মিল্টন সেন,হুগলি: চতুর্থীর দিন সন্ধেয় উপচে পড়ল মানুষের ভিড়। আলোর জোয়ারে ভাসল শহর। রাস্তার দুপাশ ছেয়ে গেল বিজ্ঞাপনে।  একসময়ের ফরাস ডাঙায় জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করে ফুটে উঠল স্বাভাবিক দৃশ্য। বুধবার সন্ধেয় বেলুন এবং পায়রা উড়িয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন হল জগদ্ধাত্রী পুজোর গাইড ম্যাপের।

 

একইসঙ্গে শিশুদের জন্যে ব্যাজ এবং ভলান্টিয়ার ব্যাজেরও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এদিন চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে আয়োজিত গাইড ম্যাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগি, জেলাশাসক মুক্তা আর্য, চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী প্রমুখ। পাশাপাশি এদিন অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে সিসিটিভি কন্ট্রোল রুমের উদ্বোধন করেন ডিজিপি রাজীব কুমার।

এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগি জানিয়েছেন, প্রতি বছর চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পূজো উপলক্ষে কয়েক লক্ষ দর্শনার্থীর সমাগম হয়ে থাকে। শুধু এই জেলা নয় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন। ফেরিঘাট, রেল স্টেশন এবং সড়ক পথে বহু দর্শনার্থী আসেন শহরে। পুলিশের কাছে সব থেকে জরুরি বিষয় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা। তাই আগত সকলের জন্য সব রকমের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।

 

শুধুমাত্র চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট নয়, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় বাইরের জেলা থেকে পুলিশ আনা হয়েছে চন্দননগরে। এই বছর শহরের রাস্তায় সিসিটিভির সংখ্যা আরও বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত ৩০০ টি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে শহর জুড়ে। আর সেই ক্যামেরা মনিটরিং এর জন্য খোলা হয়েছে জন্য ৩ টি কন্ট্রোল রুম। দিন রাত ২৪ ঘন্টা সেই কন্ট্রোল রুম থেকে নজরদারি চালাবেন কমিশনারেটের আধিকারিকরা। মানুষের ভিড়ে মোতায়েন থাকবে সাদা পোশাকের পুলিশ কর্মী এবং মহিলা পুলিশ কর্মী। উইনার্স টিম, পিঙ্ক মোবাইল টিমের মহিলা পুলিশ কর্মীরা টহল দেবে।

 

পুজোর দিন গুলিতে প্রায় তিন হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে শহরে। একাধিক সেক্টরে বিভক্ত করে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন ৬ জন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার আধিকারিক। সঙ্গে থাকছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ২০ জন আধিকারিক এবং ইন্সপেক্টার পদমর্যাদার ৩৫ জন আধিকারিক। মোতায়েন থাকবেন সাদা পোশাকের পুলিশ কর্মী এবং মহিলা পুলিশ কর্মী।

 

সুইপিং পার্টি থাকবে ৫০ টি বাইকে। পুলিশ কমিশনার আরও বলেছেন, পাশাপাশি নজরদারি চালানো হবে ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে। ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হবে শহরের অলিগলি সর্বত্রই। চন্দননগর এবং ভদ্রেশ্বর এলাকা সংলগ্ন প্রত্যেকটি ঘাটেই লঞ্চ পরিষেবা চালু থাকবে।২৪ ঘন্টা খোলা থাকবে পুলিশের কন্ট্রোল রুম। দর্শনার্থীরা যাতে ভালোভাবে ঠাকুর দেখতে পারেন তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা থাকছে। অন্য বছরের মতো এবছরও প্রবীণ নাগরিক এবং প্রতিবন্ধীদের ঠাকুর দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

ষষ্ঠী অর্থাৎ বৃহস্পতিবার থেকে শহরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। দুপুর দুটো থেকে পরদিন সকাল ছয়টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে পণ্যবাহী গাড়ি। শহরে ঢোকার মোট ৪৪টি জায়গায় থাকছে নো এন্ট্রি। এদিন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন বলেছেন, ৩৩ ওয়ার্ডের জন্য যে আন্ডার গ্রাউন্ড কেবলিং-এর কাজ শুরু হয়েছিল, তার মধ্যে ১৮ টি ওয়ার্ড এর কাজ সম্পন্ন। আগামী বছরের মধ্যে ৩৩ টি ওয়ার্ডেই এই কাজ শেষ হয়ে যাবে। জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে বহু বিদেশী পর্যটক চন্দননগরে আসেন। তাঁদেরও স্বাগত জানান মন্ত্রী। এদিন মঞ্চ থেকে  দুর্গাপুজোয় সেরা থিমের জন্য জন্য চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে তিন পুজো কমিটিকে পুরস্কৃত করা হয়। 

ছবি- পার্থ রাহা