আজকাল ওয়েবডেস্ক: মস্কোর একেবারে হৃদয়ে, রসাটম অ্যাডিটিভ টেকনোলজিসের উচ্চ-নিরাপত্তা ঘেরাটোপে, চুপচাপ জন্ম নিল এক প্রযুক্তিগত বিপ্লব। চকচকে আলোয় উজ্জ্বল, ইঞ্জিনিয়ারদের মাথার উপর টাওয়ারের মতো দাঁড়িয়ে থাকা রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ইলেকট্রন বিম থ্রিডি প্রিন্টার শুধু প্রিন্ট করে না—ওয়েল্ডিং, ভাস্কর্য নির্মাণ আর টাইটেনিয়ামকে রূপ দেয় মহাকাশযান ও পরমাণু চুল্লির সূক্ষ্ম উপাদানে।


রাশিয়া বহুদিন ধরেই অ্যাডিটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং—যা আমরা সাধারণত থ্রিডি প্রিন্টিং বলি সেখানে সকলকে টেক্কা দিয়েছে।  এই প্রযুক্তি বিজ্ঞানের কল্পকাহিনি নয়, বরং শিল্প বিপ্লবের নতুন অধ্যায়। আর এই বিপ্লবের সরাসরি অংশীদার হচ্ছে ভারত। রাশিয়ার এই দানব প্রিন্টার শিগগিরই ভারতে পাঠানো হবে কোনও একটি একটি গোপন স্থানে। প্রায় ২০ কোটি টাকা দামের এই যন্ত্র ভারতের হাতে পৌঁছলে তা হবে এক বিশাল অগ্রগতি। ইতিমধ্যে ভারতীয় সংস্থাগুলি রাশিয়ার সঙ্গে বহু-বছরের চুক্তি সই করেছে, যার মোট মূল্য প্রায় ১.৫ বিলিয়ন রুবল।

আরও পড়ুন: ঘুম উড়ল পাকিস্তানের, জেনে নিন ভারতের এই মিসাইলের খুঁটিনাটি


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ আহ্বানের সঙ্গে মিল রেখে রাশিয়ার এই প্রিন্টার খুব শিগগিরই ভারতের মাটিতেই হাই-টেক উপাদান তৈরি করবে। টাইটেনিয়াম বা স্টেইনলেস স্টিলের সাধারণ তারকে প্রক্রিয়াজাত করে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইলেকট্রন বিমে রূপান্তরিত করে জটিল আকারের যন্ত্রাংশ তৈরি করা সম্ভব হবে, যা প্রচলিত পদ্ধতিতে তৈরি করা কার্যত অসম্ভব।


২০২০ সালে এই অত্যাধুনিক ফ্যাসিলিটি উদ্বোধন করার সময় রসাটমের ডিরেক্টর জেনারেল অ্যালেক্সি লিখাচেভ বলেছিলেন, “এটি প্রথম সম্পূর্ণ রাশিয়ায় তৈরি যন্ত্র। মেশিনের সফটওয়্যার থেকে শুরু করে হার্ডওয়্যার—সবই রাশিয়ান ইঞ্জিনিয়ারদের মেধার ফসল।”


ভারত-রাশিয়ার সম্পর্ক বহুদিনের। কুডানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্পূর্ণ প্রযুক্তি রাশিয়ার দেওয়া এবং এখনও সেই প্রকল্পে রসাটম ভারতের সহযোগী। এখন আবার মহাকাশ অভিযানে ভারতীয় রকেটেও হয়তো রাশিয়ান থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি যন্ত্রাংশ বসবে। ফলে সম্পর্ক কেবল বাণিজ্যিক থাকছে না, রূপ নিচ্ছে কৌশলগত অংশীদারিত্বে। আজ যখন বিশ্বে আস্থা আর প্রযুক্তিই সবচেয়ে বড় মুদ্রা, তখন রসাটমের এই অ্যাডিটিভ টেকনোলজি কেবল ধাতু নয়, ছাপাচ্ছে আস্থা, উদ্ভাবন আর ভবিষ্যতের নকশা।


এই প্রিন্টার যদি ভারতের হাতে আসে তাহলে সেখান থেকে ভারত এই প্রযুক্তিতে অনেকটা এগিয়ে যাবে। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি দিক নিয়ে কথা হয়েছে। এরপর এই প্রিন্টার যদি ভারতে আসে তাহলে সেখান থেকে টাকা ছাড়া প্রায় সবই ভারত তৈরি করতে পারবে। সেখানে অন্য দেশের তুলনায় অনেকটা এগিয়ে যাবে ভারত। একে নানাভাবেই কাজে লাগানো যেতে পারে। সেখানে প্রযুক্তি থেকে শুরু করে পরমানু সর্বত্রই ভারত এবার বিশ্বের বাকি দেশের সঙ্গে এক সারিতে বসতে পারবে। ভারতের এই উত্থান বাকি শত্রু দেশের কাছে কতটা চাপের হবে এবার সেটাই দেখার।