাষায় লেখাটাও থাকে। শিলিগুড়ি পুর নিগমের পর এবার সেই পথেই হাঁটা শুরু করল ধূপগুড়ি পুরসভা।
