আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২৬-এ ভোট। রাজ্যের শাসক দল নিজেদের অবস্থান নিয়ে কতটা নিশ্চিত, তা দলের সুপ্রিমোর বক্তব্যে স্পষ্ট হল বৃহস্পতিবার। ২৮ আগস্ট, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে, মেয়ো রোডে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি। ২৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে, এই সমাবেশ তৃণমূলের জন্য অ্যাসিড টেস্ট। জন সমাগম প্রমাণ, এই টেস্টে সফল রাজ্যের শাসক দল। 

জমায়েতের সামনে দাঁড়িয়ে মমতা একদিকে যেমন তুলে ধরলেন, তাঁর জমানার সরকারের প্রকল্পের খতিয়ান, যা চলার পথে বড় সহায়ক হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের, তেমনই পড়ুয়াদের বোঝালেন, ছাত্র রাজনীতির ধারা। কেমন ভাবে, তিনি ছাত্র রাজনীতি করেছেন। তৎকালীন সরকারের বাধার মুখে পড়েছেন এবং তার পরেও জারি রেখেছেন লড়াই। মনে করালেন যোগমায়া দেবী কলেজ ইউনিটের ছাত্র পরিষদের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট, কীভাবে রাজনীতি করেছেন। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়া থেকে, বারবার আক্রমনের মুখে পড়া, সব শোনালেন মমতা।

 

আরও পড়ুন: ‘ক্ষমতা থাকলে বিজেপি ৫০ আসন পার করে দেখাক’, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে চ্যালেঞ্জ অভিষেকের

বক্তব্যের শুরুতেই মমতা বলেন, তাঁর বক্তব্যের আগে, অভিষেক নিজের বক্তব্যে শেষ করেছেন যেখানে, সেখান থেকেই শুরু করবেন তিনি। নিজের জমানার কাজের খতিয়ান দিয়ে বললেন,  ২০১১ সালের পর, রাজ্যে আয় বেড়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ। রাজ্য সরকার দারিদ্র দূরীকরণে, ২০১৩-২৩ এক কোটি ৭২ লক্ষ মানুষকে দারিদ্যসীমার উপরে নিয়ে গিয়েছে। মমতা বললেন, সংখ্যাটা এখন দু' কোটি পার। বললে, '২০১১ সালের পর থেকে রাজ্যের আয় বেড়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ। দারিদ্রসীমা সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় মাপকাঠি।'

হিসেব দিয়ে জানালেন, তরুণের স্বপ্নে ৫ হাজার ৩০০ কোটি খরচ করেছে সরকার, ৫৩ লক্ষ পড়ুয়াকে তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পে মোবাইল দেওয়া হয়েছে। বিনামূল্যে স্কুল ড্রেস, জুতো, পাঠ্যপুস্তক দিয়ে থাকে তৃণমূল সরকার। মমতা বলেন, 'আমি গর্ব করে বলতে পারি আমার কন্যাশ্রী পৃথিবীর সেরা পুরস্কার পেয়েছি। যখন ভারতের, সারা পৃথিবীর কেউ ভাবতে পারেনি। এটা এখন  পৃথিবীর মডেল হয়েছে, আর বাংলার মেয়েদের মেডেল।' তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত প্রায় এক কোটি মেয়ে এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। একইসঙ্গে বলেন, রাজ্য সরকার ১ কোটি ৩৮ লক্ষ ছাত্রছাত্রীকে সবুজ  সাথী সাইকেল দিয়েছে। ১ কোটি ২৫ লক্ষ-শিক্ষাশ্রী স্কলারশিপ পেয়েছে। ৬ লক্ষ ৬৫ হাজার মেধাশ্রী প্রকল্পের আওতায় এসেছে।  ৪ কোটি ৫৬ লক্ষ-ঐক্যশ্রী-সহ একাধিক স্কলারশিপ পেয়ে থাকেন। 

এদিন বক্তব্যে রাজ্য সরকারের খতিয়ান তুলে ধরার পাশাপাশি, বাম-বিজেপিকে একহাত নেন মমতা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষকদের টাকা বন্ধ প্রসঙ্গে এদিন মমতা বলেন, 'সবটা তো আমাদের লোক থাকেন না। বিভিন্ন জায়গার লোক থাকেন। কেউ কেউ দুষ্টুমি করে।' জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফল প্রকাশ নিয়ে রাজ্য সরকার প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে। এদিন তা নিয়েও মুখ খোলেন মমতা। বলেন, 'এর জন্য আমাদের দোষ নেই। যারা কোর্টে কেস করে, এরা একসঙ্গে কেস কেস করে। আবার এসে আমাদের নামে নিন্দা করে। এরা দু’নম্বরি।' 


বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর ভিন রাজ্যে আক্রমণ নিয়েও এদিন সুর চড়ান তিনি। ভোট এলেই 'কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাপাদাপি বাড়ে' বলেও কটাক্ষ করেন মমতা। নিশানা করেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনকেও। বাংলার বদনাম করার জন্য সিনেমা বানানো হচ্ছে, সিনেমায় বদলে দেওয়া হচ্ছে ক্ষুদিরাম বসুর পদবীটুকুও, ২৮ আগস্টের মঞ্চে তা নিয়েও ঝরে পড়ল মমতার ক্ষোভ। এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাঁর নতুন বই আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। তাতে তিনি লিখেছেন, কে কেমন ছিলেন, তা নিয়ে।