আজকাল ওয়েবডেস্ক: গ্রামের মোবাইলে ফোনের টাওয়ারে চেপে এক যুবক তারস্বরে চিৎকার করে কিছু বলে চলেছে , আর নিচে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কিছু লোক সমানে চিৎকার করে তাঁকে নীচে আসার জন্য অনুরোধ করে যাচ্ছেন। 

কিন্তু প্রায় ৭০ ফুট উঁচুতে থাকা ওই ব্যক্তির জড়িয়ে আসা গলায় সঠিক কী বলছে তা গ্রামের অধিকাংশ লোকই বুঝতে পারছেন না। তবে অনেকেরই মনে হচ্ছে 'বসন্তী কো লে আও' বলে চিৎকার করছে ওই যুবক। তাঁকে যদি না আনা হয় তাহলে আত্মহত্যার হুমকিও দিয়ে চলেছে সে। 

আর ওই যুবককে বাঁচানোর জন্য বাসন্তীকে খুঁজতে গিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম থানার বড়ার গ্রামে। তবে গরু খোঁজার মত করে খুঁজেও গ্রামে বাসন্তী নামে কাউকে খুঁজে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁকে খুঁজে পেতে পুলিশে শরণাপন্ন হলেন বড়ার গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামের যুবককে বাঁচাতে যখন কেউ কেউ নেট ঘেঁটে সত্তরের দশকের রুপোলি পর্দার 'বসন্তি', হেমা মালিনীর ফোন নম্বরের খোঁজ চালাচ্ছেন তখনই গল্পে এল আসল 'টুইস্ট' ।

সূত্রের খবর, খড়গ্রাম থানা মহিষাড় পঞ্চায়েতের বড়ার গ্রামের বাসিন্দা জনৈক গৌতম ঘোষ মাঝেমধ্যে একটু মদের নেশা করে। বাড়িতে মা বাবা না থাকলে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে সেই আসর বাড়িতেই বসে। 

আরও পড়ুন: ভেঙে ফেলা হবে কবি সুভাষ স্টেশন! পিলারে ফাটলের পরেই চরম সিদ্ধান্ত নিল মেট্রো কর্তৃপক্ষ

গৌতমের সুরারসিক বন্ধুরা জানায়, একবার পেটে মদ পড়লে সে কখন যে কী করবে তা কেউ জানে না। আর এবার মদ খেয়ে গৌতম সটান  উঠে পড়ল এটি বেসরকারি মোবাইল ফোন সংস্থার টাওয়ারের মাথায়। আর তারপর সেখান থেকে বসে চিৎকার শুরু করল 'বসন্তী কো লে আও'। 

গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, 'বহু বছর আগে শোলে সিনেমায় ধর্মেন্দ্রকে দেখেছিলাম  গ্রামের একটি জলের ট্যাঙ্কের উপর দাঁড়িয়ে 'বসন্তি কো লে আও'  বলে চিৎকার করতে। ধর্মেন্দ্রকে বাঁচাতে সেই সময় 'বসন্তি' অর্থাৎ হেমা মালিনী এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু অবিবাহিত গৌতম  মোবাইল ফোনের টাওয়ারের উপর উঠে কোন বাসন্তীর খোঁজ করছিলেন তা তো আমরা বুঝতেই পারিনি।'

রঞ্জিত বিশ্বাস নামে গ্রামের অন্য এক বাসিন্দা বলেন, 'আকন্ঠ মদ খেয়ে থাকায় ৭০ ফুট উঁচু মোবাইল ফোনের টাওয়ারে বসে গৌতম  চিৎকার করে কী বলছিল তা নীচে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকেই বুঝতে পারেননি। পরে কিছু গ্রামবাসী বলেন সে বসন্তিকে নিয়ে আসার জন্য  চিৎকার করছে।'
 
গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, 'প্রথমে আমরা মনে করেছিলাম  ওই যুবক নিজের প্রেমিকার খোঁজ করছে। কিন্তু আমাদের গ্রামে বাসন্তী নামে কোনও মহিলা নেই। তাই শেষ পর্যন্ত আমরা পুলিশে  খবর দিতে বাধ্য হই।' 

যদিও পুলিশের কাছে কোনও বাসন্তীর খোঁজ না থাকায়  নেশাগ্রস্ত ওই যুবককে উদ্ধারের জন্য খড়গ্রাম থানার বড়বাবু সুরজিত হালদার নিজেই পুলিশের একটি দল নিয়ে বাসন্তীর জন্য পাগল ওই যুবককে উদ্ধার করার জন্য থানা থেকে বের হন। 

তবে গ্রামে পুলিশ পৌঁছনোর আগেই বাসন্তীর জন্য পাগল গৌতমকে টাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে সজোরে এক ধমক লাগান গ্রামেরই এক প্রৌঢ়। আর তাতেই যেন ম্যাজিকের মতো কাজ হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই মোবাইল ফোনের টাওয়ার থেকে নামতে শুরু করে গৌতম। গ্রামে পুলিশ আসার আগেই 'বাসন্তী'র খোঁজ ছেড়ে এক দৌড়ে গ্রাম ছেড়েছেন গৌতম। তারপর থেকে তাঁর আর খোঁজ নেই। 

ওই গ্রামের কিছু বাসিন্দা জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করে গৌতম। সারাদিনে সে যা আয় করে তার বেশিরভাগ টাকা নেশার পিছনে উড়িয়ে দেয়। তবে বাসন্তীর জন্য সে যে ভাবে গোটা গ্রামের মানুষকে ব্যাতিব্যস্ত করে তুলেছিল তাতে সকলেই বিরক্ত।