আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভাঙড় থানার অন্তর্গত কালিকাপুর নস্কর পাড়ায় গৃহবধূ খুনের ঘটনায় সারা এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ভাঙড় থানায় কেস নং ১৬৪, তারিখ ০৫.১২.২০২৫ অনুযায়ী ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ১০৩(১) এবং ২৩৮ বিএনএস মোতাবেক এই তদন্ত শুরু হয়েছে। ০৪ ডিসেম্বর রাত প্রায় ২১:২০ মিনিটে পুলিশ টেলিফোনে খবর পান যে দিলীপ সাউ–এর বাড়ির কাছাকাছি বাসন্তী ক্যানেলের ছোট খালের ধারে একটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছে দেখেন ঘটনাস্থলে স্থানীয় মানুষের ভিড় এবং তাঁদেরই আটকে রাখা এক ব্যক্তিকে। পুলিশের জেরায় ওই ব্যক্তি নিজের পরিচয় দেন—দেবাশিস নস্কর, বয়স ২৯, পিতা অশোক নস্কর, বাসিন্দা কালিকাপুর, ভাঙড়।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই দেবাশিস স্বীকার করে নেন যে তিনি তাঁর স্ত্রী মৌমিতা হালদার নস্কর–কে হত্যা করেছেন। তিনি জানান, সেদিন সন্ধ্যা প্রায় ৬টার দিকে তিনি স্ত্রীকে বাড়ি থেকে ডেকে আনেন এবং পরে তাঁকে নিয়ে খালের ধারে যান। সেখানে দু’জনের মধ্যে তীব্র বিতণ্ডা শুরু হয়। দেবাশিস জানান, সেই বচসার পর তিনি স্ত্রীকে খালের জলে ডুবিয়ে হত্যা করেন। পুলিশ অভিযুক্তের মুখমণ্ডলের চারপাশে কয়েকটি আঘাতের চিহ্নও দেখতে পান, যা ঘটনাস্থলে সংঘর্ষের ইঙ্গিত দেয়।
ঘটনা অত্যন্ত নৃশংস হওয়ায় দেহ উদ্ধারে দমকল, বৈজ্ঞানিক শাখা, ডিডি এবং ডিএমজি টিমকে ঘটনাস্থলে ডাকা হয়। খালের জল কচুরিপানা ও ঘন জঙ্গলে ভরা থাকায় দীর্ঘ সময়ের অনুসন্ধানের পর উদ্ধার হয় মৌমিতা হালদারের মরদেহ। মৃতদেহের পাশেই পাওয়া যায় একটি কালো ব্যাগ ও গোলাপি রঙের স্যান্ডেল জোড়া। ব্যাগ খুলে পুলিশ উদ্ধার করেন একটি পুরনো ব্যবহৃত শাড়ি, একটি কুর্তি, একটি শিশুর কম্বল, আধার কার্ড এবং একটি ব্যাঙ্ক পাসবুক। সমস্ত উদ্ধার হওয়া সামগ্রী ভিডিওগ্রাফি করে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
দেহ উদ্ধার হওয়ার পর মৌমিতাকে নালমুড়ি রুরাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে রাত ২টা ১০ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন মৃতার বাবার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ভাঙড় থানায় এফআইআর দায়ের করা হয় এবং আজ ভোর প্রায় ৫টায় পুলিশ অভিযুক্ত দেবাশিস নস্করকে গ্রেপ্তার করে।
তদন্তে জানা গেছে, মৃতা মৌমিতা হালদার এক স্থানীয় ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্যে অশান্তি চলছিল। একাধিকবার তিনি স্বামীর বাড়ি ছেড়ে ওই ব্যক্তির সঙ্গে বসবাসও করেছিলেন। ঘটনার দিন বিকেলেও তিনি শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে যান এবং পরে অভিযুক্ত তাঁকে পোস্ট অফিস এলাকার কাছে খুঁজে পান। সেখানেই উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার পর ঘটনার সূত্রপাত বলে পুলিশ মনে করছে।
পোস্টমর্টেম রিপোর্টে উঠে এসেছে নৃশংসতার প্রমাণ। গলার চারপাশে শক্ত করে বাঁধার চিহ্ন, মুখমণ্ডল ও গলার পেশিতে বহু আঘাত, বাম মুখে শ্বাসরোধের দাগ এবং শ্বাসনালী ও ফুসফুসে কাদা ও বালির উপস্থিতি—সবকিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে মৃতা জীবিত অবস্থায় জলে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন এবং মৃত্যুর আগে প্রচণ্ড নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। মৃত্যুর কারণ হিসেবে রিপোর্টে বলা হয়েছে—ডুবে যাওয়ার ফলে মৃত্যু, সঙ্গে লিগেচার দ্বারা শ্বাসরোধ ও মুখ চেপে ধরার ফলেও শ্বাসরুদ্ধ হওয়া, যা স্পষ্টভাবে হত্যাজনিত মৃত্যু।
পুরো এলাকায় এই ঘটনা ব্যাপক আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। পুলিশ বর্তমানে অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি, দাম্পত্য বিবাদের ইতিহাস এবং মৃতার পরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয় নিয়ে গভীর তদন্ত চালাচ্ছে। পুলিশ সূত্রের দাবি—এই ঘটনা কেবল হঠকারিতা নয়, বরং পরিকল্পিত খুন বলেই মনে হচ্ছে। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
