আজকাল ওয়েবডেস্ক: হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। বাড়িতে অতিথি-বন্ধুবান্ধবরা এলে  তাঁদেরকে সুস্বাদু কোন কোন পদ খাইয়ে রসনা তৃপ্তি করবেন তা অনেকেই ঠিক করে ফেলেছেন। আর এরই মধ্যে ভেজাল মশলা প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে  বৃহস্পতিবার বড়সড় সাফল্য পেল মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার আধিকারিকরা। এফএসও-র আধিকারিকদের নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে মুর্শিদাবাদের ডোমকল থানার অন্তর্গত জয়রামপুর এলাকায় একটি মশলা প্রস্তুতকারী সংস্থার কারখানায় হানা দিয়ে বিপুল পরিমাণে ভেজাল মশলা উদ্ধার করল পুলিশ। 

ভেজাল মশলা তৈরি করার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ সেলিম বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রে অভিযোগ শোনা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি ডোমকলের একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে ভেজাল মশলা তৈরির কাজ শুরু করেছিল। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। 

মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার (লালবাগ) রাসপ্রীত সিং বলেন,'নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ সেলিম বিশ্বাসের মশলার ফ্যাক্টরিতে হানা দেওয়া হয়। সেখান থেকে কয়েকটি  প্লাস্টিকের ব্যাগে ২৩ কেজি  ভেজাল লঙ্কাগুঁড়ো, ১৪ কেজি ভেজাল  হলুদ গুঁড়ো , ১২ কেজি ভেজাল জিরের গুঁড়ো উদ্ধার হয়েছে। অন্য একটি ব্যাগে  ৭ কেজি ময়দা উদ্ধার হয়েছে।'

পুলিশ সূত্রের খবর, এর পাশাপাশি ওই ব্যক্তির কারখানা থেকে ১২০ টি খাওয়ার যোগ্য নয়  এমন  খাবারের রং উদ্ধার হয়েছে।  উদ্ধার হওয়া ১২০টি প্যাকেটের মধ্যে ১১৫ টি প্যাকেটে ইতিমধ্যে ব্যবহার করা হয়ে গিয়েছে। অভিযান চালানোর সময় পর্যন্ত  পাঁচটি প্যাকেট ব্যবহার করা হয়নি। এর পাশাপাশি ওই কারখানা থেকে একটি ডিজিটাল ওজন করার যন্ত্র এবং একটি প্যাকেট 'পাঞ্চ' করার মেশিন উদ্ধার হয়েছে।
 
পুলিশ সূত্রের খবর, সেলিম বিশ্বাসের কারখানায় গত বেশ কয়েক মাস ধরেই গোপনে জাল মশলা তৈরির কাজ চলছিল।  উৎসবের মরশুমের বাড়িতে আগত অতিথিদের   আপ্যায়নের জন্য ভাল রান্না করতে বিভিন্ন ধরনের মশলার চাহিদা বাড়ে। সূত্রের খবর, সেই সুযোগ নিয়ে সেলিম বিশ্বাস এবং আরও কয়েকজন অসাধু ব্যক্তি আটা এবং তার সঙ্গে ভেজাল খাবারের রং মিশিয়ে  অত্যন্ত নিম্নমানের বিভিন্ন মশলা তৈরি করে, কখনও কখনও তা নামিদামি ব্র্যান্ডের  প্যাকেটে সিল করে বিভিন্ন মুদিখানার দোকানে বিক্রি করত। এছাড়াও তারা স্থানীয় কয়েকটি ব্র্যান্ডের নামে ভেজাল মশলা বিক্রি করা শুরু করেছিল বলে অভিযোগ ।

আরও পড়ুন-  সংশোধনাগারে ভাল আচরণ, মুক্তি পাচ্ছেন ৪৫ জন, এক্স হ্যান্ডেলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী 

প্রসঙ্গত, মাত্র দিন দুই আগেই মুর্শিদাবাদেরই সামশেরগঞ্জ থানার  নতুন ডাকবাংলার সংলগ্ন একটি এলাকায় হানা দিয়ে পুলিশ প্রচুর পরিমাণে ভেজাল হলুদ গুঁড়ো এবং লঙ্কা গুঁড়ো উদ্ধার করে। ভেজাল মশলা তৈরির অভিযোগে   ছ'জনকে পুলিশ আটকও করেছিল। যদিও কারখানার মালিক শামীম শেখ পুলিশি অভিযানের পর থেকেই পলাতক। 

রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিক জানান,' সম্প্রতি এক বিখ্যাত মশলা প্রস্তুতকারক সংস্থার তৈরি মশলায় 'ইথাইনিল অক্সাইড' পাওয়া গিয়েছিল। এই  রাসায়নিকের  প্রভাবে মানব শরীরে ক্যান্সার হতে পারে। এছাড়াও ভেজাল মশলা দিয়ে কোনও খাবার তৈরি করলে পুরো রান্নাটি বিষাক্ত হতে পারে।'
 
তিনি বলেন,' বিভিন্ন সময় আমরা দেখেছি অধিক মুনাফার আশায় এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী রান্নার মশলা তৈরির জন্য কাপড় রং করতে ব্যবহৃত বিষাক্ত রং, ধানের তুষ, ইট, এমনকি কাঠের গুঁড়ো মেশায়। চএইসব জিনিস দিয়ে যে সমস্ত মশলা তৈরি হয় তা খেলে মানুষের ক্যান্সার, কিডনি এবং লিভারের রোগ হতে পারে।'
 
ওই আধিকারিক আরও জানিয়েছেন,' ভেজাল মশলা খেলে তার তাৎক্ষণিক প্রভাবে কোনও ব্যক্তির ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব, এলার্জির মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তবে দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে ভেজাল মশলা খেলে ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার রোগ  দেখা দেওয়া অসম্ভব নয়।'