মিল্টন সেন, হুগলি: স্মারকলিপি জমা দেওয়ার নাম করে চন্দননগর পুরনিগমে ঢুকে রীতিমতো চলল তাণ্ডব। চার বিজেপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে চন্দননগর থানার পুলিশ। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া সহ একাধিক অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। 

 

অভিযুক্তদের তালিকাও বেশ দীর্ঘ। ঘটনার পরই তল্লাশি চালিয়ে চারজন বিজেপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার পেশ করা হলে ধৃত চার জনকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় চন্দননগর মহকুমা আদালত। জানা গেছে, বিজেপি দলের তরফে ঘোষিত সাত দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার চন্দননগর কর্পোরেশনে মেয়রকে স্মারকলিপি দিতে যায় বিজেপি। কর্পোরেশনে আগে থেকেই পুলিশ মোতায়েন ছিল। শুরুতেই বিজেপি কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে বচসায় জরায়। ঠেলাঠেলি হয় দুই পক্ষের মধ্যেই। এরপর জোর করে কর্পোরেশন অফিসে ঢুকে পড়ে বিজেপি কর্মীরা। 

 

মেয়র রাম চক্রবর্তীর ঘরের সামনে অফিসের ভেতরে বিজেপি দলের পতাকা নিয়ে উত্তাল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। মেয়রের চেম্বারের সামনে বসে পড়ে। মেয়র সেই সময় উপস্থিত না থাকায় বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখিয়ে তারা ফিরে যায়। এই ঘটনার পরই চন্দননগরের বাসিন্দা বিজেপি কর্মী, শচীন সিং, রামবাবু সাউ, কিরন অধিকারী ও আনন্দ পাসওয়ানকে গ্রেপ্তার করে চন্দননগর থানার পুলিশ। 

 

আরও পড়ুন: 'আলুভাজা না হলে খাব না', ভোজনবিলাসী এই 'ফুড-ব্লগার' চোরের চাহিদায় বিপাকে শান্তিপুর থানার পুলিশ

 

এদিন ধৃতদের চন্দননগর আদালতে পেশ করা হয়। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী। বলেছেন, স্মারকলিপি দেওয়ার নাম করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। অফিস চলাকালীন অফিসের মধ্যে ঢুকে বিজেপি কর্মীদের এমন উচ্ছৃঙ্খল আচরণ একেবারেই কাম্য নয়। কাজের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। আইন আইনের পথে চলবে। 

 

প্রসঙ্গত, গত ২৪ জুলাই সাত দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বিজেপির বিক্ষোভ মিছিল পৌঁছয় চন্দননগর কর্পোরেশনের গেট পর্যন্ত। দুপুর ১২টা নাগাদ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ওই চত্বর। পুলিশের বাধার মুখে পড়ে বিজেপির কর্মীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। শুরু হয় ধস্তাধস্তি, ভাঙচুর। এই পরিস্থিতিতেই কর্পোরেশনের মূল গেটে ভাঙার চেষ্টা করে বিজেপির কর্মীরা। ধাক্কাধাক্কির জেরে মূল গেটটিও ভেঙে পড়ে। 

 

সেই গেট থেকে বিজেপি কর্মীরা সোজা ঢুকে পড়ে পুরনিগমের ভিতরে। সোজা চলে যায় মেয়রের ঘরে এবং অফিসের মধ্যে। মেয়র সেই সময় উপস্থিত না থাকার কারণে স্মারকলিপি জমা না দিয়ে তারা ফিরে আসে। হুমকি দিয়ে এও জানায়, স্মারকলিপি জমা দিতে তারা ফের আসবে পুরনিগমে। সাত দফা দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে তারা। 

 

নিকাশি ব্যবস্থা, পানীয় জলের ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট মেরামত, বেকার যুবক, যুবতীদের কর্মসংস্থান সহ একাধিক দাবি ঘিরে পুরনিগম অভিযান করেছিল বিজেপির কর্মীরা। চন্দননগর ছবি ঘর থেকে শুরু হয়েছিল মিছিল। শতাধিক কর্মী, সমর্থক সেই মিছিলে অংশ নিয়েছিল। ঘটনাস্থলে আগেই মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। সেইখানে উপস্থিত ছিলেন খোদ আইসি। পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের পাশাপাশি, পুলিশকে হেনস্থা করা এবং অনুমতি লঙ্ঘন করে পুরনিগমে ঢোকার ঘটনায় একাধিক যুবকের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কড়া পদক্ষেপ করা হবে‌। 

 

ছবি: পার্থ রাহা