আজকাল ওয়েবডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ শহরের বাসিন্দা নাজমুল। জানা গিয়েছে জীবিকার খোঁজে নাজমুল চার মাস আগে গিয়েছিলেন হরিয়ানায়। সেখানে একটি হাউসকিপিং-এর চাকরি পেয়ে ওখানেই চলে যান। নাজমুল নিজের মা-বাবাকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন হরিয়ানায়। সব মিলিয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই দিন কাটছিল তাঁদের। কিন্তু চলতি মাসের ১৯ জুলাই সেই শান্তি ভেঙে পড়ে এক আকস্মিক ঘটনায়। সেই দিনই নাজমুল ও তাঁর পরিবারের জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ এক দুর্দশা।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে জানা গিয়েছে, নাজমুলের অভিযোগ হরিয়ানা পুলিশ হঠাৎ করেই তাঁর বাড়িতে পৌঁছয়। তাঁদের পরিচয়পত্র দেখতে চায়। 'আমি সব পরিচয়পত্র দেখাই,' জানিয়েছেন যুবক। তবু তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় সঙ্গে যেতে বলা হয়। এরপর পুলিশ তাঁকে ও আরও কিছু বাঙলা ভাষার মানুষকে একটি গাছতলায় বসিয়ে রাখে।

জানা গিয়েছে সেখানে পুলিশ তাঁদের প্রশ্ন করে, 'তুমি কবে বাংলাদেশ থেকে এসেছ?' এই প্রশ্নে স্তব্ধ হয়ে যান নাজমুল। তিনি বলেন, 'আমি ভারতীয় নাগরিক, বনগাঁর ভোটার। আমাকে কেন বাংলাদেশি বলা হচ্ছে?' তিনি জানান। মুর্শিদাবাদ ও মালদার আরও কয়েকজন জনৈককেও আটক করা হয়েছিল।

রাতের দিকে নাজমুলের বাবা তাঁর সমস্ত আসল নথিপত্র নিয়ে দেখা করতে আসলেও, পুলিশ তাঁদের সেই নথিপত্র জমা দিতে দেয়নি। পরদিন সকাল পর্যন্ত তাঁকে কিছু খেতেও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। পরিবার হতাশ হয়ে বনগাঁ থানার দ্বারস্থ হয়।

আরও পড়ুনঃ 'সুখ দিতে পারো না বেঁচে থেকে লাভ কী?' শরীরী খিদে মেটাতে ব্যর্থ স্বামীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন স্ত্রী

বনগাঁর পুলিশ সুপার দিনেশ কুমার জানিয়েছেন, '২১ জুলাই আমরা বিষয়টি জানতে পারি। পরিবারের সদস্যরা আমাদের জানিয়েছে, এবং সঙ্গে সঙ্গেই আমরা স্থানীয়ভাবে তদন্ত শুরু করি ও সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি হরিয়ানা পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দিই। ২২ জুলাই আমি হরিয়ানার জোনাল ডিসিপিকে অনুরোধ করি, তারপর নাজমুলকে মুক্তি দেওয়া হয়।'

নাজমুলের পরিবার জানায়, এই ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নাজমুল। 'আমরা হরিয়ানায় কাজ করতে এসেছি। এইবার আমাকে তুলে নিয়ে গেল। পরেরবার যদি আবার নিয়ে যায়, তবে কি বারবার প্রমাণ দিতে হবে যে আমি ভারতীয়? কতবার এই হয়রানির মুখে পড়তে হবে?' — প্রশ্ন ছোড়েন নাজমুল।

অন্যদিকে, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, হরিয়ানার গুরুগ্রামে ৫২ জন বাঙালি ভাষাভাষী শ্রমিককে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করেছে প্রশাসন। এমনকি এর পেছনে তাদের  রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেও কটাক্ষ করা হয়৷ 

আরও পড়ুনঃ রাতের অন্ধকারে ট্রেনে হাতেনাতে ধরা পড়ল চোর, কোনওমতে মায়ের অস্থি বাঁচালেন বিজেপি নেতা

এক সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। বিজেপি যদি ভাবে এইভাবে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়ে তারা জিততে পারবে, তাহলে তারা ভুল করছে। দিল্লি ও মহারাষ্ট্রেও ঠিক একই কাজ করেছে।'

এই ঘটনার প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী ২৭ জুলাই থেকে এক বছরের জন্য 'ভাষা আন্দোলন' শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন। যা বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালি ভাষাভাষীদের ওপর হওয়া হয়রানির বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ রূপে দেখা হবে।