আজকাল ওয়েবডেস্ক:‌ কাঁকড়া ধরতে গিয়ে ফের বিপত্তি। বাঘে টেনে নিয়ে গেল মৎস্যজীবীকে। নিখোঁজ ওই ব্যক্তির নাম তাপস হালদার। বাড়ি কুলতলির মৈপীঠ উপকূল থানা এলাকার নগেনাবাদ গ্রামে। বনদপ্তরের কর্মীরা তাঁর খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছেন। ঘটনা জানাজানি হতেই গ্রামে শোকের ছায়া নেমেছে।


জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে ৪৫ বছরের তাপস হালদার, গোপাল পাইক ও নেপাল পাইকের সঙ্গে কাঁকড়া ধরতে নৌকায় রওনা হয়েছিলেন। শুক্রবার বেলায় সুন্দরবনের বনি ক্যাম্প লাগোয়া সিঁদুরকাটি জঙ্গল এলাকায় তাঁরা কাঁকড়া ধরছিলেন। জঙ্গলের দিকে পিছন ফিরে ছিলেন তাপস হালদার। আর দুই সঙ্গী জলে নেমে কাঁকড়া ধরছিলেন। নৌকায় একাই বসেছিলেন তাপস। সেসময় একটি বাঘ বন থেকে বেরিয়ে তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে! মুহূর্তের মধ্যে তাঁকে টেনে নিয়ে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে যায়।


চোখের সামনে সঙ্গীকে বাঘ টেনে নিয়ে যাচ্ছে দেখে অন্য দু’জন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে তাঁরা চিৎকার শুরু করলে আশপাশ থেকে বেশ কয়েকজন মৎস্যজীবী ঘটনাস্থলে পৌঁছন। জঙ্গলের ভিতর গিয়ে তাপস হালদারের খোঁজও চালানো হয়। কিন্তু তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে সঙ্গীরা গ্রামের দিকে নৌকায় রওনা হন। রাতে তাঁরা গ্রামে ফিরে আসেন। ঘটনার কথা গ্রামবাসীদের জানানো হয়। দুঃসংবাদ শুনে শোকের ছায়া তাপস হালদারের পরিবারে। খবর দেওয়া হয় বনদপ্তরেও। নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে বলে খবর।


প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগে একইভাবে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে সুন্দরবনে বাঘের হানায় মারা যান শম্ভু সর্দার নামে এক যুবক। গত সোমবার সকালে সুন্দরবনের চামটা জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় ওই বাঘের হানার ঘটনা ঘটেছিল। 


জানা গিয়েছিল, কুলতলির কাঁটামারি বটতলা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন মৎসজীবী শম্ভু। ওই এলাকার বাসিন্দা অমৃত প্রামানিকের নৌকায় চেপে শুক্রবার সকালে তিন মৎসজীবী সুন্দরবনের নদীতে মাছ–কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন। সোমবার সকালে নৌকায় বসে থাকার সময় আচমকা বাঘ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে পিছন থেকে আক্রমণ করে। তাঁর দেহটি জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বাঘটি। পরিবার সূত্রে খবর, তাঁর স্ত্রী মারা গিয়েছেন অনেক বছর আগে। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা ও মা, দুই সন্তান আছেন।


প্রসঙ্গত, জানুয়ারিতেও বাঘের হানায় মৃত্যু হয়েছিল এক মৎস্যজীবীর। নদী–খাঁড়িতে মাছ–কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন ওই মৎস্যজীবী। নাম অজয় সর্দার। ঘটনাটি ঘটেছিল সুন্দরবনের পিরখালির জঙ্গলে। অজয়ের সঙ্গে ছিলেন প্রতিবেশী কালাচাঁদ সর্দার ও কার্তিক সর্দার।


এই ঘটনার কয়েক দিন আগে সুন্দরবনের সজনেখালি রেঞ্জের জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গলের হামলায় মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়। মৃতের নাম গণেশ কাহার (৪৭)। বাসুদেব সরকার ও গোপাল বৈদ্য নামে স্থানীয় দুই মৎস্যজীবীর সঙ্গে তিনি সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। তবে সেখানেই যে জঙ্গলে ঘাপটি মেরে বাঘ বসেছিল তা কারও নজরে আসেনি। এরপর মৎস্যজীবীরা অসতর্ক হতেই আচমকা গণেশের ওপর বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে।


এটা ঘটনা, সুন্দরবনে বাঘের হানায় মৃত্যুর ঘটনা প্রায়ই ঘটে। কখনও কাঁকড়া ধরার জন্য আবার কখনও মাছ ধরতে গিয়ে গভীর জঙ্গলে যাওয়ার ফলে বাঘের হানায় মৃত্যু হয় মৎস্যজীবীদের। প্রশাসনের তরফে এ নিয়ে বারবার মৎস্যজীবীদের সতর্ক করা হয়। তারপরেও তারা সেই সতর্কতায় কর্ণপাত না করে জীবিকার টানে গভীর জঙ্গলে চলে যান। আর তাতে ঘটে বিপত্তি।