আজকাল ওয়েবডেস্ক:  সেদিন সন্ধিপুজোর সময়ই ঘটেছিল সেই অবিশ্বাস্য ঘটনা। মায়ের সামনে প্রদীপ জ্বালাছিল এক কণ্যা। আচমকাই নিখোঁজ হয়ে যায় মেয়েটি। অনেক খোঁজার পরেও সেদিন সন্ধান পাওয়া যায়নি মেয়েটির।

 

ওইদিন রাতেই স্বপ্নাদেশ দেন দু্র্গা। দেবী জানানপিপাসা মেটাতে ওই মেয়েটিকে খেয়ে ফেলেছেন তিনি। পরদিন দেখা গিয়েছিল দেবীর ঠোঁটের কোণে ঝুলে থাকা ছোট্ট একটি কাপড়ের টুকরো। এরপর দেবীর পেট কাটলে সবার নজের আসে ওই কণ্যা। এমনই নানা অলৌকিক কাহিনী রয়েছে মুর্শিদাবাদের গদাইপুরের পেটকাঠি দুর্গাকে ঘিরে।

 

সেইসময় থেকেই বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দেবী পেটকাঠি দুর্গা নামে পরিচিত। জনশ্রুতি সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে পেটকাঠি দুর্গার পায়ে বাঁধা হয়েছিল শিকল। ইতিহাস বলছে, প্রাচীনকালে মালদার এক রাজা এই পুজোর প্রচলন করেন। পরে পুজোর দায়িত্বভার নেন গদাইপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার।

 

কথিত আছে, স্বপ্নাদেশে মানসিক বিকারগ্রস্ত রোগীদের সুস্থ করতে এক বিশেষ ওষুধ তৈরির মন্ত্র বলেছিলেন দেবী। আদেশ দিয়েছিলেন, ওই ওষুধ খেয়ে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিরাই দেবীর উদ্দেশ্যে পশু বলির বন্দোবস্ত করবে। আজও বলি দেওয়ার প্রথা চালু রয়েছে এই পুজোয়।

 

একচালার দুর্গা মুর্তিতেও রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য। চার ছেলেমেয়ের সঙ্গে এই দুর্গার সঙ্গে পুজো পেয়ে থাকেন রাম-লক্ষ্মণ ও দেবীর দুই সখী জয়া, বিজয়া। এখনও পেটকাঠি দুর্গার পায়ে বাঁধা থাকে শিকল। মায়ের পেট কেটে রাখা হলেও তা থাকে দুর্গার পোশাকের আড়ালে। আজও দেবীর ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে রাখা হয় এক টুকরো কাপড়।

 

পুরনো সব রীতি মেনেই এখানে পুজিতা হন দেবী। পুজোর দিনগুলিতে ভোগ বিতরণের সুবন্দোবস্ত থাকে। দশমীর দিন বাঁশের পালকি করে বিসর্জনের জন্য আখরি নদীতে নিয়ে যাওয়া হয় দেবী প্রতিমাকে। সেখান থেকে নৌকায় ওঠেন দেবী। তারপর ভাগীরথী নদীতে হয় নিরঞ্জন। জাগ্রত এই দেবীর কাছে মানত করলে পূরণ হয় মনস্কামনা! দূরদূরান্ত থেকে পুজো দিতে আসেন মানুষ। তাই আজও সাড়ম্বরেই পেটকাঠি দুর্গার আরাধনায় মেতে ওঠে গদাইপুরবাসী।